Advertisement
০৯ মে ২০২৪

বচসার জেরে প্রহৃত মহিলা, অভিযোগ

বেড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে বচসার জেরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এক বিধবা মহিলাকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল পড়শি যুবকদের বিরুদ্ধে। শনিবার ঝাড়গ্রামের ঘোড়াধরা এলাকার কনকপল্লির ঘটনা। মারধরে গুরুতর জখম বছর পঞ্চাশের অঞ্জলি হাঁসদাকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অঞ্জলিদেবীর পরিজনদের অভিযোগ, অসহায় ওই মহিলার বসত-জমিটি দখলের উদ্দেশে এলাকার কিছু যুবক তাঁকে বেধড়ক মারধর করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

বেড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে বচসার জেরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এক বিধবা মহিলাকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল পড়শি যুবকদের বিরুদ্ধে। শনিবার ঝাড়গ্রামের ঘোড়াধরা এলাকার কনকপল্লির ঘটনা। মারধরে গুরুতর জখম বছর পঞ্চাশের অঞ্জলি হাঁসদাকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অঞ্জলিদেবীর পরিজনদের অভিযোগ, অসহায় ওই মহিলার বসত-জমিটি দখলের উদ্দেশে এলাকার কিছু যুবক তাঁকে বেধড়ক মারধর করেছে। ওই ঘটনায় ছয় জনের বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন অঞ্জলিদেবীর ভাই সুরেন্দ্রনাথ টুডু। রবিবার বিকেলে গোবিন্দ বেরা নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল অভিযুক্ত দিলীপ সাউ-সহ বাকি পাঁচ অভিযুক্ত পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

পেশায় দিনমজুর অঞ্জলিদেবীর আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল থানার কুড়ারিয়া গ্রামে। স্বামীর মৃত্যুর পরে ২০০৫ সালে রুজির খোঁজে ঝাড়গ্রাম শহরে এসে স্টেডিয়ামের পিছনে খাসজমিতে ছিটেবেড়ার ঘর করে বসবাস শুরু করেন তিনি। পরে সেখানে বসতি গড়ে ওঠে। ঝাড়গ্রাম পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওই এলাকাটি এখন কনকপল্লি নামে পরিচিত। অঞ্জলিদেবীর মেয়ে মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ঝাড়গ্রামের বাড়িতে একাই থাকেন অঞ্জলিদেবী। সম্প্রতি তিনি কুড়ারিয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। অঞ্জলিদেবীর ভাই সুরেন্দ্রনাথ টুডু বলেন, “কয়েক দিন আগে দিদি বাড়িতে ফিরে দেখেন প্রাচীরের বেড়া ভেঙে বেশ কিছুটা জমি দখল করে নিয়েছেন প্রতিবেশী দিলীপ সাউ। পেশায় ফুচকাওয়ালা দিলীপবাবু বেশ কিছু দিন ধরে দিদিকে উচ্ছেদ করে তাঁর বসত জমিটি দখলের চেষ্টা করছেন।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার বিকালে অঞ্জলিদেবী ও দিলীপবাবুর মধ্যে তুমুল বাক বিতণ্ডা হয়। তখনকার মতো বিষয়টি মিটে গেলেও পরে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ দিলীপবাবুর নেতৃত্বে জনা পাঁচেক যুবক অঞ্জলিদেবীর বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ। প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালানোর চেষ্টা করেন অঞ্জলিদেবী। ওই যুবকরা পিছু ধাওয়া করে তাঁকে ধরে ফেলেন। টেনে হিঁচড়ে তাঁকে স্থানীয় শাল জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মোটা লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। যথেচ্ছ কিল-চড়-ঘুসিও মারা হয়। মারের চোটে ঠোঁট-মুখ ফেটে যায় তাঁর। এরপর তাঁর মুখে মদ ঢেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই অবস্থায় অঞ্জলিদেবীকে ফেলে চলে যায় ওই যুবকরা। রাতে কোনও মতে নিজেই থানায় গিয়ে ঘটনার কথা জানান অঞ্জলিদেবী। পুলিশ তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করায়। শহরের শিরিষচকে থাকেন অঞ্জলিদেবীর ভাই সুরেন্দ্রনাথ টুডু। খবর পেয়ে রবিবার তিনি ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

রবিবার হাসপাতালে সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে চিকিত্‌সাধীন অঞ্জলিদেবী বলেন, “আমি অসহায় বিধবা। একা থাকি। তাই দিলীপ আমাকে উচ্ছেদ করে আমার বসত জমিটা দখল করতে চাইছে। আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর করা হয়।” অন্যদিকে, দিলীপবাবুর পরিবারের দাবি, অঞ্জলিদেবীর জমি দখল করা হয় নি। অকারণেই তিনি পড়শিদের অঙ্গভঙ্গি করে গালিগালাজ করে থাকেন। রাত বিরেতে প্রতিবেশীদের দরজায় কড়া নেড়ে এলাকায় শান্তি নষ্ট করেন। এই নিয়ে শনিবার রাতে গোলমাল হয়েছিল। তবে মারধর করা হয় নি।

দশ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ঘনশ্যাম সিংহ বলেন, “অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। আমি হাসপাতালে গিয়ে ওই মহিলাকে দেখে এসেছি। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE