রাতের অন্ধকারে জাতীয় সড়কে যাত্রীবাহী বাস উল্টে মৃত্যু হল পাঁচজনের। জখম আরও ২৮ জন যাত্রী। বুধবার রাত ১টা নাগাদ ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর গ্রামীণ থানার মাদপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশপুরের বাসিন্দা মিঠু বর (২২), মুর্শিদাবাদের খাজুরবোনার বাসিন্দা শেখ আজিবুর (৩৫), ওড়িশার সোরোর বাসিন্দা দিবাকর রাউত (৪৫) ও বিহারের দেবীবিহারের বাসিন্দা রাম স্বরূপ (২৪)-এর মৃত্যু হয়। জখম ২৯জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে ওড়িশার জগতবল্লভপুরের বাসিন্দা বাসের কন্ডাক্টর দিলীপকুমার মোহান্তি’র (৬০) মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের চালক পলাতক।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতা-কটক রুটের দোতলা ওই বাসটি বুধবার রাত ১১টা নাগাদ কলকাতার বাবুঘাট থেকে ওড়িশার কটকের উদ্দেশে ছাড়ে। কলকাতা-মুম্বই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার সময় রাত ১টা নাগাদ মাদপুরের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি উল্টে যায়। উল্টে গিয়ে বাসটি ২০ ফুট উঁচু থেকে রাস্তার পাশে শুকিয়ে যাওয়া একটি খালে পড়ে যায়। বাসটিকে উল্টে যেতে দেখে স্থানীয় দোকানদাররা ছুটে আসে। তারাই খড়্গপুর গ্রামীণ থানায় খবর দেয়। রাত দেড়টা নাগাদ পুলিশ এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে।
দুর্ঘটনার পরে বাসটি।
স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তার আলি, শেখ আরিফ বলেন, “রাতে বাড়িতে শুয়ে পড়েছিলাম। হঠাত্ বিকট একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম। তারপরই চিত্কার শুনে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলাম বাসের জখম যাত্রীরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তখন পুলিশ এসে গিয়েছে। ক্রেন দিয়ে বাসটা কিছুটা দাঁড় করিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু হয়।”
ক্রেন দিয়ে বাসটিকে দাঁড় করিয়ে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করতে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লেগে যায়। বাসের কন্ডাক্টর দিলীপ মোহান্তিকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই বাসে করেই কলকাতা থেকে স্ত্রী মিঠু বর ও এক বছরের মেয়েকে নিয়ে ওড়িশার কর্মস্থলে ফিরছিলেন গৌতম বর। দুর্ঘটনায় মিঠুদেবীর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম গৌতমবাবুও মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিত্সাধীন। তবে তাঁদের মেয়ে ছোট্ট নিশা সুস্থ রয়েছে। কলকাতার ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা মিঠুদেবীর দাদা বিমল প্রধান দুর্ঘটনার কথা শুনে বলেন, “কয়েকদিন আগেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় দেশের বাড়িতে বোন আর জামাই মেয়েকে নিয়ে এসেছিল। আমাদের সঙ্গেও দেখা হল। বোনের এরকম মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হল, ভাবতে পারছি না” খড়্গপুরের এসডিপিও অজিত সিংহ যাদব বলেন, “বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাওয়ায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন না, বাসটি খারাপ হয়েছিল তা মোটর ভেহিক্যালস দফতর পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে। বাস চালকের খোঁজ চলছে। দুর্ঘটনায় জখম ও মৃতদের পরিবারে খবর দেওয়া হয়েছে।” নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনায় জখম ও মৃতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
—নিজস্ব চিত্র।