Advertisement
E-Paper

আড্ডা জোন বানিয়েছেন প্রাক্তনীরাই

ক্লাসঘরের আকাল, জলসঙ্কট, গ্রন্থাগারে বইয়ের অভাব—এই সব সমস্যায় মফস্‌সলে আর ৫টা কলেজ যখন জেরবার, তখন মেদিনীপুর কলেজ চিন্তা করছে ওয়াইফাই জোন, ই-ক্লাসরুম নিয়ে। এর একটা কারণ যদি হয় কলেজের স্বশাসিত হয়ে ওঠা, অন্য কারণ প্রাক্তনীদের উদ্যোগ।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০০:৩৮

পড়ুয়া ৪৫০০ স্থায়ী শিক্ষক ৬১ শূন্যপদ ৩৩টি গ্রন্থাগার ২৫টি

ক্লাসঘরের আকাল, জলসঙ্কট, গ্রন্থাগারে বইয়ের অভাব—এই সব সমস্যায় মফস্‌সলে আর ৫টা কলেজ যখন জেরবার, তখন মেদিনীপুর কলেজ চিন্তা করছে ওয়াইফাই জোন, ই-ক্লাসরুম নিয়ে। এর একটা কারণ যদি হয় কলেজের স্বশাসিত হয়ে ওঠা, অন্য কারণ প্রাক্তনীদের উদ্যোগ।

কলেজে জলের বন্দোবস্ত প্রাক্তনীরাই করেছেন। গাছতলার ‘আড্ডা জোন’-ও সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে দিয়েছেন। কলেজের ১২৫তম প্রতিষ্ঠাবর্ষে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে স্মারক তোরণ তৈরি হয়েছে প্রাক্তন সম্মিলনীর উদ্যোগে। ফলে, কলেজ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিন্তে উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে পারছেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এই জুলাইয়ের মধ্যে কলেজে ওয়াইফাই চালু হবে। সব বিভাগে ই-ক্লাসরুম হবে। থাকবে স্মার্ট বোর্ড। শিক্ষকদের ল্যাপটপ দেওয়া হবে। প্রাক্তন ছাত্র সম্মিলনীর অন্যতম সহ- সভাপতি চপল ভট্টাচার্য বলছেন, “কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়নে ছাত্র সম্মিলনী সব রকম চেষ্টা করে। কলেজের সঙ্গে সম্মিলনীর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। নাক-এর প্রতিনিধিরাও আমাদের এই ভূমিকার প্রশংসাও করেছেন।”

২০১৪-এ স্বশাসিতের মর্যাদা পাওয়ায় কলেজ রাজনীতি মুক্ত। গত বছর থেকেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ। ইউজিসির কাছ থেকে ‘কলেজ উইথ পোটেনশিয়াল ফর এক্সিলেন্স’ (সিপিই) মর্যাদাও পেয়েছে কলেজ। আর নাকের বিচারে ৪ পয়েন্টের মধ্যে পেয়েছি ৩.৫৮। তবে সমস্যাও কিছু রয়েছে। এক পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব। ৫০ জন আংশিক সময়ের ও ৪৭ জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। মেদিনীপুর কলেজে সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি নেই। কর্তৃপক্ষ চাইছেন, এই কলেজ স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হোক। আর একটা ক্যাম্পাস হোক, যেখানে স্নাতকোত্তরের ক্লাস হবে। ক্যাম্পাসের জন্য আবেদনও জানানো হয়েছে।

মেদিনীপুর কলেজের পথচলা শুরু ১৮৭৩ সালে। পাশে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল (বয়েজ) শুরু হয় ১৮৩৪ সালে। ১৮৫১-৬৬, টানা ১৬ বছর কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ রাজনারায়ণ বসু। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ইচ্ছেতেই এই দায়িত্ব নেন রাজনারায়ণ। স্কুলের পাশে যে বাড়িতে রাজনারায়ণ থাকতেন, সেই ‘প্রিন্সিপালস্‌ কোয়ার্টার’ দীর্ঘদিন ধরে মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই বাড়ি থেকে বিয়ে হয়েছিল রাজনারায়ণ বসুর মেয়ে স্বর্ণলতা বসুর। এসেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বর্ণলতাদেবীরই ছেলে ঋষি অরবিন্দ ঘোষ।

কলেজ গড়ার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা নেন রাজনারায়ণ। কলেজ স্থাপনের জন্য ৬০ হাজার টাকা সংগ্রহও করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতার বাইরে প্রথম কোনও কলেজ হিসেবে মেদিনীপুর কলেজই অনুমোদন দেয়। শুরু হয় পঠনপাঠন। ১৯২৬ সালে গণিত, পদার্থবিদ্যা স্নাতক চালু হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৫৬ সালে কলেজটি ‘গভর্মেন্ট স্পনসরড্‌’ হয়। প্রথমে বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের বিষয়ই পড়ানো হত। ১৯৫৯ সালে বাণিজ্য পড়ানোর তোড়জোর হয়। ১৯৬৯ সালে সান্ধ্য বিভাগে বাণিজ্য শাখা পুরোদমে চালু হয়। পরে অবশ্য পৃথক ক্যাম্পাসে কৈবল্যদায়িনী কলেজ অফ্ কমার্স গড়ে ওঠে। এখন কলেজে প্রাতঃকালীন এবং দিবা দু’টি বিভাগই রয়েছে। ২০০১ সালে আইন পড়ানো শুরু হয়। পরে আলাদা ভবনে মেদিনীপুর আইন কলেজ গড়ে ওঠে। ১৮৮৫ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে আসে মেদিনীপুর কলেজ। এখন কলেজে ২১টি বিষয়ে সাম্মানিক স্নাতক এবং ৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে আরও ৫টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো শুরু হবে।

স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই কলেজ ছিল বিপ্লবীদের গোপন ডেরা ছিল। তৎকালীন তিন শিক্ষক তারাদাস ঘোষ, থাকোপদ বিশ্বাস, বিনয়জীবন ঘোষ বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ সরকার কলেজের অনুদান বন্ধ করে দেয়। এই কলেজের ছাত্র বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, দীনেশ গুপ্ত, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, নির্মলজীবন ঘোষ। দীনেশ রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন।

এখনও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই খেলাধুলো, সাংস্কৃতিক চর্চায় মেতে থাকে। অধ্যক্ষের ঘরে যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই আলমারি বোঝাই শিল্ড-কাপ-মেডেল আর শংসাপত্র। আন্তঃকলেজ হোক বা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, খেলাধুলো আর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় মেদিনীপুর কলেজের সাফল্য নজরকাড়া। গত বছরই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃকলেজ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই কলেজের ছাত্রদের দল। খো খোতেও চ্যাম্পিয়ন আর টেবিল টেনিসে রানার্স। সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার অগ্নিভ পান এই কলেজেরই ছাত্র। বাংলা দলের হয়ে জাতীয় স্তরে সুযোগ পেয়েছে সে। আন্তঃকলেজ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় গত বছর কলেজের ছাত্র সৌমেন্দু ঘোষ মিমিক্রিতে, হিরণকান্তি সাঁতরা বিতর্কে, মহাশ্বেতা পাঁজা কোলাজে প্রথম হয়েছেন। ছাত্রীদের দল গ্রুপ ডান্সে সেরা। নাটকের প্রথম পুরস্কারও এসেছে এই কলেজে।

কর্তৃপক্ষ চান, কলেজই যেন পড়ুয়াদের খেলার মাঠে টেনে নিয়ে যেতে পারে। সেই মতো বিভিন্ন খেলার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বার ফুটবল, ক্রিকেট, খো খো, ভলিবল, অ্যাথলেটিক্সে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। কৃতী খেলোয়াড়দের সব রকম ভাবেই সাহায্য করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

আগামী সপ্তাহে এই বিভাগে দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজ

নম্বর বাধা নয়

কিছু করে দেখাতে গেলে মার্কশিট লাগবেই এমন কথা নেই। কিছু কাজ শিখলে হিল্লে হতে পারে। যেমন, অ্যানিমেশন।
যে কায়দায় চলচ্চিত্র, ভিডিও বা কম্পিউটার গেমসে মানুষ ও অন্য জীবজন্তুর দ্বিমাত্রিক-ত্রিমাত্রিক ছবিকে চলমান করে তোলা হয়,
তাকে বলে অ্যানিমেশন। এ রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় অ্যানিমেশন কোর্স পড়ার সুযোগ রয়েছে।
ছোটদের ছবি থেকে বিজ্ঞাপন, অ্যানিমেশনের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে কাজের সুযোগও।

সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট: কলকাতার হাইল্যান্ড পার্কে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স। আসন ৮টি। দেশ জুড়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভর্তি নেওয়া হয় মার্চ-এপ্রিলে। আবেদন অনলাইনে। ন্যূনতম যোগ্যতা যে কোনও শাখায় স্নাতক। মোট খরচ ১ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা ৬টি সেমিস্টারে দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।

রূপকলা কেন্দ্র: সরকারি সংস্থাটিতে ভর্তি হতে স্নাতক হতে হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে ৪০ শতাংশ এবং স্নাতক স্তরে ৪০ শতাংশ পেলেই আবেদন করা যাবে। আঁকা ও কম্পিউটরে প্রাথমিক দক্ষতা থাকতে হবে। ভর্তির বিজ্ঞাপন কাগজে দেওয়া হয়। সোম থেকে শুক্র ক্লাস। ৬টি সেমিস্টারে দু’বছরের কোর্স। খরচ ৭০ হাজার টাকা। ৭০টি আসন।

ওয়েবেল ডিকিউই অ্যানিমেশন অ্যাকাডেমি: পড়ানো হয় সল্টলেক সেক্টর ৫-এ। দু’টি ডিপ্লোমা কোর্স— ডিপ্লোমা ইন টুডি অ্যনিমেশন ফিল্ম মেকিং এবং থ্রিডি ডিপ্লোমা ইন অ্যানিমেশন ফিল্ম মেকিং। দুটিই এক বছরের কোর্স। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সেন্টার থেকে ফর্ম সংগ্রহ করা যাবে। পেনসিল স্কেচের উপরে প্রবেশিকা পরীক্ষা হয়। সোম থেকে শুক্র ক্লাস। খরচ ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। আসন: থ্রিডি ৬০, টুডি ২০।

সুলুক-সন্ধান

ই-প্রশিক্ষণ

স্নাতকদের জন্য ‘ই-গর্ভন্যান্স’, ‘সিটিজেন সেনট্রিসিটি’, ‘সার্ভিস ওরিয়েন্টেশন’-নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিদেশমন্ত্রক। ৮ জুন থেকে দেশব্যাপী ৮১টি ‘পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র’ (পিএসকে) ও ৩৭টি ‘আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস’ (আরপিও)-এ এই প্রশিক্ষণ শিবিরে যে কোনও শাখার স্নাতক ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিতে পারবেন। ইন্টার্নশিপের মেয়াদ ৪-৮ সপ্তাহ। তবে আবেদনকারীকে কোনও ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে শংসাপত্র। ইচ্ছুকরা নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে SEVA@passportindia.gov.in- এ ই-মেল করতে পারেন।

ঘর সাজানো

শিলিগুড়ি প্রধাননগরে ইন্টিরিয়র ডিজাইনিংয়ে এক বছরের কোর্স পড়ায় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন ডিজাইনিং’। কোর্স শেষে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত শংসাপত্র মেলে। সার্টিফিকেট কোর্সের ব্যবস্থাও আছে। তা আইএনআইএফডি-অনুমোদিত।

পাঠ্য পর্যটন

শিলিগুড়ি কলেজে ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রাভেল ম্যানেজমেন্ট পড়ানো হয়। অন্য বিভাগের উৎসাহী ছাত্রছাত্রীরা অতিরিক্ত হিসাবে এই বিষয়টি পড়তে পারেন। প্রথম বছর সার্টির্ফিকেট কোর্স। দ্বিতীয় তৃতীয় বছর ডিপ্লোমা কোর্স। প্রতি বছর ফি ৩ হাজার টাকা।

শারীরশিক্ষা

শিলিগুড়ি কলেজে কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ‘ইলেকটিভ’ বিষয় হিসাবে পড়তে পারেন শারীরশিক্ষা। ৩ বছরের কোর্স। প্রতি মাসে ৮০০ টাকা ফি। কোর্সের শুরুতে ৪০০ টাকা দিতে হবে। বিনিময়ে ‘ট্র্যাক স্যুট’।

পুতুল তৈরি

সফট টয়েজ তৈরি শেখানো মেদিনীপুরে রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয় (গোপ কলেজ)-এ। যোগাযোগ করতে হবে কলেজের কেরিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট সেন্টারে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy