প্রত্যয়ী। বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর। —নিজস্ব চিত্র।
প্রত্যাশা মতোই বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর নতুন দায়িত্ব নিয়েই ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের বার্তা দিলেন তিনি। চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিয়ে শুভেন্দুবাবু বলেন, “কৃষকদের প্রত্যাশা পূরণে এই ব্যাঙ্ক অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। ক্ষমতা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি-আমি নয়, আমরা-আমরা করতে হবে। এটাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।”
সোমবার সকালে মেদিনীপুর শহরে আসেন শুভেন্দুবাবু। তৃণমূল সূত্রে খবর, সকালে শহরের ফেডারেশন হলে বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের তৃণমূল-সমর্থিত নবনির্বাচিত ডিরেক্টরদের নিয়ে এক বৈঠক হয়। কার নাম কোন পদে প্রস্তাব করা হবে, তা এখানেই স্থির হয়। বৈঠকে ছিলেন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ। বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে দেখভাল করতে জেলা তৃণমূলের তরফে যে কমিটি গড়া হয়েছিল, তার কনভেনর ছিলেন প্রদ্যোৎবাবু। ঠিক ছিল, বেলা বারোটা নাগাদ নতুন পরিচালন সমিতি গঠনের বৈঠক হবে ব্যাঙ্কে। সেই মতো বারোটার আগেই ব্যাঙ্কে পৌঁছন ডিরেক্টররা। ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিষ্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি (এআরসিএস) তথা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার মদনমোহন ঘোষ, ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার আশিস মণ্ডল প্রমুখ। চেয়ারম্যান হন শুভেন্দুবাবু। ভাইস-চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ। সেক্রেটারি উত্তম দে। মধুসূদন গাঁতাইত, কমলেন্দু দাস এবং অম্বর রায় এই তিন ডিরেক্টরকে নিয়ে চেয়ারম্যান প্যানেলও গড়া হয়। শপথের পরে শুভেন্দুবাবু বলেন, “সমবায়ের যে সাত রঙা ভাবনা রয়েছে, সেই ভাবেই নতুন পরিচালন সমিতি চলবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কৃষি-নির্ভর জেলায় কৃষকদের প্রত্যাশা পূরণ, এ সবেই জোর দেওয়া হবে।” আর কর্মচারীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “আমি আগেও দু’টো ব্যাঙ্কের দায়িত্ব নিয়েছি। সেখানেও কর্মচারীদের দাবিদাওয়া রয়েছে। ন্যায্য দাবি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। তবে, ইনকিলাব-বন্দেমাতরম করার সুযোগ দিইনি।, আমরা কর্মচারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে কাজ করি। এখানেও তাই করব।”
এ দিন কর্মচারীরা নতুন চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টরদের পুষ্পস্তবক দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ডিরেক্টর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাম-সমর্থিত শিশির মহাপাত্র। সোমবারের বৈঠকে তিনি অবশ্য গরহাজির ছিলেন। দুপুরে ফোনে শিশিরবাবু বলেন, “শরীর খারাপ। তাই যেতে পারিনি।”
গত বছর ২ জুন এই ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। মনোনয়ন-পর্বও সম্পন্ন হয়। শেষমেশ অবশ্য রাজ্য সমবায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোট স্থগিত হয়ে যায়। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ দেয়, ১০ মার্চ নির্বাচন হবে। সেই মতো ওই দিন কেশপুরে নির্বাচন হয়। পরিচালন সমিতির ১২ জন (ডিরেক্টর) সদস্যের মধ্যে ৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে এক জন বাম-সমর্থিত। ৩ জন তৃণমূল-সমর্থিত। ১০ মার্চ বাকি বাকি ৮টি আসনে ভোটগ্রহন হয়। ৬টি আসনেই জেতেন তৃণমূল- সমর্থিতরা। শেষমেশ ভোট হওয়ায় এ দিন হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শুভেন্দুবাবু। তাঁর কথায়, “হাইকোর্টকে ধন্যবাদ। তারা ব্যাঙ্কে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সময়োচিত হস্তক্ষেপ করেছে।”
আগামী ৩১ মার্চ চলতি আর্থিক বছর শেষ হবে। তার আগে ৩০ মার্চ রবিবার ব্যাঙ্ক খুলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “দিনটা রবিবার। ছুটির দিন। তাও ৩০ তারিখ ব্যাঙ্ক খোলা রাখতে হবে। কর্মচারীদের অনুরোধ করব, সহযোগিতা করার জন্য। ব্যাঙ্ক খোলা থাকলে সমিতিগুলো তার কালেকশন জমা দিতে পারবে।” তাঁর কথায়, “মনে রাখবেন, এই ব্যাঙ্ক বটবৃক্ষের মত। ব্যাঙ্ক ভাল থাকলে আমরা ভাল থাকব। কৃষকেরা ভাল থাকবেন।”
দুই মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের মোট ৩৮ টি শাখা রয়েছে। জেলার কৃষি ক্ষেত্রে এই সমবায় ব্যাঙ্কের গুরুত্বও রয়েছে। সমস্ত শাখার আধিকারিকদের নিয়ে আগামী ৭ এপ্রিল মেদিনীপুরে এক বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে ব্যাঙ্কের কাজকর্মের পর্যালোচনা হবে। নতুন চেয়ারম্যান শুভেন্দুবাবুও বৈঠকে থাকবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy