ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য বাজার মূল্যের চেয়ে দেড় থেকে দু’ গুণ বেশি দামে জমি কিনবে সরকার। জমি কেনার ক্ষেত্রে মালিকের সম্মতিই একমাত্র শর্ত। তাই সেই সম্মতি আদায় করতে প্রকল্প সম্পর্কে সবিস্তারিত তথ্য সম্বলিত লিফলেট তৈরি হয়েছে। সেই লিফলেট নিয়ে জমির মালিকের ঘরে যাবেন সাব মনিটারিং কমিটির সদস্যরা। বোঝাবেন, কেন সরকার জমি কিনছে। সেই জমি কী কাজে ব্যবহার হবে।
রবিবার ঘাটাল টাউন হলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের জন্য গঠিত ডিস্ট্রিক ও সাব লেবেল মনিটারিং কমিটির বৈঠক ছিল। বাজেটে টাকা বরাদ্দের পর এটাই ছিল প্রথম বৈঠক। সেই বৈঠক শেষে মন্ত্রী জানান, বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে জমি কিনবে সরকার। প্রশাসন সূত্রের খবর, বাজার থেকে দেড় থেকে দু’গুণ বেশি দামে কেনা হবে জমি। সেচমন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান শিলান্যাস হবে। সরকারি ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) সময় দিলেই শিলান্যাসের দিন ঘোষণা হয়ে যাবে। একই সঙ্গে মন্ত্রী জানিয়ে দেন, এ বার সাব কমিটির সদস্যরা মাঠে নেমে কাজ করবেন। ঘাটাল-সহ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষদের পাশে থাকার আর্জি জানানো হয়।
বৈঠকে প্রকল্প রুপায়ণে এই মুহুর্তে কী করণীয় সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়। সাব কমিটির বৈঠক থেকে উঠে আসা একাধিক প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ গুরুত্ব পায় জমি সংক্রান্ত আলোচনা। কোথায় অর্থাৎ কোন ব্লকের নির্দিষ্ট কোন এলাকায় কত জমি প্রয়োজন এবং জমি কেনার আগে কমিটির কী দায়িত্ব-তা নিয়েও আলোচনা হয়। জমি নিয়ে যাবতীয় ধোঁয়াশা কাটাতে সরকারি অবস্থান কী তা সাব কমিটির সদস্যদের সামনে বিস্তারিত আলোচনা করেন সেচ মন্ত্রী-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা। কোথায় কত পরিমাণ জমি প্রয়োজন তার একটা প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়। এর পরই আমজনতাকে বোঝাতে পুরোদমে মাঠে নেমে কাজ করার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। জমি ছাড়াও প্রকল্পে কোথায় কী কী কাজ হবে, কোন কাজ কতদিনের মধ্যে হবে তার প্রাথমিক ধারণাও দেওয়া হয়। কমিটির সদস্যেরা মাঠে নেমে যাতে আমজনতা কিম্বা জমির মালিকদের প্রশ্নের উত্তর সহজে দিতে পারেন সেই বিষয়টি খেয়াল রাখা হয়। অন্যদিকে প্রকল্প রুপায়ণ হলে নতুন করে কোনও এলাকা ভাসবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠে এসেছিল সাব কমিটির বৈঠকে। এ দিন সেই প্রশ্নে পরিষ্কার করে ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়ে দেন, চন্দ্রেশ্বর খাল নতুন করে খনন করে শিলাবতীর সংযুক্তি কিম্বা প্রকল্প রুপায়ণ হলে নতুন করে কোনও এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
‘ডিস্ট্রিক লেবেল মনিটারিং কমিটির’ বৈঠক ঘিরে এ দিন ঘাটাল শহরে সাজো সাজো রব ছিল। তৎপর ছিল মহকুমা পুলিশ প্রশাসনও। দুপুর ২ টোর সময় শুরু হয় বৈঠক। সেচমন্ত্রী মানস ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঘাটালের সাংসদ দেব, মন্ত্রী শিউলি সাহা, সেচ দফতরের সচিব মনীশ জৈন, জেলা শাসক খুরশিদ আলি কাদেরী, পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার, সভাধিপতি প্রতিমা মাইতি, সহ সভাধিপতি অজিত মাইতি, আশিস হুতাইত-সহ অন্যরা। ছিলেন ডিস্ট্রিক ও সাব মনিটারিং কমিটি তথা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ব্লকের সাব কমিটির সদস্যরাও।
দেব বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর মেদিনীপুর জেলায় এটাই সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এটা স্বপ্নের প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যখন দেখা হয়েছে, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রসঙ্গ থাকতই। মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই প্রকল্পের সূচনা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)