Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে স্বনির্ভর হতে চান মহুয়া

নিগ্রহ রুখে মেয়ে কোলে হোমে যুবতী

শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সোজা এসে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোমে উঠলেন বছর পঁচিশের যুবতী। কোলে মাস তিনেকের কন্যা।

লড়াকু: হোমের বাইরে মেয়েকে কোলে নিয়ে মহুয়া মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: হোমের বাইরে মেয়েকে কোলে নিয়ে মহুয়া মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫৫
Share: Save:

শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার। বাপের বাড়িতে থাকা যায় ক’দিন আর! অবসাদ গ্রাস করলে খবরের কাগজে ছাপা হয় বধূ মৃত্যুর কাহিনি। কখনও অভিযোগ ওঠে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। শাস্তি বা বেকসুর খালাস— টানাপড়েন যেমনই থাক, মাঝখানে খোয়া যায় একটি তাজা প্রাণ। এ রাজ্যে ছবিটা বড় চেনা।

তবে সে পথের উল্টো দিকে হেঁটেও যে বাঁচা যায়, তার নজিরও রইল এই রাজ্যেই। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সোজা এসে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোমে উঠলেন বছর পঁচিশের যুবতী। কোলে মাস তিনেকের কন্যা। বললেন, ‘‘শ্বশুরবাড়িতে থাকতে পারছি না। স্বনির্ভর হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। মেয়েকে নিয়ে বাঁচব।’’

শুক্রবার সকালে তমলুকের নিমতৌড়ি এলাকার মহিলা আবাসিক হোমে এসে থাকতে চান হাওড়ার জয়পুর এলাকার বাসিন্দা মহুয়া মণ্ডল। আদতে মহুয়া তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই-২ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। বছর দুয়েক আগে হাওড়া জয়পুরের কবিরপুর গ্রামের পঙ্কজ রায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু কাজের সূত্রে গুজরাতে থাকেন সোনার কারিগর পঙ্কজ।

মহুয়ার অভিযোগ, প্রথম স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার পর তাঁকে বিয়ে করেন পঙ্কজ। কিন্তু সে কথা বিয়ের আগে বলেননি। বিয়ের পর আগের পক্ষের ন’বছরের মেয়ে এবং শাশুড়ির সঙ্গে কবিরপুরে থাকতেন মহুয়া। পাশের বাড়িতে ভাসুর থাকেন সপরিবারে। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তাঁর উপর অত্যাচার শুরু করেন শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা। এমনকী প্রতিবেশীরাও তাঁকে কটূকথা শোনাতেন। তিন মাস আগে মহুয়া এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তারপর থেকে অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে বলে অভিযোগ।

মহুয়া বলেন, ‘‘গত সোমবার বাপের বাড়ি থেকে হাওড়ায় ফিরেছিলাম। পরদিন সন্ধ্যায় ভাসুর কার্তিক রায়, জা পার্বতী রায়, শাশুড়ি গায়ত্রী রায় ও এক প্রতিবেশী শুকদেব আদক আমাকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। স্থানীয় এক ব্যক্তি আমাকে রক্ষা করেন।’’ তাঁর দাবি, মারধরে জখম হয়ে জয়পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসাও করিয়েছেন তিনি। জয়পুর থানায় অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। শুক্রবার ভোরে বাড়ি ছেড়ে তিনি তমলুকের হোমে চলে আসেন বলে জানান মহুয়া।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মহুয়া বলেন, ‘‘অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বারবার বাপের বাড়িতে চলে এসেছি। কিন্তু এ ভাবে কতদিন?’’ তমলুক জেলা হাসপাতালে মেয়েকে চিকিৎসা করাতে এসে নিমতৌড়ির হোমের কথা জেনেছিলেন তিনি। তাই আর দেরি করেননি। সোজা মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছেন। মহুয়ার কথায়, ‘‘আমি এখানে থেকে কোনও কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনির্ভর হতে চাই। স্বামী বাড়িতে ফিরলে তবেই তাঁর কাছে যাব।’’

এ দিন সকালে নিমতৌড়ির হোমের সামনে শিশুকন্যা দীপিকাকে কোলে নিয়ে এসে অপেক্ষা করেছিলেন মহুয়া। হোম পরিচালনায় থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা যোগেশ সামন্ত জানান, মা-মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে আপাতত হোমে রেখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যোগেশবাবু বলেন, ‘‘প্রতিদিন যেখানে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বধূ আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা ঘটছে, সেখানে মহুয়া একটা দৃষ্টান্ত। এই মনের জোর সকলের মধ্যে আসুক। আমরা তাই চাই।’’ জয়পুর থানা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মহুয়া দু’বার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Harassment Wife Daughter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE