Advertisement
E-Paper

যন্ত্র বিকল, ন্যাপকিন অমিল স্কুলে

ক্লাস চলাকালীন নবম শ্রেণির ছাত্রীটি অনুভব করল, ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গিয়েছে। এমন আপৎকালীন অবস্থার জন্যই স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। কিন্তু পাঁচ টাকা হাতে নিয়ে সেখানে গিয়েছে ছাত্রীটি দেখল মেশিন বন্ধ।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৬
অচল: বন্ধ ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। নিজস্ব চিত্র

অচল: বন্ধ ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। নিজস্ব চিত্র

ক্লাস চলাকালীন নবম শ্রেণির ছাত্রীটি অনুভব করল, ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গিয়েছে। এমন আপৎকালীন অবস্থার জন্যই স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। কিন্তু পাঁচ টাকা হাতে নিয়ে সেখানে গিয়েছে ছাত্রীটি দেখল মেশিন বন্ধ। শেষমেশ এক শিক্ষিকার কাছে গিয়ে সমস্যা জানাল ওই ছাত্রী। সমাধানের রাস্তা খুঁজে পেলেন না শিক্ষিকাও। অগত্যা ছাত্রীটিকে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন তিনি।

আইআইটি-র শহর, রেলশহর খড়্গপুরের অধিকাংশ স্কুলেই অহরহ এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ছাত্রীদের। ভুগছেন শিক্ষিকারাও। বেশিরভাগ স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন নেই, হাতে গোনা যে ক’টিতে রয়েছে, সেখানেও মেশিন বন্ধ হয়ে পড়ে থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে। অথচ ঋতুস্রাবের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার সুস্বাস্থ্যের জন্যই জরুরি। খড়্গপুরের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অনুপকুমার মল্লিক বলেন, ‘‘ন্যাপকিন ব্যবহার অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কিন্তু গ্রামেগঞ্জে চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখেছি, এ নিয়ে এখনও মেয়েরা সচেতন নয়।’’ অনুপবাবু আরও জানান, ঋতুস্রাবের সময় বহু ক্ষেত্রেই কাপড় ব্যবহারের চল রয়েছে। তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এমনকী তা থেকে গর্ভধারণের সমস্যাও হতে পারে।’’

এই কারণেই স্কুলে স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছিল। খড়্গপুর শহরে মূলত পরিচালন সমিতির উদ্যোগে সাংসদ তহবিলের টাকায় কয়েকটি স্কুলে ‘সম্পূর্ণা’ প্রকল্পে এই ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত শহরের মোট পাঁচটি স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসেছে। তার বেশিরভাগই অবশ্য ধুঁকছে। কোথাও ৫ টাকার কয়েন দিলে দু’টির জায়গায় ৬টি ন্যাপকিন বেরিয়ে আসছে বলে বন্ধ করতে হয়েছে মেশিন। আবার কোথাও আবেদন জানিয়েও ন্যাপকিন না মেলায় মেশিন বন্ধ করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

সাংসদ সন্ধ্যা রায়ের তহবিলের অর্থানুকূল্যে শহরের অতুলমণি বালিকা বিদ্যালয়ে গত ২০১৫ সালের অক্টোবরে বসেছিল এই ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, চাহিদা এত যে ১০ মাসে প্রায় এক হাজার ন্যাপকিন লেগেছে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে দেখা দিয়েছে সমস্যা। ৫ টাকার কয়েন দিলে বেরিয়ে আসছে অনেকগুলো ন্যাপকিন। এই নিয়ে কলকাতার এজেন্সিকে আবেদন জানালেও মেশিন মেরামত হয়নি। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ বন্ধ মেশিন বন্ধ রেখেছেন। স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী লাবণী মাইতি বলছিল, ‘‘স্কুলে এসে ঋতুস্রাব হলে সত্যি সমস্যা হয়। মেশিন বসার পরে একটু সুরাহা হয়েছিল। কিন্তু মাস কয়েক হল মেশিন বন্ধ থাকায় খুবই সমস্যা হচ্ছে।’’ স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা মনীষা সিংহের কথায়, “মাসের ওই দিনগুলিতে মেয়েদের যে কী অসুবিধা হয় তা আমরাই জানি। সে জন্যই তো মেশিন বসানো। মেশিন বন্ধ থাকায় ছাত্রীরা ভুগছে।’’

গত ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন হওয়া ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বন্ধ পড়ে রয়েছে শহরের হিতকারিণী বিদ্যালয়েও। প্রধান শিক্ষক পদ্মাকর পাণ্ডে বলেন, “ন্যাপকিনের অর্ডার দিলেও এজেন্সি তা দিতে পারেনি। তাই ১০ দিন ধরে মেশিন বন্ধ রয়েছে।’’ এই স্কুলে ন্যাপকিনের গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষিকারাও। অঙ্কের শিক্ষিকা মতি বার্জো বলেন, “ভেন্ডিং মেশিন উপকারী হলেও ন্যাপকিন খুব নিম্নমানের। ঋতুস্রাবের প্রথম দিন এই ন্যাপকিনে চলে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে আর তা ব্যবহারের উপযোগী নয়।’’

কিন্তু কেন এমন হাল ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনগুলোর?

এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতার এজেন্সির ডিরেক্টর নন্দগোপাল বেরা বলেন, “আসলে এত দূর থেকে শুধু একটি স্কুলের জন্য ন্যাপকিন পাঠালে লোকসান হয়। তাই আমরা অনেক অর্ডারের অপেক্ষা করি। তাছাড়া জিএসটির কারণে ৫ টাকায় ২টি ন্যাপকিন দেওয়া কঠিন হচ্ছে। তাই এখন ১০টাকায় তিনটি ন্যাপকিনের প্যাকেজ তৈরির কাজ চলছে।’’ দ্রুত সমস্যা কেটে যাবে বলেই তাঁর আশ্বাস। অকেজো মেশিন সারানো হচ্ছে না কেন? নন্দগোপালবাবুর দাবি, ‘‘একবার লোক পাঠিয়ে মেশিন সারানো হয়েছিল। তারপর তো আর কিছু জানানো হয়নি।’’

Vending Machine Napkin School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy