কালীপুজো উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসে ‘শ্লীলতাহানি’র শিকার হলেন ছোট পর্দার এক অভিনেত্রী। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে উদ্যোক্তা ক্লাবের কর্তাদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটিতে তৃণমূলের নামও জড়িয়েছে। কারণ, ওই অভিনেত্রী যাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন, তারা এলাকায় তৃণমূল নেতা-কর্মী হিসেবেই পরিচিত।
শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থানার চকগাড়ুপোতা গ্রামে। অনুষ্ঠান শেষে তমলুক থানায় শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই অভিনেত্রী। অভিযোগে তিনি জানান, অনুষ্ঠানের আয়োজক ‘শতদল’ ক্লাবের সম্পাদক অলোক রায়-সহ জনা ছয়েক ক্লাব সদস্য তাঁর শ্লীলতাহানি করেছে। প্রধান অভিযুক্ত অলোকবাবু ক্লাবের সম্পাদকের পাশাপাশি তৃণমূলের চকগাড়ুপোতা বুথ কমিটির সভাপতি। বাকি অভিযুক্তরাও এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। অলোকবাবুর অবশ্য দাবি, “এমন কিছু ঘটেনি। আমাদের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ করেছেন অভিনেত্রী।” রবিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতারও হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “অভিনেত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়েছি। যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শ্রীরামপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চকগাড়ুপোতা গ্রামে স্থানীয় ‘শতদল’ ক্লাবের উদ্যোগে কালীপুজো হয়েছে। সেই উপলক্ষে চকগাড়ুপোতা হাইস্কুল মাঠে কয়েকদিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাতে সেই অনুষ্ঠান মঞ্চেই এসেছিলেন ছোট পর্দার ওই অভিনেত্রী। মাঠে হাজার কুড়ি দর্শক জড়ো হয়েছিলেন। রাত ১০টা নাগাদ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছন ওই অভিনেত্রী। স্থানীয় সূত্রে খবর, তখন গানের অনুষ্ঠান চলায় মঞ্চ সংলগ্ন একটি ঘরে (গ্রিন রুমে ) ওই অভিনেত্রীকে বসানোর ব্যবস্থা করেন ক্লাবকর্তারা। তাঁকে কিছুটা অপেক্ষাও করতে বলা হয়। অভিযোগ, ওই ঘরে অপেক্ষা করার সময়ই ক্লাব সম্পাদক অলোক রায়-সহ বেশ কয়েকজন সদস্য মদ্যপ অবস্থায় ওই অভিনেত্রীর শ্লীলতাহানি করে ও তাঁকে তাদের সঙ্গে নাচতে বাধ্য করে। অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরা পরিস্থিতি সামাল দেন।
এই ঘটনার পরেও অবশ্য ওই অভিনেত্রী মঞ্চে ওঠেন। দর্শকের দাবি মেনে গান শোনান, সংলাপও বলেন। অভিযোগ, মঞ্চ থেকে নেমে আসার সময় ফের একদল লোক তাঁকে ঘিরে ধরে নাচতে বলে। এ বারও ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের হস্তক্ষেপে ওই অভিনেত্রী ভিড় থেকে বেরিয়ে এসে কোনওক্রমে গাড়িতে উঠে এলাকা ছাড়েন। তারপর রাতেই তমলুক থানায় গিয়ে ওই অভিনেত্রী ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে রাতেই চকগাড়ুপোতা গ্রামে পুলিশ যায়। তবে অভিযুক্তদের কাউকেই ধরা যায়নি।
শ্লীলতাহানির এই ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেই ক্লাব কর্তারা অবশ্য বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রধান অভিযুক্ত ক্লাব সম্পাদক অলোকবাবুর দাবি, “ওই অভিনেত্রীকে গ্রিন রুমে অপেক্ষা করতে বলে আমরা বেরিয়ে আসি। গান শেষ হতেই উনি মঞ্চে উঠে গান শোনান ও সংলাপ বলেন। মিনিট পনেরো পরে মঞ্চ থেকে নেমে আসার সময় উৎসাহী জনতা তাঁকে ঘিরে ধরে আরও কিছুক্ষণ থাকার অনুরোধ করেছিল বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা তখন ওখানে ছিলাম না।” অলোকবাবু আরও বলেন, “পরে শুনি ওই অভিনেত্রী আমাদের ক্লাবের লোকজনের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
ওই ক্লাবের সভাপতি কমল প্রামাণিকেরও দাবি, “অভিনেত্রী যখন গ্রিন রুমে বসেছিলেন, তখন ক্লাব সম্পাদক, আমি ও ক্লাবের কয়েকজন সদস্য সেখানে কিছুক্ষণ ছিলাম। পরে অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা ছাড়া সেখানে আর কেউ ছিল না। আমরা সবাই বেরিয়ে আসি। শ্লীলতাহানির কোনও ঘটনা ঘটেনি।” সিপিএম পরিচালিত স্থানীয় শ্রীরামপুর-২ গ্রামপ ঞ্চায়েতের প্রধান সরমা ভৌমিকেরও বক্তব্য, “চকগাড়ুপোতা গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল জানি। তবে এ ধরনের ঘটনার কথা নজরে আসেনি।”
অভিযুক্তরা ঘটনাটি উড়িয়ে দিলেও, তৃণমূলের নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে পড়েছেন দলের জেলা নেতৃত্ব। তমলুকের তৃণমূল নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধক্ষ্য সোমনাথ বেরা বলেন, “এমন ঘটনা সমর্থন করা যায় না। ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত কিনা দলীয় ভাবে খতিয়ে দেখা হবে।” এ প্রসঙ্গে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “ঘটনার কথা শুনেছি। ওই ক্লাবে সব দলের লোকই আছে। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy