কমিশনের গুঁতোয় পথে
সোমবার বেলা এগারোটা। মেদিনীপুরের কলেজ রোডের সামনে উর্দি পরা আধাসেনার ভারী বুটের আওয়াজ। হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা, ‘সামনে নির্বাচন। কেউ যদি কোনও রকম ভয় দেখায় তাহলে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’ জওয়ানদের সামনে মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক আফতাব আহমেদ, ডেপুটি পুলিশ সুপার শ্যামল মণ্ডল। শুধু কলেজ রোড নয়, শহরের বিভিন্ন এলাকাতেই এ দিন রুট মার্চ হয়। একদিন আগেই নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, আর দফতরে বসে ফোনে নির্দেশ দেওয়া নয়, শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে জেলাশাসক এবং মহকুমাশাসকদের মাঠে নামতে হবে। প্রশাসনের এ ক কর্তা মানছেন, “কমিশনের নির্দেশ মানতে তো হবেই। না হলে কখন যে কী কোপ নেমে আসবে!’’
মানুষই সব
খড়্গপুর শহরের সুভাষপল্লির বিএনআর মাঠ পরিদর্শন করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। পাশে দলের রাজ্য এবং জেলার বেশ কয়েকজন নেতা। আগামী ২৭ মার্চ খড়্গপুরে এসে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সভার প্রস্তুতি দেখতেই এ দিন রেলশহরে আসেন সিদ্ধার্থনাথ। মোদীর সভা ভরাতে যাবতীয় প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। বিএনআর মাঠটা খুব ছোট নয়। মোদীর সভায় জনসমাগম কম হলেই বিপদ! সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রোষের মুখে পড়তে হতে পারে! বিজেপির এক কর্মী বলছিলেন, “এত বড় মাঠ। জানি না কতটা ভরবে!” পাশ থেকে অন্য এক কর্মী বলেন, “এত চিন্তার কিছু নেই! অন্য কেউ এলে কথা ছিল! মোদী আসছেন। মানুষ মোদীর পক্ষে আছেন। মানুষই তো সব। মাঠ যতই বড় হোক না কেন মানুষই ভরিয়ে দেবেন!”
নগদে বিপদ!
নগদ হতে সাবধান! উপযুক্ত নথিপত্র ছাড়া সঙ্গে নগদ টাকা নিয়ে ঘুরলেই বিপদ। ভোটারদের প্রলুব্ধ করতে অনেক সময়েই বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা বিলির অভিযোগ ওঠে। তা ঠেকাতেই নিবার্চন কমিশনের এই নিয়ম। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি নগদ ২০ হাজার টাকার বেশি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন না। ব্যবসার সূত্রে বা অন্য কাজে অনেককেই সঙ্গে বেশি টাকা নিয়ে ঘুরতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁরা কী করবেন? জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “কী কারণে বেশি টাকা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন তার কাগজ সঙ্গে থাকলে সমস্যা নেই।’’
সরকারই ভরসা
এখন তাঁদের খুব ব্যস্ততা। ভোট এলেই এই ব্যস্ততা বাড়ছে গত কয়েক বছর ধরে। সবং-এর নাসরা গ্রাম থেকে এগরার খামারী গ্রামে এসেছেন লোকশিল্পী গোপালচন্দ্র বেরা। উদ্দেশ্য, বাউলের আঙ্গিকে তৃণমূলের হয়ে রাজনৈতিক গান করা। এত দূর থেকে গান করতে এসে কী পান? গোপালবাবুর অপ্রতিভ মুখে বললেন, “ গাড়ি ভাড়াটা দেয় দল থেকে। ওরাই তো সরকারি কার্ড করিয়ে দিয়ে বছরে আট দশটা সরকারি অনুষ্ঠান দেয়। এখন দলটা করছি। দলের হয়ে তো কিছু করতে হবে। তবে ভোট এলে দল থেকে নিয়মিত গান গাইতে যেতে হয়। দলের প্রচার করলে নিজের প্রচারও হয়।”
অভিনেত্রীর টানে
গ্রামে গ্রামে প্রচার করা হয়েছিল যে, সোমবার বিকালে খামারী বাজারে তৃণমূলের জনসভায় আসবেন সিরিয়ালের এক অভিনেত্রী। সাড়াও পড়েছিল এগরার খামারী, বর্তনা, বয়েসপুর গ্রামগুলিতে। বিকেল চারটে থেকে ছ’টার পর পর্যন্ত ঠায় বসেছিলেন মহিলারা। একে একে বক্তব্য দিয়ে গেলেন প্রার্থী সমরেশ দাস, জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী। তাঁরা চলেও গেলেন। থেকে গেলেন গ্রামের মানুষ। তখন মঞ্চে ওই অভিনেত্রী। দলের এক নেতা বললেন, “ লোকজন সভায় আসে কিন্তু বসে থাকতে চায় না। তাই এই ব্যবস্থা।”
বহিরাগত
দলে গুরুত্ব না পেয়ে সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে ডিএসপিতে যোগ দিয়ে এগরা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন মামুদ হোসেন। এগরার দু’বারের বিধায়ক সমরেশ দাসের প্রতিপক্ষ তিনি। এগরার একটি সভায় সমরেশবাবু বলেন, “উনি বহিরাগত। দলের দয়ায় যিনি বেঁচেছিলেন তিনি এখন দল থেকে বেরিয়ে এসে দল ও নেতাদের বদনাম করছেন।” আর শিশিরবাবু মামুদবাবুর নাম না করেই বলেন, “তাঁর নাম ধরতে ঘেন্না করি, যিনি এখানে বিরোধী প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর জামানত জব্দ করব।’’
অপেক্ষা দোলের
প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর খেজুরি জুড়ে প্রচারে নামতে চলেছেন খেজুরির বিরোধী জোটের নির্দল প্রার্থী অসীম কুমার মণ্ডল। সামনেই দোল। দোলের ছুটির পর ২৫ মার্চ খেজুরির হেঁড়িয়াতে নিবার্চনী অফিস উদ্বোধনের পরই ভোট প্রচারে নামছেন অসীমবাবু। খেজুরিতে অসীমবাবুর নিবার্চনী অফিস উদ্বোধনে সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি ও খেজুরির সিপিএম নেতা হিমাংশু দাস-সহ অনেকেই উপস্থিত থাকবেন বলে সিপিএমের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। শিক্ষক অসীমবাবু এই নিয়ে খেজুরিতে দ্বিতীয়বার প্রার্থী হলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy