শোকস্তব্ধ: চন্দনের মা ও স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
আসল ঘটনা আড়াল করতেই তাঁর স্বামীকে ফাঁসানো হচ্ছে। তাই উপযুক্ত তদন্ত চাই। বুধবার এমনই দাবি করলেন, সিপিএম নেতা তাপস মল্লিকের স্ত্রী করুণা। জামবনি ব্লক তৃণমূলের নেতা চন্দন ষড়ঙ্গী খুনের ঘটনায় মঙ্গলবারই তাপসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জামবনির যুগিবাঁধ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী করুণা এ দিন ঝাড়গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বসে দাবি করেন, ‘‘গোটা দুবড়াবাসী জানেন, প্রধান নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের ঝগড়া রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। তারপরও আমার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে স্রেফ আসল ঘটনা আড়াল করার জন্য। করুণার দাবি, পুলিশ যদি প্রকৃত তদন্ত করে তাহলে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়বে।’’ তাপসের ছোট মেয়ে ঝাড়গ্রাম শহরের একটি স্কুলে পড়ে। রোজ তাপস মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতেন, নিয়ে আসতেন। তিনি গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় এদিন করুণা নিজেই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে এসেছিলেন। কারণ, মেয়ের স্কুলে এ দিন পরীক্ষা ছিল। সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর শাশুড়ি ছবি। তাঁর কথায়, ‘‘মঙ্গলবার বৌমা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়েছিল। রোজদিনকার মতো তাপস আলু সেদ্ধ ভাত খেয়ে স্কুলে চলে যায়। পরে শুনলাম, পুলিশ স্কুল থেকে ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছে।” মল্লিক-পরিবারের আশঙ্কা, সত্য চাপা দেওয়ার তোড়জোড় চলছে।
কেন এই আশঙ্কা? চন্দন খুনে জড়িয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও। দুবড়া অঞ্চল তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ ছিল চন্দনের হাতেই। হরিপদ জাল দুবড়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি হলেও কার্যক্ষেত্রে দুবড়া এলাকায় চন্দনই ছিলেন শেষকথা। দুবড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে এখন প্রধান নির্বাচন না হলেও তা নিয়ে দলের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল শুরু হয়েছে। নিহতের দাদা তথা তৃণমূল নেতা প্রসূন ষড়ঙ্গী অবশ্য বলছেন, ‘‘কয়েকদিন আগে আমি গিয়ে সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছিলাম।’’ যদিও স্থানীয় সূত্রের দাবি, সে সমস্যা মেটেনি এখনও।
উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ তাপস এলাকায় দাপুটে সিপিএম কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাপসের বাবা প্রয়াত আনন্দ মল্লিক ছিলেন দুবড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী। দুবড়ায় তাপসের বড়দার মনোহারি জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে। ২০০২ সালে দুবড়া গণহত্যার ঘটনায় নৃশংস ভাবে খুন হন চন্দনের বাবা প্রবীণ কংগ্রেস সমর্থক মোহিনীমোহন ষড়ঙ্গী এবং ঝাড়খণ্ড পার্টির সমর্থক বৃদ্ধ-দম্পতি শিশির শতপথী ও শিবানী শতপথী। ওই খুনের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন তাপস। আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। পরে স্থানীয় স্কুলে শিক্ষাকর্মীর চাকরিও পান তিনি। তাপসের মা, ছবি বলেন, ‘‘২০০২ সালের ওই ঘটনায় গ্রামের অনেক লোকের নাম জড়িয়ে গিয়েছিল। ছেলের তখন কম বয়স ছিল। তবে চন্দন খুনের ঘটনায় কোনও ভাবেই আমার ছেলে জড়িত নয়।’’তৃণমূল পরিচালিত দুবড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়েও সরব হয়েছিলেন তাপস। চলতি মাসের গোড়ায় রাস্তা মেরামতি নিয়ে তাপসের সঙ্গে পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কের মধ্যে বচসাও হয়েছিল।’’ তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, তাপসের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় ছিল চন্দনের।
তাহলে কারা খুন করেছে? পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের বক্তব্য, ‘‘তেমন কিছু পাওয়া গেলে জানাব। চিন্তা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy