Advertisement
E-Paper

বদলে দেওয়ার ধারা কি এ বারও

ঠা ঠা রোদের মধ্যে দুরমুঠ দেশপ্রাণ কলেজের সামনের চায়ের দোকানের ভিড়টা তখন কিছুটা হালকা। পরের পর চা খেয়ে চলেছে বছর বাইশের ছেলেটা। সামনের কলেজের দিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘‘উত্তর কাঁথিতে কলেজ বলতে এটাই।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫১

ঠা ঠা রোদের মধ্যে দুরমুঠ দেশপ্রাণ কলেজের সামনের চায়ের দোকানের ভিড়টা তখন কিছুটা হালকা। পরের পর চা খেয়ে চলেছে বছর বাইশের ছেলেটা। সামনের কলেজের দিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘‘উত্তর কাঁথিতে কলেজ বলতে এটাই। কলেজটার অনুমোদন আর শুরুর দিকে কাজ করেছিলেন চক্রধরবাবু। কত দূর থেকে ছেলেমেয়েরা এখানে পড়তে আসে জানেন? পাঁচ বছরে তাদের জন্য নতুন ক’টা পড়াশোনার জায়গা দিতে পেরেছে তৃণমূল?’’

শুধু নতুন কোনও কলেজ কেন, তৃণমূলের পাঁচ বছরের জমানাতেও চালু করা যায়নি বাম আমলে শুরু হওয়া উত্তর কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রের দুটো আইটিআই কলেজও। তাই উত্তর কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল অবস্থাকেই নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করেছে বামেরা। পাল্টা প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে। উত্তর কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের মৈশামুন্ডা আর কাঁথি-৩ ব্লকের দুরমুঠে অসমাপ্ত দু’টি আইটিআই কলেজ নিয়ে এক বাম কর্মী তো বলেই ফেললেন, ‘‘পড়াশোনার জন্য এলাকার ছেলেমেয়েদের যাতে বাইরে না যেতে হয়, তার জন্য বাম আমলে কলেজ দু’টো স্থাপনের উদ্যোগ হয়েছিল। কিন্ত ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তো অনেক কিছু বদলে গেল। কাজটারও বোধ হয় বদল হয়ে গেল। না হলে পাঁচ বছরেও সেই কাজ শেষ হল না কেন?’’

তবে শুধু উন্ননের ক্ষেত্রে নয়, গত পাঁচ বছরে সন্ত্রাসও বেড়েছে বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারাই। সুর চড়িয়েছে বিরোধীরাও। এ বার বিধানসভার বাম প্রার্থী চক্রধর মেইকাপ মনে করিয়ে দিয়েছেন সেই সব ঘটনার কথা। বলেন, ‘‘এখানকারই সুনিয়ায় এক ঘরছাড়া বাম কর্মীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তারপরও অভিযুক্তরা ঘুরে বেড়িয়েছে। কেউ তাদের গ্রেফতারও করেনি।’’

বিরোধী জোটের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে উত্তর কাঁথি এলাকা জুড়ে নারী ধর্ষণ, খুন আর সন্ত্রাস ছাড়া কিছুই হয়নি। বেশ কিছু ঘরছাড়া প্রশাসনের সাহায্যে ফিরলেও এখনও অনেকেই ফিরতে পারেননি। আর এই সবকেই হাতিয়ার করছে বাম-কংগ্রেস জোট। গত পাঁচ বছরে উত্তর কাঁথিতে কিছু সরকারি ও তৃণমূলের দলীয় অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া ছাড়া তৃণমূল বিধায়ককে সাধারণ মানুষের পাশে পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ তাদের।

তবে এ সব অভিযোগে আমল দিতে নারাজ শাসকদল তৃণমূল। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প তো এলাকার মানুষের জন্যই! কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, একশো দিনের কাজ, পানীয় জলের প্রকল্প তো রাজ্যের পাশাপাশি এই এলাকার মানুষের জন্যও। এলাকার জন্য আলাদা কিছু নেই। গতবারের বিধায়ক তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী বাঁশরী মাইতি হিসেব দিয়েছেন তারও। বলেন, ‘‘আগে বন্যায় ফসলের অনেক ক্ষতি হত। এখন সেই সমস্যা নেই। স্লুইস গেট আর ওসিসি ক্যানেল সংস্কার করা হয়েছে। পেটুয়াঘাটে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের অন্যতম মৎস্যবন্দর। উত্তর কাঁথি এলাকায় কাঁচা রাস্তা প্রায় নেই বললেই চলে।’’

আর কিছু? ঝাঁঝিয়ে উঠলেন কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ। বললেন, ‘‘উন্নয়নের কথা সিপিএমের মুখে মানায় না। আর উত্তর কাঁথির কোথাও সন্ত্রাস নেই।’’

তবে গোষ্ঠীকোন্দল যে চাপে রেখেছে শাসক দলকে সেই কথা স্বীকার করেছেন দলের অনেকেই। ব্লকের বাসিন্দা ও দলের জেলা সম্পাদক মামুদ হোসেন ইতিমধ্যেই তৃণমূল ছেড়ে ডিএসপি দলে যোগ দিয়ে এগরা কেন্দ্রে বিরোধী জোটের প্রার্থী হয়েছেন। দেশপ্রাণ ব্লকের মামুদ অনুরাগী ছাড়াও দেশপ্রাণ ব্লক সভাপতি তরুণ জানা বনাম জেলা যুব তৃণমূল সহ সভাপতি উত্তম বারিকের অনুগামীদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েও কিছুটা চিন্তায় তৃণমূল।

২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পেয়েছিল ৪৯.৭৮ শতাংশ ভোট। পরিবর্তনের হাওয়ায় তৃণমূলের বনশ্রী মাইতি ৭,৯৯৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন চক্রধর মেইকাপকে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূেলর ভোট শতাংশ বেড়ে হল ৫১.২৯ শতাংশ। সেই সময় বাম-কংগ্রেস জোট হলে সমীকরণটা দা়ঁড়াত ৩৮.৫৪ শতাংশে।

সত্তরে দশক থেকে উত্তর কাঁথিতে কোন প্রার্থী পরপর দু’বার বিধানসভা নিবার্চনে জয়ী হননি। পাঁচ বছর পর বিধায়ক বদলের ট্র্যাডিশন রয়েছে এই বিধানসভার। সেই ধারা এবারও বহাল থাকে কি না, দেখার সেটাই।

TMC CPM Congress BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy