Advertisement
E-Paper

ইচ্ছেয় ভর করে উত্‌সব খুদেদের

জঙ্গলমহলের অজ গাঁয়ের ধীমান, অভিজিত্‌, মালতী, প্রেমাংশুরা ইচ্ছে-ডানায় ভর করে চিনে নিয়েছে অর্ধেক আকাশ। ওদের মতো ৫৪ জন কচিকাঁচা মিলে তিন দিনের ‘শিশু-কিশোর বিকাশ মেলা’-র আয়োজন করেছিল ঝাড়গ্রামের লবকুশ গ্রামের আংশিক বুনিয়াদী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। শনি থেকে সোমবার (৭-৯ ফেব্রুয়ারি) পড়ুয়াদের এই আনন্দ-যজ্ঞে সামিল হলেন প্রাক্তনী থেকে অভিভাবক ও গ্রামবাসী সকলেই।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:২৩
সৃষ্টির আনন্দে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

সৃষ্টির আনন্দে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

জঙ্গলমহলের অজ গাঁয়ের ধীমান, অভিজিত্‌, মালতী, প্রেমাংশুরা ইচ্ছে-ডানায় ভর করে চিনে নিয়েছে অর্ধেক আকাশ। ওদের মতো ৫৪ জন কচিকাঁচা মিলে তিন দিনের ‘শিশু-কিশোর বিকাশ মেলা’-র আয়োজন করেছিল ঝাড়গ্রামের লবকুশ গ্রামের আংশিক বুনিয়াদী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। শনি থেকে সোমবার (৭-৯ ফেব্রুয়ারি) পড়ুয়াদের এই আনন্দ-যজ্ঞে সামিল হলেন প্রাক্তনী থেকে অভিভাবক ও গ্রামবাসী সকলেই। ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহকে কুর্নিশ জানিয়ে উত্‌সবকে সফল করতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিল অরণ্যশহরের একাধিক সাংস্কৃতিক সংস্থা। শনিবার ঘুড়ি উড়িয়ে উত্‌সবের সূচনা করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) আমিনুল আহসান। পড়ুয়াদের এমন আয়োজন দেখে তিনিও অভিভূত। তাঁর কথায়, “স্কুল যে শুধুই মুখস্ত সর্বস্বতার জায়গা নয়, স্কুলের মাধ্যমে সামাজিকীকরণের কাজও যে সার্থকভাবে সম্ভব, সেটাই পড়ুয়ারা করে দেখিয়েছে। উত্‌সব নিঃসন্দেহে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।”

পড়ুয়াদের উত্‌সব আয়োজনের ভাবনায় সলতে পাকিয়েছিলেন স্কুলের একমাত্র শিক্ষক শুভাশিস মণ্ডল। বছর দেড়েক আগে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমণীমোহন মণ্ডল অবসর নেওয়ার পর শুভাশিসবাবুর দায়িত্ব অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। শুভাশিসবাবুর কথায়, “দীর্ঘ কয়েক বছরের চেষ্টায় স্কুলটিকে আকর্ষণের জায়গা করে তোলার চেষ্টা করেছি আমরা। ওরা পাঠ্যপুস্তক পড়ে যা জানছে, সেগুলি ল্যাপটপে প্রোজেক্টরের সাহায্যে দেখাই। এতে ওদের বোঝার কাজটা সহজ হয়ে যায়। দুর্গম গ্রামে বাস করাটাই ওদের কাছে মস্ত প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু ওদের ‘সীমান মাঝে অসীম’ খোঁজার আগ্রহেই সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এই উত্‌সবের আয়োজন।” প্রাক্তন শিক্ষক ও বর্তমান শিক্ষক দু’জনে মিলে উত্‌সবের সিংহ ভাগ আর্থিক দায়িত্ব বহন করেছেন। আর মেলাকে সার্থক করার জন্য গ্রামবাসীরাও নিজেদের খরচে প্যান্ডেল ও জেনারেটরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

অভিভাবক জ্যোত্‌স্না মাহাতো, উমা মাহাতো, ধরিত্রী মাহাতো, সুচিত্রা মাহাতো-রা মেলা প্রাঙ্গণে রকমারি খাবার দোকান দিয়েছিলেন। সেখানে গুড় পিঠে, ছাঁকা পিঠে, পুলিপিঠে, সুজি পিঠে, রসমালাই, ডিমের চপ চেটেপুটে খেয়েছেন মেলা দেখতে আসা উত্‌সাহীরা। খাবার বিক্রির টাকা স্কুলের উন্নয়নে দান করেছেন মায়েরা। তাঁদের কথায়, “স্কুলের দৌলতেই আমরা জেনেছি শৌচাগার ব্যবহারের অপরিহার্যতা, বাল্যবিবাহ কেন সামাজিক অপরাধ, শিক্ষা কীভাবে মনের বিকাশ ঘটায়।”

জানা গেল, উত্‌সবের আমন্ত্রণলিপি থেকে অনুষ্ঠানের ব্যাজ ও স্মারক সবই পড়ুয়ারা নিজেরাই তৈরি করেছে। শনিবার আর্ট অ্যাকাডেমি-র পরিচালনায় স্কুলে অঙ্কন, হস্তশিল্প ও নাচের কর্মশালায় যোগ দেয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। রবিবার ঝাড়গ্রাম কথাকৃতি-র পরিচালনায় নাটকের কর্মশালায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পড়ুয়ারা ‘ভয় ভেঙে দাও প্রভু’ নামে একটি তাত্‌ক্ষণিক নাটক মঞ্চস্থ করে। এ ছাড়া কবিতা কর্মশালা ও হস্তশিল্পের কর্মশালাও হয়। সোমবার পাপেট তৈরির কর্মশালাটি পরিচালনা করেন ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমি-র অধ্যক্ষ সঞ্জীব মিত্র। আমন্ত্রণ পেয়ে সোমবার উত্‌সবে এসেছিলেন বিশিষ্ট কবি শুভ দাশগুপ্ত। সেখানেই বসে গান লিখে সুর দিলেন কবি। সেই গানের সুরে নিজেদের তৈরি পাপেট নাচিয়ে পুতুল নাটক ‘অহঙ্কারী বেড়াল’ মঞ্চস্থ করল খুদেরা। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) আমিনুল আহসান আশ্বাস দিয়েছেন, স্কুলে আরও এক জন শিক্ষক দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করা হবে।

kingshuk gupta jhargram sishu kishor bikash mela
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy