Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষুদিরাম কেন সন্ত্রাসবাদী, প্রতিবাদ ছাত্র-শিক্ষকদের

স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ‘বিপ্লব ও সন্ত্রাসবাদ’ অধ্যায়ে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর নামোল্লেখ থাকায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্য জুড়ে। এই নিয়ে এ বার সরব হলেন মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) ছাত্র, শিক্ষক এবং প্রাক্তনীরা। ক্ষুদিরাম এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন। অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ‘বিপ্লব ও সন্ত্রাসবাদ’ অধ্যায়ে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর নামোল্লেখ রাখার প্রতিবাদ জানাতে ক্ষুদিরামের আত্মবলিদানের দিনটিকেই বেছে নেয় ছাত্ররা। সোমবার ছিল ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান দিবস।

মেদিনীপুরে মধ্যশিক্ষা পষর্দের আঞ্চলিক অফিসে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রদের ধিক্কার।—নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুরে মধ্যশিক্ষা পষর্দের আঞ্চলিক অফিসে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রদের ধিক্কার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৩
Share: Save:

স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ‘বিপ্লব ও সন্ত্রাসবাদ’ অধ্যায়ে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর নামোল্লেখ থাকায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্য জুড়ে। এই নিয়ে এ বার সরব হলেন মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) ছাত্র, শিক্ষক এবং প্রাক্তনীরা। ক্ষুদিরাম এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন।

অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ‘বিপ্লব ও সন্ত্রাসবাদ’ অধ্যায়ে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর নামোল্লেখ রাখার প্রতিবাদ জানাতে ক্ষুদিরামের আত্মবলিদানের দিনটিকেই বেছে নেয় ছাত্ররা। সোমবার ছিল ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান দিবস। এ দিন কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্ররা শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ মিছিল পৌঁছয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মেদিনীপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে। পরে শিক্ষক এবং ছাত্রদের এক প্রতিনিধি দল পর্ষদ কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়। পর্ষদের আঞ্চলিক অধিকর্তা দেবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় দফতরে ছিলেন না। ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করেন পর্ষদের আর এক কর্তা উমাপ্রসাদ দাস। তাঁর কাছেই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। পর্ষদ সূত্রের খবর, দাবির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র অর্ণব রায়ের কথায়, “ক্ষুদিরাম দেশ স্বাধীনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি সন্ত্রাসবাদী ছিলেন না। অথচ, পাঠ্যপুস্তকে শহিদ ক্ষুদিরাম-সহ সমসাময়িক বিপ্লবীদের যেমন বিনয়-বাদল-দীনেশ, প্রফুল্ল চাকী প্রমুখকে ‘বিপ্লবী-সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিবাদ এখানেই।” স্কুলের সহ-শিক্ষক দীপঙ্কর সন্নিগ্রাহীর মতে, “ক্ষুদিরামকে ‘বিপ্লবী-সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিলে তাঁর আত্মত্যাগকে অসম্মান করা হয়। আমাদের বিশ্বাস, পর্ষদ কর্তৃপক্ষ ত্রুটি সংশোধনে উদ্যোগী হবেন।”

এ দিন পর্ষদ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি। শহরে প্রতিবাদ কর্মসূচি করে ডিএসও থেকে শুরু করে ডিওয়াইএফ, এসএফআইয়ের মতো ছাত্র-যুব সংগঠনগুলিও। বিজেপির কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন দলের শহর সভাপতি অরূপ দাস, যুব মোর্চার শহর সভাপতি সৌরভ মিত্র প্রমুখ। অরূপবাবু বলেন, “ক্ষুদিরাম বিট্রিশ শাসকদের কাছে সন্ত্রাসবাদী তকমা পেতে পারেন, তা বলে দেশের স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরও তিনি ‘সন্ত্রাসবাদী’ অভিধায় অভিহিত হবেন কেন? এটা দেশের লজ্জা, জাতির লজ্জা।” সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক দিলীপ সাউয়ের মতে, “ক্ষুদিরামকে বিপ্লবী-সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া মানে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করা।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার মতে, “বিট্রিশ সরকার ক্ষুদিরামকে সন্ত্রাসবাদী বলত। এখনও তাঁকে এই তকমা দেওয়া হবে, এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

পশ্চিম মেদিনীপুর কেশপুরের মোহবনিতে রয়েছে ক্ষুদিরামের জন্মভিটে। আর তিনি পড়াশোনা করেছেন মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে (বালক)। তখন অবশ্য তার নাম ছিল মেদিনীপুর জিলা স্কুল। এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ আমলে, ১৮৩৪ সালে। এক সময় এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন রাজনারায়ণ বসু। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কলেজিয়েট স্কুল ক্যাম্পাসেই গুলি করে হত্যা করা হয় ইংরেজ জেলাশাসক পেডিকে। ঐতিহ্যশালী এই স্কুল ইতিমধ্যে হেরিটেজের মর্যাদা পেয়েছে।

এ দিন মূলত স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্ররাই মিছিল করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কার্যালয়ে যায়। সঙ্গে ছিলেন দীপঙ্কর সন্নিগ্রাহী, আশিস কর, আশিস পাত্রের মতো স্কুলের সহ-শিক্ষকেরা। দীপঙ্করবাবু কলেজিয়েট স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র। এই শিক্ষকের কথায়, “ক্ষুদিরাম বসু আমাদের স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফাঁসিকাঠে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তিনি। তাঁকে যদি ‘বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দেওয়া হয়, তা আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন।”

স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ‘বিপ্লব ও সন্ত্রাসবাদ’ অধ্যায়ে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর নামোল্লেখ না রাখার আর্জি জানিয়েছে মোহবনির শহিদ ক্ষুদিরাম বসু স্মৃতি রক্ষা সমিতিও। এ দিন কেশপুরের মোহবনিতে নিয়মমাফিক ক্ষুদিরামের স্মরণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। সমিতির সভাপতি চিত্ত গড়াই বলেন, “আমরা মনে করি ক্ষুদিরাম বিপ্লবী এবং শহিদ। যে অংশটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই অংশটি সরকারি পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিয়ে দেওয়াই উচিত।” এসইউসি-র জেলা সম্পাদক অমল মাইতিও বলেন, “শহিদ বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে বিপ্লবীদের অসন্মান করার প্রচেষ্টা চলছে। এই জঘন্য প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE