শিশু পাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিতে তল্লাশির পাশাপাশি নার্সিংহোমগুলির পরিকাঠামো, রেজিস্টার খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। পাশাপাশি নিয়ম অনুযায়ী, নার্সিংহোমে সবর্ক্ষণের জন্য আরএমও, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স আদৌও রয়েছে কি না-তার উপরেই বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “ইতিমধ্যে তল্লাশি চালিয়ে জেলার আটটি নার্সিংহোমে গরমিল ধরা পড়েছে। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষগুলিকে শোকজ করা হয়েছে। সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সমস্ত নথি জমা না দিতে পারলে সেগুলি সিল করে দেওয়া হবে।”
জেলা স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে দুর্নীতি দূর করতে অনলাইনে নতুন নার্সিংহোমের অনুমোদন এবং নবীকরণ পদ্ধতি চালু হয়েছে। এখন প্রশ্ন, স্বাস্থ্য দফতরের ওই নিয়মে কী আদৌও হাল ফিরেছে বেসরকারি নার্সিংহোমগুলির?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নিয়মানুযায়ী ফি বছরই লাইসেন্স নবীকরণ করতে হয়। প্রাথমিকভাবে নার্সিংহোম চালু করতে গেলে একজন আরএমও ( রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার), পাঁচটি শয্যা পিছু একজন করে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স (পশ্চিমবঙ্গ নার্সিং কাউন্সিলে নাম নথিভুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক),ওটি রুমে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস ও জায়গা, স্টেরিলাইজড রুম, পরিবেশ, দমকল এবং পুরসভা বা পঞ্চায়েতের ছাড়পত্র-সহ একাধিক নথি প্রয়োজন। জেলা স্তরে নার্সিংহোম বা হাসপাতালের অনুমোদন দেওয়ার এক্তিয়ার রয়েছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের।
জেলায় ১৩৭টি নার্সিংহোম ও হাসপাতাল রয়েছে। তার মধ্যে নব্বই ভাগের বেশি নার্সিংহোমই চলছে সরকারি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। অভিযোগ, খাতায় কলমে আরএমও, নার্স প্রভৃতি থাকলেও সবই নাম কা ওয়াস্তে। কোনও চিকিৎসকের সঙ্গে চুক্তি করে তাঁর অনুমতি এবং একই ভাবে নার্সের ক্ষেত্রেও চুক্তি করে দিনের পর দিন চলছে নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালগুলি। টাকার বিনিময়ে অনুমতি এবং সার্টিফিকেট মিলে যাচ্ছে দেদার। সম্প্রতি অন লাইন চালু হওয়ায় নতুন নতুন চিকিৎসক বা নার্সের সঙ্গে চুক্তি হলেও এখানেও থাকছে গরমিল। কারণ? পাঁচটি শয্যা থাকলেই একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স থাকতেই হবে। অন লাইনে ওই তথ্য দেখিয়ে কেউ কেউ অনুমোদনও পাচ্ছেন। বাস্তবে কিন্তু সেই হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ২।
অভিযোগ, বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের নজরে পড়লেও দফতরের একাংশের কাছে বড় অঙ্কের ‘ভেট’ পৌঁছে গেলেই সাত খুন মাপ হয়ে যাচ্ছে। এমনকী মাঝে মধ্যে অভিযানে বের হলেও আগাম খবর দিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। ফলে ওই দিন কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ একাধিক প্রশিক্ষিত নার্স বা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে (আরএমও) খবর দিয়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “যেমন ভাবে চলছিল, এখনও একই ভাবেই নার্সিংহোমগুলি চলছে। নার্সিংহোমে যিনি রান্না করেন, তিনিই আবার চিকিৎসকের সহকারি হিসাবে কাজ করেন। ঘাটাল-সহ জেলার সিংহভাগ নার্সিংহোমই একই চিত্র।” একই সুর বেসরকারি নার্সিংহোমের এক মালিকের গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি সব নিয়ম মানতে হলে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠে যাবে। আমরা মাঝে মধ্যে গিয়ে উপহার দিয়ে আসি। তাতেই তো দিব্যি চলছে।’’
অভিযোগ মানতে নারাজ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, ‘‘অভিযানে ত্রুটি ধরা পড়লেই সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জেলার বহু নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এ বার কোনও একটি নথি দেখাতে না পারলেই সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম মালিককে শো-কজ করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy