গড়বেতায় কংগ্রেসের সম্মেলনে মানস। —নিজস্ব চিত্র
কংগ্রেসের কেন দুর্দিন, তা বোঝাতে গিয়ে দলের নেতাদেরই দায়ী করলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। সেই সূত্রে প্রয়াত সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের সমালোচনা করতেও ছাড়লেন না সবংয়ের বিধায়ক। রবিবার গড়বেতায় কংগ্রেসের কর্মী সম্মেলনে মানসবাবু বলেন, “মহাপাপ করে গিয়েছেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। কংগ্রেসকে দুর্বল করে গিয়েছেন। ১৯৭২ সালে ৩৩টি আসন সিপিআইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকেই কংগ্রেসের ধাক্কা খাওয়া শুরু। ২০০১ সালে কংগ্রেসের নির্বাচিত বিধায়কদেরও টিকিট দেওয়া যায়নি। বেশ কিছু আসন তৃণমূলকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। কলকাতাকে আমরা এমপি-এমএলএ দিতে পারিনি। কলকাতাকে অবহেলা করেছে কংগ্রেস। আমরা নিজেরাই দুর্বল করেছি কংগ্রেসকে।” একই সঙ্গে মানসবাবুর আশা, “বিভেদকামী শক্তি (বিজেপি) বাংলায় কোনও দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আগামী দিন কংগ্রেসের। আগামী দিনে বাংলায় কংগ্রেসই শেষ কথা বলবে।”
২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেই যে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে তা-ও এ দিন মনে করিয়ে দেন মানসবাবু। তাঁর কথায়, “সিপিএম-তৃণমূল একই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ। লাল সরে সবুজ এসেছে। দিদিমণি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তবে অত্যাচার চলছেই।”
গড়বেতা-১, ২ এবং ৩ ব্লকের দলীয় কর্মীদের নিয়ে এ দিন সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। মানসবাবু বলেন, “জঙ্গলমহল যেখানে ছিল, সেখানেই আছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। কাজ হচ্ছে না। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে প্রচুর মানুষ কাজ করেও মজুরি পাননি।” এই প্রসঙ্গেই জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের এক মন্তব্যকে সামনে আনেন তিনি। সপ্তাহ দুয়েক আগে পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত জঙ্গলমহল কাপের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মেদিনীপুরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকা পুলিশ সুপার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে সম্বোধনও করেন। ভারতীদেবীর মন্তব্য ছিল, ‘উনি এই জঙ্গলমহলের মা। মমতাময়ী মায়ের মতো জঙ্গলমহলে আগলে রেখেছেন। সমগ্র জঙ্গলমহল আজ সন্ত্রাস থেকে, অবিশ্বাস্য সন্দেহ থেকে, কর্মহীনতা থেকে, ক্ষুদা থেকে মুক্ত। উনি জঙ্গলমহলের হৃদয়।’ পাল্টা প্রশংসায় মুখ্যমন্ত্রীও সেদিন বলেছিলেন, ‘ভারতী অ্যাঙ্কার হিসেবে ভাল কাজ করেছে। পুলিশে কাজ করলেও অ্যাঙ্কার হওয়া যায়। সুতরাং সব কাজই সবাই করতে পারে। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।’ এদিন পুলিশ সুপারের ওই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে মানসবাবু বলেন, “রাজনীতিতে আপনি (মুখ্যমন্ত্রী) অনেক সমর্থন পেয়েছেন এ জেলা থেকে। কিন্তু জঙ্গলমহলের মানুষ যে কাঁদছে। তাঁরা হাজার বঞ্চনার শিকার হয়ে আছেন। আপনার ঘোষিত কর্মসূচিগুলো সঠিক ভাবে রূপায়িত হচ্ছে না। যা বলছেন, তা করতে পারছেন না। যা করছেন তা ভয়ঙ্কর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গলমহলের মায়ের কাছে আবেদন, ‘মা গো হয় টাকা দে, না- হয় খেতে দে!’ এই দাবিতে দলের কর্মীরা আন্দোলনও করবেন।”
মানসবাবু মনে করিয়ে দেন, “মেদিনীপুর জেলা কোনও অত্যাচার সহ্য করেনি। এখানে চূয়াড় বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছে। আপনার কাছে অনুরোধ, এই জেলাকে বঞ্চনা করবেন না।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “সুশান্ত ঘোষেরা অত্যাচার করেছে। মানুষ তাই পরিবর্তন করেছিল। এখন সুশান্তদের বদলে যাঁরা রাজত্ব করছেন, তাঁরা তো সুশান্তদের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন।” তৃণমূল নেতা- কর্মীদের নিজেদের মুখটা আয়নায় দেখারও পরামর্শ দেন সবংয়ের বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ, উন্নয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূল সংকীর্ণ রাজনীতি করছে। বৈঠকে সব দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয় না। শুধুমাত্র তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরাই নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। গত সাড়ে তিন বছরে বেশ কয়েকবার পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ, বিরোধী বিধায়কদের সঙ্গে জেলার উন্নয়ন নিয়ে কেন তিনি আলোচনা করেননি, এ দিন সেই প্রশ্নও সামনে আনেন মানসবাবু। তাঁর মতে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সংকীর্ণ রাজনীতির উপরে ওঠাই উচিত। ’৯৮ সালে কংগ্রেসকে ধাক্কা দিয়ে, অপমান করে, বিদ্রোহ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন দল গঠন করেন বলে দাবি করে মানসবাবুর মন্তব্য, “বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাঁর জন্ম হয়, বিশৃঙ্খলাতেই তাঁর শেষ পরিণতি হয়।” কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া, প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবে, কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়, তীর্থঙ্কর ভকত প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy