Advertisement
E-Paper

বান্ধবীকে ‘টোপ’ হিসাবে ব্যবহার করে আমডাঙার তৃণমূল নেতাকে ‘খুন’? কী মিলছে মন্দারমণিকাণ্ডে

শনিবার সকালে মন্দারমণির হোটেলঘর থেকে উদ্ধার হয় ৩৪ বছরের তৃণমূল নেতা আবুল নাসারের দেহ। তাঁর সঙ্গে ওই ঘরেই ছিলেন বান্ধবী। দেহ উদ্ধারের পর পুলিশ ওই বান্ধবী এবং আবুলের বন্ধুকে গ্রেফতার করে।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৪২
তৃণমূল নেতা আবুল নাসার খুন হয়েছেন না আত্মহত্যা করেছেন?

তৃণমূল নেতা আবুল নাসার খুন হয়েছেন না আত্মহত্যা করেছেন? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

ব্যবসায়ী বন্ধুর প্রেমিকার সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ ছিল উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল নেতা আবুল নাসারের। সেই ঘনিষ্ঠতাকে হাতিয়ার করেই কি তাঁকে মন্দারমণি নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে? পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্রসৈকত এলাকায় আবুলের রহস্যমৃত্যুর তদন্তে নেমে এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। জানা গিয়েছে, জমি ব্যবসার সুবাদে তৃণমূল নেতার বান্ধবীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আবুলের ব্যবসায়ী বন্ধুর। ধৃত ওই যুবকের ব্যবসায় বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছিলেন তৃণমূল নেতার রহস্যমৃত্যুতে ধৃত বান্ধবী। সম্প্রতি একটি ‘লাভজনক’ জমি কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে তৃণমূল নেতাকে খুনের চক্রান্ত হয়েছিল কি না, ভাবাচ্ছে পুলিশকে। এ জন্য ধৃত দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। রবিবারই দু’জনকে তোলা হচ্ছে আদালতে।

শনিবার সকালে মন্দারমণির একটি হোটেলঘর থেকে উদ্ধার হয় ৩৪ বছরের তৃণমূল নেতা আবুল নাসারের দেহ। তাঁর সঙ্গে ওই ঘরেই ছিলেন বান্ধবী। তিনি শৌচাগার থেকে বেরিয়ে আবুলের ঝুলন্ত দেহ দেখে প্রেমিককে ডাকেন। তার পর হোটেলের কর্মীদের ডাকা হয়েছিল। ঘটনাক্রমে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে এবং গ্রেফতার করে তৃণমূল নেতার বান্ধবী এবং বন্ধুকে। পুলিশি জেরায় দু’জনেই দাবি করেছেন খুন হননি আবুল। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু দু’জনের বয়ানে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। অন্য দিকে, তৃণমূল নেতার স্ত্রী, আমডাঙার একটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুরাইয়া পারভিন দাবি করেছেন, তাঁর স্বামীকে খুন করা হয়েছে। তিনি মূল অভিযুক্ত হিসাবে স্বামীর ব্যবসায়ী বন্ধুর নাম নিয়েছেন। এবং দাবি করেছেন, ধৃত যুবতীকে তাঁর স্বামীর খুনে ‘টোপ’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। খুনের অভিযোগে মামলাও রুজু করেছে পুলিশ। এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় তদন্তকারীরা।

কিন্তু তৃণমূল নেতা যদি খুন হয়ে থাকেন, তার কারণ কী হতে পারে? জানা যাচ্ছে, জমি ব্যবসায়ীর সঙ্গে আবুলের বন্ধুত্ব অনেক দিনের। আবার ধৃত যুবতীর সঙ্গে আবুলের আলাপ বছর দুয়েক আগে। তাঁর সূত্রেই যুবতীর সঙ্গে পরিচয় হয় ব্যবসায়ীর এবং ক্রমশ ওই দু’জন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ান। আগেই ধৃত মহিলা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, তাঁর একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ঠিক মানতে পারেননি আবুল। সে জন্য কি ব্যবসায়ী প্রেমিকের সঙ্গে মিলে তৃণমূল নেতাকে খুন করেছেন? অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবতী। অন্য দিকে, পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, শুক্রবার আবুল, আতাউর, ওই যুবতী ছাড়াও তাঁদের সঙ্গে আরও এক মহিলা উত্তর ২৪ পরগনা থেকে মন্দারমণি বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ি ফিরে যান। শুক্রবার রাতে হোটেলের একই ঘরে ছিলেন তৃণমূল নেতা, ব্যবসায়ী এবং তাঁদের বন্ধু। রাতে পানের আসর বসে। তিন জন গল্পগুজব করেন। কথা কাটাকাটিও হয়। কিন্তু তার মধ্যে কী ঘটল যে সাতসকালে আত্মহত্যা করলেন আবুল (ধৃতদের দাবি অনুযায়ী)?

পুলিশ খোঁজখবর করে জানতে পেরেছে, ধৃত যুবতী আমডাঙারই এক তৃণমূল নেতার ভাগ্নি। তৃণমূল নেতা আবুলের সঙ্গে তাঁর যেমন বন্ধুত্ব ছিল, তেমনই আবুলের বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কিছু দিন হল তাঁর ব্যবসাতেও টাকা ঢালা শুরু করেন ওই যুবতী। যদিও তিনি কোথা থেকে ওই টাকা পেতেন, তা পরিষ্কার নয়। অভিযোগ, সদ্য বায়না করা একটি লাভজনক জমি এবং জেসিবি (মাটি খোঁড়ার মেশিন) হাতাতে বান্ধবীকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেন ব্যবসায়ী। তবে আবুলের যাতে কোনও সন্দেহ না হয়, সে জন্য পরিচিত এক বার ডান্সারকে নিজের বান্ধবী সাজিয়ে বৃহস্পতিবার মন্দারমণি বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন আতাউর। আবুল এবং তাঁর বন্ধু সঙ্গে থাকা দুই যুবতীকে নিজেদের স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়ে হোটেলের রুম বুক করেছিলেন।

ধৃতদের জেরা করে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, খুনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ব্যবসায়ী তাঁর সঙ্গে থাকা মহিলাকে অসুস্থতার অজুহাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। অতিরিক্ত মদ্যপান করিয়ে আবুলকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নেরও জবাব খুঁজছে পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) শুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘ধৃতদের বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি আছে। হোটেলকর্মীদের বয়ান সংগ্রহ করা হচ্ছে। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ধৃতদের আদালতে পাঠিয়ে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।’’

শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, কাঁথি আদালতে তোলা হলে ধৃত দু’জনকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

Mandarmani Hotel Tmc Leader Death Crime News
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy