Advertisement
E-Paper

খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি, পুরসভা হওয়ার পথে বেলদা

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল। অবশেষে পুরসভা হতে চলেছে বেলদা। নগরোন্নয়ন দফতর ইতিমধ্যেই খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ২৩টি মৌজার ৩০,৩৬২ জন বাসিন্দাকে নিয়ে তৈরি হবে নতুন পুরসভা। বেলদা জুড়ে এখন শুধুই উচ্ছ্বাস। গলি থেকে রাজপথ, চায়ের দোকান, বাজার সর্বত্র একই আলোচনা। সকলেই চাইছেন দ্রুত পুরসভার পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হোক বেলদাতে।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৫
সদা ব্যস্ত বেলদা স্টেশন। ফাইল চিত্র।

সদা ব্যস্ত বেলদা স্টেশন। ফাইল চিত্র।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল। অবশেষে পুরসভা হতে চলেছে বেলদা। নগরোন্নয়ন দফতর ইতিমধ্যেই খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ২৩টি মৌজার ৩০,৩৬২ জন বাসিন্দাকে নিয়ে তৈরি হবে নতুন পুরসভা। বেলদা জুড়ে এখন শুধুই উচ্ছ্বাস। গলি থেকে রাজপথ, চায়ের দোকান, বাজার সর্বত্র একই আলোচনা। সকলেই চাইছেন দ্রুত পুরসভার পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হোক বেলদাতে।

কিন্তু কাজ শুরু করব বললেই তো করা যায় না। নিয়ম মেনে কাজ শুরু করতে আরও কিছুটা দেরি। সবে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের এ নিয়ে কোনও মতামত থাকলে তাও জানাতে পারেন তাঁরা। তার জন্য তিন মাস সময়ও দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার যে কোনও মানুষের এ ব্যাপারে কোনও আপত্তি থাকলে তাঁরা জেলাশাসকের কাছে জানাতে পারবেন। সেই মতো জেলাশাসক জানাবেন নগরোন্নয়ন দফতরকে। তারপরই চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে শুরু হয়ে যাবে পুরসভা গঠনের কাজ। এ ব্যাপারে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “বিষয়টি সকলের গোচরে আনতে এলাকার সমস্ত জায়গায় বিজ্ঞপ্তির কপি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কারও কোনও মতামত থাকলে তিনি জানাতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেই নগরোন্নয়ন দফতর চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। তারপরই পুরসভা গঠনের কাজ শুরু হয়ে যাবে।”

বেলদাকে পুরসভা করার দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের দরজায় কড়া নেড়েছেন বেলদার বিভন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। যার মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা ছিল ব্যবসায়ীদের। ‘বেলদা ফেডারেশন অব ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’ প্রায় ১০ বছর ধরে বেলদাকে পুরসভা করার দাবিতে দরবার করেছেন সব মহলেই। কখনও তা নিয়ে নড়াচড়া হয়েছে, পরবর্তীকালে আবার তা চলে গিয়েছে ঠান্ডা ঘরে। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর ফের এই দাবিতে সোচ্চার হন বেলদাবাসী। বর্তমান শাসক দলের নেতারাও এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রীও বেলদাতে গিয়ে বেলদাকে পুরসভা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারপর শুরু হয়েছিল সমীক্ষাও। মাঝপথে আবার কিছুদিন এ নিয়ে কোনও উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না। বিশেষত, সকলেরই আশা ছিল গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই হয়তো বেলদাকে পুরসভা ঘোষণা করে দেওয়া হবে। তা না হওয়ায় কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন সকলেই। হঠাৎ বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় এবার খুশির জোয়ারে ভাসছেন বেলদাবাসী। বেলদা ব্যবসায়ী সংগঠনের সহকারী সম্পাদ রাজু চাণ্ডকের কথায়, “দশ বছর ধরে চেষ্টার পর এই সাফল্য এলো। ভাবতে পারবেন না, কী আনন্দ হচ্ছে। যার সঙ্গেই দেখা হোক, এখন সারাদিন সে কথাই আলোচনা হচ্ছে।”

পুরসভা হওয়ার দিকে বেলদা এক ধাপ এগোনোয় খুশি বেলদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুলেখা দে-ও। তাঁর কথায়, “ভাবতেই ভাল লাগছে যে, আমি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান থাকাকালীন এমন একটা সাফল্য মিলল। বেলদা শহর প্রতিদিনই বাড়ছে। এই শহরের উন্নয়ন পঞ্চায়েতের মাধ্যমে করা খুবই কঠিন। পুরসভা হলে উন্নয়নের গতি অনেক ত্বরান্বিত হবে।”

দ্রুত গতিতে বেলদা শহর বাড়ছে আড়ে-বহরে। ব্যবসায়িক দিক থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেলদার এক দিকে রয়েছে দাঁতন, অন্য দিকে কেশিয়াড়ি। এছাড়াও নারায়ণগড় ব্লক রয়েছে। এলাকায় রয়েছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলেজ, রেল স্টেশন, জাতীয় সড়ক। যত দিন যাচ্ছে দ্রুত শহর বাড়তে থাকায় শহর হয়ে যাচ্ছে ঘিঞ্জি। তাল মিলিয়ে উন্নয়ন করা দুরের কথা, যানজটের অতল অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিল এই শহর।

বেলদার মোট জনসংখ্যা ৩০৩৬২ জন। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২০০৫ জনের বসবাস। মোট জনসংখ্যার ৫৮.৯০ শতাংশ মানুষ চাকরি ও ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। বড় মাতকাতপুর, বেলদা, বিনোদপুর, হরগোবিন্দপুর, আকন্দা, কসবা আসন্দা, পলশা, হরিবাড়, বুধিচক, উত্তর ভেটিয়া, যাদবচক, মহম্মদপুর-১,২,৩, দেউলি, সুশিন্দা-১,১, ছোট মাতকাতপুর, মায়ানপাড়া, কুলি, বারবেলিয়া, পানিগাটিয়া, গাজনা - এই ২৩টি মৌজা নিয়ে হবে পুরসভা। আয়তন ১৯.৩৬ বর্গ কিলোমিটার।

পুরসভা তৈরির তোড়জোর শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত বেলদাবাসী। বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল শিট থেকে বেলদা কলেজের শিক্ষক তুহিন দাস - সকলেই বলেন, “আমাদের কাছে এটা ভীষণ সুসংবাদ। পুরসভা হলে শিক্ষা ক্ষেত্রেও যে অনেক কিছু সূযোগ সুবিধে মিলবে।” ব্যবসায়ী দুলাল দে-র কথায়, “এটা যে আমাদের কাছে কত বড় গর্বের বিষয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এর জন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ। বহু বছর ধরে এই দাবি জানিয়ে এসেছি। কিন্তু সফলতা মেলেনি। তাই বোধ হয় আনন্দটা একটু বেশিই হচ্ছে।” আর বেলদার বাসিন্দা তথা মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্ট বলেন, “আমরা বেলদাবাসীকে বারেবারেই বলেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী যখন কথা দিয়েছেন তখন বেলদা পুরসভা হবেই। দিদি তা করেও দেখিয়ে দিয়েছেন।”

২১ অক্টোবর জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিন মাস সময় পেরিয়ে গেলেই চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুরসভা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

suman ghosh belda station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy