Advertisement
১৯ মে ২০২৪
ঘাটাল কলেজ

ক্ষমায় নারাজ নিগৃহীত শিক্ষক

শাসক দলের ছাত্র নেতাদের হাতে মার খাওয়ার তিন দিনের মাথায় শুক্রবার কলেজে এলেন ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক অমিত রায়। এবং স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দিলেন মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ টিএমসিপি) নেতা হেমন্তকুমার দাসকে ক্ষমা করার প্রশ্নই নেই।

কলেজে অমিত রায়।

কলেজে অমিত রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

শাসক দলের ছাত্র নেতাদের হাতে মার খাওয়ার তিন দিনের মাথায় শুক্রবার কলেজে এলেন ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক অমিত রায়। এবং স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দিলেন মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ টিএমসিপি) নেতা হেমন্তকুমার দাসকে ক্ষমা করার প্রশ্নই নেই।

ফেসবুকে শাসক দলের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় গত মঙ্গলবার ঘাটাল কলেজে অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধান অমিতবাবুকে স্টাফরুমে ঢুকে হেমন্তর নেতৃত্বে মারধর করার অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র কর্মীদের বিরুদ্ধে। বুধবার অমিতবাবুর অনুপস্থিতিতেই কলেজের পরিচালন সমিতি বিষয়টি নিয়ে বৈঠক ডেকেছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, মারধরে মূল অভিযুক্ত টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সেই বৈঠকে কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। সে কথা অমিতবাবুর অজানা নয়। ঘটনার পরে এ দিন প্রথম কলেজে এসে নিগৃহীত শিক্ষক বলেন, “কলেজের টিচার ইন-চার্জ এসএমস করে ক্ষমা চাওয়া বিষয়টি জানান। তবে এ নিয়ে আমি কিছু বলব না। কারণ, ক্ষমা চাওয়ার সময় আমি ছিলাম না।” পরক্ষণেই অমিতবাবুর মন্তব্য, “দোষীদের শাস্তি চাই। চাই এই ঘটনায় যুক্ত ছাত্রদের কলেজ থেকে বহিষ্কার করুন কর্তৃপক্ষ।” টিচার ইন-চার্জ লক্ষ্মীকান্ত রায়ের কাছেও এ দিন এই শাস্তির দাবি জানান অমিতবাবু। লক্ষ্মীকান্তবাবু পরে বলেন, “দাবি নিয়ে কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠকে আলোচনা করব।”

এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ অমিতবাবু কলেজে আসেন। পরে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে পরিদর্শকের দায়িত্বও পালন করেন। এ দিন টিচার ইন-চার্জ লক্ষ্মীকান্তবাবুর সঙ্গে তাঁর এক প্রস্থ বাদানুবাদও হয়। অমিতবাবুর অভিযোগ, মঙ্গলবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মেজাজ হারান লক্ষ্মীকান্তবাবু। রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনি আর কতদিন ঘাটালে চাকরি করতে পারেন, আমিও দেখছি।’ এ দিন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমেও অমিতবাবুকে বলতে শোনা যায়, “টিচার ইন-চার্জ আমাকে ঘরে ডেকেছিলেন। আমি সব শিক্ষকদের সামনে কথা বলতে চাই। উনি তখন স্টাফ রুমের কাছে আসেন। চড়া সুরে জানতে চান, আমি কলেজে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি কিনা। আমি বলি, ভুগছি। কারণ, আপনি আমাকে নিরাপত্তা দিলে মঙ্গলবারের ওই ঘটনা ঘটত না।” অমিতবাবুর অভিযোগ, এরপরই লক্ষ্মীকান্তবাবু তাঁকে ঘাটালছাড়া করার হুমকি দেন। বলেন, ‘আপনার নিরাপত্তা আপনি সামলান। কিছু হয়ে গেলে দেখতে পারব না।’

লক্ষ্মীকান্তবাবুর দাবি, “আমি বলেছিলাম, ‘তুমি কি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছ? কলেজে এত শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। কীসের ভয়? তাহলে চাকরি করবে কী ভাবে?’ আমার এই বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে।” অমিতবাবুও পরে আনন্দবাজারের প্রতিবেদককে বলেন, “একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়। আলোচনায় তা মিটেছে।”

মারধরের ঘটনায় মঙ্গলবারই হেমন্ত ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন অমিতবাবু। তারপর তিন দিন কেটে গেলেও পুলিশ এখনও হেমন্ত দাসকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের বক্তব্য, হেমন্ত বাড়িতে নেই। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশ সূত্রের খবর, মারধর, কটূক্তি-সহ একাধিক জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। এ দিকে, হেমন্ত এখনও আগাম জামিনও নেননি। এ দিন জেলা কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল অমিতবাবুর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে। ছিলেন কংগ্রেস নেতা স্বপন দুবে, জগন্নাথ গোস্বামী এবং ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ghatal college tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE