Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
woman

Kolaghat: আনাজ বেচেই ছেলের সংসারের ‘লক্ষ্মী’

কোলাঘাটের পুরাতন বাজার এলাকার পিরতলায় কি শীত কি গ্রীষ্ম, প্রতিদিন আনাজ নিয়ে বসতে দেখা যাবে তাঁকে। তিনি লক্ষ্মী মাইতি।

কোলাঘাটের পিরতলায় বাজারে আনাজ বিক্রি করছেন লক্ষ্মী।

কোলাঘাটের পিরতলায় বাজারে আনাজ বিক্রি করছেন লক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২২ ০৭:৪০
Share: Save:

জামাইষষ্ঠীর দিন বাড়তি আয়ের আশায় পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেক ফল ও আনাজ ব্যবসায়ীরা। তবে তাঁর ক্ষেত্রে বিশেষ দিনের কোনও ব্যাপার নেই। কোলাঘাটের পুরাতন বাজার এলাকার পিরতলায় কি শীত কি গ্রীষ্ম, প্রতিদিন আনাজ নিয়ে বসতে দেখা যাবে তাঁকে। তিনি লক্ষ্মী মাইতি। শুধু এটুকু বললে বোধহয় পুরোটা বলা হয় না। লক্ষ্মীর বয়স একশো পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই বয়সেও আর পাঁচজন ব্যবসায়ীর মতোই বাজারে আনাজ বিক্রি করছিলেন। একমাত্র ছেলের সংসারের ব্যাটন আজও তাঁরই হাতে। বয়স যেন লক্ষ্মীর কাছে কেবলই একটা সংখ্যা। ছেলের- নাতির সংসারে সত্যিকারের ‘লক্ষ্মী’ তিনি।

কোলাঘাটের পুলশিটা পঞ্চায়েতের যোগীবেড় গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী মাইতি পঞ্চাশ বছর আগে স্বামীকে হারান। স্বামী ছিলেন দিনমজুর। এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মুখে ভাত তুলে দিতে সে সময় আনাজ নিয়ে বাজারে বিক্রি করে বসেন লক্ষ্মী। সেই আয়ে পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তৈরি করেছেন মাথা গোঁজার পাকা ঠাঁই। ছেলে বছর সাতান্নর গৌর চায়ের দোকান চালান। দেখতে দেখতে একশোর গণ্ডি পেরিয়ে এসেছেন লক্ষ্মী। আধার কার্ড-এর নথিতে তাঁর বয়স ১০২ পেরিয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনের রুটিতে ছেদ পড়েনি। রোজ ভোর ৩টেয় ছেলের সাইকেলে চেপে বাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কোলাঘাট পুরাতন বাজারের পিরতলায় বাজারে আসেন লক্ষ্মী। সেখানে দুপুর পর্যন্ত বসে আনাজ বিক্রি করেন।

দু’চোখেরই ছানির অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবুও দাঁড়িপাল্লা হাতে সজাগ দৃষ্টি তাঁর। কিছুদিন আগে হাত ভেঙে গিয়েছিল। কয়েকদিনের বিরতির পর আবার পুরনো ছন্দে লক্ষ্মী। জামাইষষ্ঠীর দিন মাছ মাংসের পাশাপাশি বাজারে আনাজের চাহিদাও থাকে ভালই। তাই এদিন লক্ষ্মীর আনাজ স্টলে অন্য দিনের তুলনায় বিক্রিও ভাল। বাড়িতে নাতনি, নাত জামাই আসবে। তাই অন্যদিনের তুলনায় একটু আগেই বাড়ি ফেরা। এই বয়সে কষ্ট হয় না ? লক্ষ্মীর জবাব, ‘‘করোনার সময় ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাঁটুর সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ঘরে বসে থাকতে পারি না। ব্যবসা করে সংসারটাকে দাঁড় করিয়েছি। এটা এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া ছেলের সংসারেও সাশ্রয় হয়।’’ ছেলে গৌর বলেন, ‘‘আমি চায়ের দোকান চালাই। মাকে অনেকবার বলেছি ব্যবসা বন্ধ করে দিতে। কিন্তু উনি বলেন ব্যবসা বন্ধ করে দিলে উনি অকেজো হয়ে যাবেন। তাই বাধা দিই না। আনাজ ব্যবসা করেই আমাদের বড় করেছেন। বৃদ্ধ বয়সে ছেলেরা মা-বাবাকে দেখে। আমি ভাগ্যবান যে আমার মা ১০২ বছর বয়সেও আমার সংসার টানছেন।’’

নিত্য বাজারে আসা অসীম দাস নামে এক ক্রেতার কথায়, ‘‘লক্ষ্মীমাসীর আনাজের দোকানে অনেকেই ভিড় করেন। ওঁর মধ্যে একটা সারল্য রয়েছে। এই বয়সেও যে ভাবে কাজ করে চলেছেন তা বিরল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

woman family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE