Advertisement
০৬ মে ২০২৪
West Bengal Lockdown

একশো দিনই ভরসা

লকডাউনে গরিব মানুষের হাতে নগদ অর্থের জোগান কমেছে। একশো দিনের কাজ চালু থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেই আশা বিশেষজ্ঞদের।

চন্দ্রকোনা ১ ব্লকে একশো দিনের কাজে জমি সমতল করার কাজ চলছে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

চন্দ্রকোনা ১ ব্লকে একশো দিনের কাজে জমি সমতল করার কাজ চলছে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২০ ০২:০২
Share: Save:

মাঠে পাকা ধান। মাঝে ঝড়বৃষ্টি বাড়িয়েছিল উদ্বেগ।

লকডাউনে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হতেই ধান কাটতে মাঠে নামল মানুষ। কেউ আবার একশো দিনের প্রকল্পে জমি সমতল করলেন। মুখে মাস্ক পরে। সামাজিক দূরত্ব মেনেই। খড়্গপুরে শিল্পতালুকে কয়েকটি কারখানায় স্থায়ী শ্রমিকদের যেতে দেখা গিয়েছে। লকডাউনে নিয়ন্ত্রণ শিথিলের প্রথম দিন, সোমবার সামগ্রিক ভাবে এই ছবি দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে।

লকডাউনে গরিব মানুষের হাতে নগদ অর্থের জোগান কমেছে। একশো দিনের কাজ চালু থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেই আশা বিশেষজ্ঞদের। এ দিন দুই জেলাতে দেখা গেল জোর দেওয়া হয়েছে সেই একশো দিনের প্রকল্পেও। একশো দিনের প্রকল্পে মূলত সেচ, জল সংরক্ষণ, জমির উন্নয়ন, বনসৃজন প্রভৃতি কাজ হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা বাদ রেখে বাকি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে একশো দিনের কাজ শুরু হয়েছে এ দিন থেকে। ঝাড়গ্রাম জেলার ৮টি ব্লকে ৩৫টি প্রকল্পে শুরু হয়েছে একশো দিনের কাজ।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। সংসদ রয়েছে ৩,০৩০টি। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এরমধ্যে ২০৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৩,০০৪টি সংসদে কাজ শুরু হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব সহ প্রয়োজনীয় নিয়মবিধি মেনে চলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘সোমবার থেকে জেলায় একশো দিনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব রকম সতর্কতা মেনে কাজ করার কথা জানানো হয়েছে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন জেলার ৮টি ব্লকে মোট ৬,৯৩৮ জন অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করে একশো দিনের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নয়াগ্রাম ব্লকে ১৬৪০ শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। যা অন্য ব্লকগুলির তুলনায় সবচেয়ে বেশি। এছাড়া এদিন লালগড় ব্লকে ৩২৩ জন, বেলপাহাড়ি ব্লকে ৭৯৫ জন, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে ১০৫৭ জন, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে ৩৯ জন, জামবনি ব্লকে ১১৩০ জন, ঝাড়গ্রাম ব্লকে ১২৫৬ জন ও সাঁকরাইল ব্লকে ৬৯৮ জন শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় কৃষি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ৮৫৯ জন কৃষি-মজুরকে এদিন একশো দিনের কাজ দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘এদিন জেলায় একশো দিনের কাজে প্রায় ছ’হাজার শ্রমিক নেওয়া হয়েছে।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’টি এলাকায় করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। দাসপুর- ১ এর একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এবং দাঁতন- ২ এর একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। দাসপুর- ১ এর ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১২টি সংসদ রয়েছে। দাঁতন- ২ এর ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৪টি সংসদ রয়েছে। ওই দুই এলাকা সিল করা রয়েছে। ওই দুই এলাকার ২৬টি সংসদ বাদ রেখে জেলার বাকি ৩,০০৪টি সংসদে একশো দিনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এখন অবশ্য সব কাজ করা যাবে না। একশো দিনের প্রকল্পে ঠিক কী কী কাজ করা যাবে, রাজ্যের সে নির্দেশ ইতিমধ্যে জেলায় পৌঁছেছে। জেলা থেকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে ব্লকগুলিতে।

পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫৪টির মতো ইটভাটা রয়েছে। এ দিন বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ভাটায় কাজ হয়েছে। পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাবে সব ভাটায় কাজ শুরু হয়নি। ঝাড়গ্রাম জেলায় ৩৩টি বৈধ ইটভাটা রয়েছে। তবে এদিন কোনও ভাটায় কাজ শুরু হয়নি।

এ দিন থেকে সরকারি অফিস খোলায় ছাড়ের কথা বলা হলেও দুই জেলায় অন্য দিনের তুলনায় তেমন ফারাক চোখে পড়েনি। লকডাউনের পর থেকে জরুরি পরিষেবার জন্য খড়্গপুরে মহকুমাশাসকের কার্যালয় খোলা ছিল। তবে এ দিন লকডাউনে কিছুটা ছাড় মেলায় কর্মী উপস্থিতির হার অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল। একই ঘটনা দেখা গিয়েছে ব্লক প্রশাসনিক কার্যালয়গুলিতেও। সেখানেও জরুরি বিভাগের বাইরে খুব বেশি কর্মী অফিসে আসেনি। খুলেছিল রেলের ডিভিশনাল কার্যালয়। তবে আইআইটির মতো কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান এ দিন খোলেনি।

বন্ধ ছিল বেসরকারি অফিসও। তবে রেলশহরের উপকন্ঠে শিল্পতালুকে কয়েকটি কারখানায় স্থায়ী শ্রমিকদের যেতে দেখা গিয়েছে। সাহাচকের ধারে একটি মেটালিক্স কারখানার চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বার হতেও দেখা গিয়েছে। (তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী, কিংশুক গুপ্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown 100 Days Work Rural Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE