কিষান ক্রেডিট কার্ডে ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি থেকে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায় গুরুত্ব কিংবা ‘বিশেষ অর্থনৈতিক জ়োন’ গড়ে তোলা— মৎস্যজীবীদের জন্য এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তবে তাতেও আশার আলো দেখছেন না এ রাজ্যের উপকূলের মৎস্যজীবীরা।
শনিবার লোকসভায় বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী জানান, মৎস্যজীবীদের জন্য কিষান ক্রেডিট কার্ডে তিন লক্ষ টাকা থেকেবেড়ে ঋণের পরিমাণ পাঁচ লক্ষ টাকা করা হবে। মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ ‘ইকনমিক জ়োন’ তৈরি হবে, পাশাপাশি দেশের আভ্যন্তরীণ মৎস্য সম্পদ ক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়ানো হবে। সামুদ্রিক মাছ এবং মৎস্যজাত খাদ্যসামগ্রীর রফতানি শুল্ক হ্রাসের কথাও ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী।
তবে বাজেটের এই সব ঘোষণার কথা সন্ধ্যা পর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি কাঁথির বগুড়ান জলপাই, জুনপুট, শঙ্করপুর, খেজুরি এবং নন্দীগ্রামের গ্রামগুলিতে। কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের মৎস্যজীবী সুসেন মান্না বলেন, ‘‘বাজেটে কী বলা হচ্ছে শুনে লাভ কী! এর ছিটেফোঁটাও আমাদের কাছে আসে না।’’ ভিঙি নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে খেজুরির মনোরঞ্জন আড়িরও বক্তব্য, ‘‘যে সব ঘোষণার কথা বলছেন, সেগুলো বড় মৎস্যজীবীদের জন্য। আমাদের হাল ফিরবে না।’’
সারা বিশ্বে মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতবর্ষ। তবে দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশের অনেক পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যে সামুদ্রিক এবং মিষ্টি জলের মাছ উৎপাদন ও রফতানিতে এগিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর। মৎস্যজীবীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা পুরনো প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্প এ রাজ্যে চালু হয়নি। পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সম্পাদক দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘কর কমিয়ে দেওয়া, পরিকাঠামো উন্নয়ন কিংবা মৎস্য চাষ ও রফতানিতে উৎসাহ দেওয়ার যে ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার ধীরে ধীরে মৎস্যজীবীদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু সেটাও আন্দামান কিংবা অন্য রাজ্য নির্ভর।’’ দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাসের কথায়, ‘‘দিনভর কাজে ব্যস্ত ছিলাম। বাজেট দেখার সুযোগ পাইনি।’’ কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ জানার মতে, ‘‘কিষান ক্রেডিট কার্ড ছাড়া মৎস্যজীবীদের জন্য কিছুই নেই।’’
২০২১ সাল থেকে বিধানসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং গত বছর লোকসভাতেও উপকূলের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে মৎস্যজীবী অধ্যুষিত এলাকায় পদ্ম ফুটেছে। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মোদী সরকারের এ বারের বাজেটকে হাতিয়ার করে মৎস্যজীবী এলাকায় বিজেপির ভিত শক্ত করতে চাইছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘মৎস্যজীবীদের জন্য কেন্দ্রের সরকার ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। যাতে তাঁদের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটে, তার জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনাও হয়েছে।’’ তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডার পাল্টা কটক্ষ, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির দু’জন সংসদ, সাতজন বিধায়ক। তবু জেলা তথা বাংলার মৎস্যজীবীদের জন্য বাজেটে কিছুই নেই। বিজেপির চালাকি মানুষ বুঝে গিয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)