Advertisement
E-Paper

অনলাইন শপিংয়ে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ শহরে

এটিএম থেকে জাল করে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। তবে এবার অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা হাতিয়ে মাসের পর মাস বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইটের মাধ্যমে জিনিসপত্র ক্রয়ের অভিযোগ উঠল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০০:৩৪

এটিএম থেকে জাল করে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। তবে এবার অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা হাতিয়ে মাসের পর মাস বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইটের মাধ্যমে জিনিসপত্র ক্রয়ের অভিযোগ উঠল। মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা মহম্মদ রফিকের অভিযোগ, “থানায় অভিযোগ জানানোর পর, ক্রয় সংস্থার মাধ্যমেই দুষ্কৃতীরা কিছু টাকা জমা দিয়েছেন। এমনকি দুষ্কৃতীরা এসএমএস করে বাকি টাকা ধীরে ধীরে দিয়ে দেবে বলেও জানায়। সেই সব তথ্য নিয়ে থানায় ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও জানানো হয়েছে। তারপরেও দুষ্কৃতী ধরা পড়েনি।”

মহমম্দ রফিক জানান, চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসের বিভিন্ন সময়ে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নিয়ে নানা অনলাইন শপিং সাইটের মাধ্যমে জিনিস কেনা হয়েছে। টাকা জমা ও তোলার নথি পাওয়ার জন্য তিনি এসএমএস পদ্ধতি নিয়ে রাখলেও এক্ষেত্রে একবার মাত্র এসএমএস আসে। আর কোনও এসএমএসও আসেনি। ফলে বিষয়টি প্রথমে তাঁর নজরে আসেনি। গত ৫ মে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪৮৮৮ টাকা তোলা হয়েছিল বলে এসএমএস আসার পরেই তিনি ব্যাঙ্কে বিষয়টি জানান। ওইদিনই কোতয়ালি থানাতে তিনি অভিযোগ করেন। গত ১০ মে হঠাত্‌ দেখেন যে অনলাইন শপিং সাইটের মাধ্যমে জিনিসপত্র কেনার জন্য ওই টাকা নেওয়া হয়েছিল, সেই সংস্থার মাধ্যমেই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৩৯৯৯ টাকা জমাও করা হয়। এতে তাঁর সন্দেহ আরও বাড়ে। গত ২৮ মে তিনি ব্যাঙ্ক থেকে নথি সংগ্রহ করতে যান। ব্যাঙ্কে গিয়ে মহম্মদ রফিকের চক্ষু চড়কগাছ। তিনি বুঝতে পারেন, শুধু একটি ঘটনাই ঘটেছে এমন নয়, ১ এপ্রিল থেকে ২৮ মে-র নথি বলছে, দুষ্কৃতীরা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৮৯ হাজার ৪৪৭ টাকার জিনিসপত্র ক্রয় করেছে। আবার মাঝে-মধ্যে টাকা জমাও দিয়েছে। জমার পরিমাণ হল, ৩৭ হাজার ৬৪৬ টাকা।

মহম্মদ রফিকের অভিযোগ, “টাকা তোলা হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে জমাও দেওয়া হচ্ছে। আমাকে এসএমএস করে বলা হচ্ছে, আপনার টাকা ধীরে ধীরে দিয়ে দেব। এসএমএস করা নম্বরটিও পুলিশকে দিয়েছি। ব্যাঙ্ককে জানিয়েছি। তবুও দুষ্কৃতী ধরা পড়বে না! ভাবতেও অবাক লাগছে।” এটিএম থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা হামেশাই ঘটে। এছাড়াও ব্যাঙ্কের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে ভুয়ো ফোনের মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও এটিএমের পাশওয়ার্ড জেনে নিয়ে টাকা আত্মসাত্‌ করার ঘটনাও ঘটে।

সম্প্রতি সরোজ দাস নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে এটিএমের মাধ্যমে কয়েক হাজার টাকা তুলে নেয় দুষ্কৃতীরা। সরোজবাবুর কথায়, “আমি দেখতে পাচ্ছি, ঘনঘন এসএমএস ঢুকছে। কখনও ৪ হাজার টাকা তোলা হল, তো কখনও ৩ হাজার টাকা। অথচ, কিছু করতে পারছি না।” এভাবেই নিতাই মৈত্র, স্বপন পানিগ্রাহিদেরও টাকা চলে গিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীরা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে টানা ২ মাস ধরে কখনও ২৫ হাজার টাকা তো কখনও ১০ হাজার টাকা, কখনও একই দিনে ১ হাজার, ২ হাজার করে প্রায় সারাদিনে দুষ্কৃতীরা ১৪-১৫ হাজার টাকার জিনিস ক্রয় করেছেন বিভিন্ন সংস্থা থেকে। তবু কেন দুষ্কৃতী ধরা পড়বে না, সেই প্রশ্ন উঠছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, কিভাবে একজন দুষ্কৃতী এই কাজ করলেন। কারণ, অনলাইনের মাধ্যমে জিনিস ক্রয় করতে হলে ডেবিট কার্ড ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নানা নথির প্রয়োজন হয়। ডেবিট কার্ডের এক দিকে থাকা ১৯ ডিজিটের নম্বরের পাশাপাশি উল্টোদিকে থাকে তিন সংখ্যার সিভিভি নম্বর। কখনও কখনও ওই সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা মোবাইল নম্বরও চাওয়া হয়। প্রয়োজনে মোবাইলে একটি গোপন নম্বর পাঠানো হয়। সেটি দিলে তবেই জিনিসপত্র কেনা যায়।

মহম্মদ রফিকের কথায়, “আমি কাউকে কোনওদিন আমার ডেবিট কার্ড দিইনি। ফলে অন্যের পক্ষে ওই নম্বর সংগ্রহ করা কঠিন। তাই আমার ধারণা, ব্যাঙ্কেরই কোনও কোনও অসাধু কর্মী এই কাজে যুক্ত রয়েছেন। না হলে অভিযোগ জানানোর পরেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?” ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার মঞ্জুলিকা মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম। এক্ষেত্রে কিভাবে দুষ্কৃতীরা টাকা তুলছে, তা আমাদের জানা নেই। আমরা বিষয়টি অ্যান্টি ফ্রড ইউনিটকে জানিয়েছি। তারা ঘটনার তদন্ত করছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।

online shopping fraud medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy