Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্র-মৃত্যুর কিনারায় হিমসিম পুলিশ

এক স্কুলছাত্রের রহস্য-মৃত্যু ঘিরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে কেশপুরে। গত ২৯ জুন, রথের দিন কেশপুরের আনন্দপুর থানার অন্তর্গত নতুনবাজার এলাকায় সন্মুখ মণ্ডল নামে প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রের মৃত্যুর পর পরিজনেরা গোড়ায় থানায় অভিযোগও জানাননি। তাঁদের ধারণা ছিল, সর্পাঘাতে মৃত্যু হয়েছে সন্মুখের। সেই ধারণা খানখান হয়ে গিয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে। রিপোর্ট থেকে পুলিশ নিশ্চিত, ওই ছাত্রকে খুনই করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০১:১২
Share: Save:

এক স্কুলছাত্রের রহস্য-মৃত্যু ঘিরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে কেশপুরে। গত ২৯ জুন, রথের দিন কেশপুরের আনন্দপুর থানার অন্তর্গত নতুনবাজার এলাকায় সন্মুখ মণ্ডল নামে প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রের মৃত্যুর পর পরিজনেরা গোড়ায় থানায় অভিযোগও জানাননি। তাঁদের ধারণা ছিল, সর্পাঘাতে মৃত্যু হয়েছে সন্মুখের। সেই ধারণা খানখান হয়ে গিয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে। রিপোর্ট থেকে পুলিশ নিশ্চিত, ওই ছাত্রকে খুনই করা হয়েছে।

কে বা কারা খুন করল সন্মুখকে? কেনই বা খুন করল? এ সব প্রশ্নের জবাব পেতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ। ঠিক যেমনটি হয়েছিল দু’বছর আগে মেদিনীপুরে স্কুলছাত্র খুনের ঘটনায়। সেই ছাত্রকে ছুরি বা চপার জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছিল। আর কেশপুরের ছাত্রটিকে খুন করা হয়েছে গলা টিপে। মেদিনীপুরের ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “আনন্দপুরের ঘটনায় তদন্ত চলছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, কেশপুরের ঘটনায় পরিজন-সহ এলাকার ২০-২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনও সূত্র মেলেনি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক মানছেন, আনন্দপুরের ঘটনা মেদিনীপুরে ছাত্র খুনের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, “কিছু ঘটনা পুলিশকে বেশি ভাবায়। দুষ্কৃতীরা কোনও সূত্র ছেড়ে যায় না। কেশপুরের ঘটনাও তেমনই ।”

সাত বছরের সন্মুখ যে দিন খুন হয়েছে, সে দিন ছিল তার জন্মদিন। বিকেলে খেলতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি ওই ছাত্র। সন্ধের পরে পরিবারের লোকজন খোঁজ শুরু করেন। রাত ন’টা নাগাদ বাড়ি থেকে তিনশো মিটার দূরে এক শৌচাগারের কাছে সন্মুখকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তড়িঘড়ি তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়। তবে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন, ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গোড়ায় ঘটনার কথা থানায় জানাননি পরিবারের লোকজন। জানতে পেরে পুলিশই খোঁজখবর শুরু করে। পরে সন্মুখের বাবা গিরিধারী মণ্ডল আনন্দপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

কিন্তু কী ভাবে মৃত্যু হল ওই ছাত্রের? জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ঘটনাটি রহস্যে মোড়া। রথের দিন বিকেলে সন্মুখ বাবার কাছে ঠান্ডা পানীয় কেনার টাকা চেয়েছিল। বাবা টাকা দিলে সে ঠান্ডা পানীয় কিনে বাড়ি আসে। এরপর খেলতে বেরোয়। আর ফেরেনি।

২০১২ সালের ১১ মে এ ভাবেই এক ছাত্রের রহস্য-মৃত্যু হয়েছিল মেদিনীপুর শহরের বরিশাল কলোনিতে। দুপুরে বাড়িতে ঢুকে অভিষেক নাগ নামে বছর তেরোর এক কিশোরকে খুন করে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অভিষেক স্কুল থেকে ফিরে নিজের ঘরে শুয়েছিল। বিকেলে পরিবারের একজন ঘরে ঢুকে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছে অভিষেকের দেহ। জনবহুল এলাকায় বাড়িতে ঢুকে কী ভাবে দুষ্কৃতীরা খুন করে পালাল, তা নিয়ে শহরে তোলপাড় পড়ে যায়। তদন্তে পুলিশ কুকুর আনা হয়, আসে ফরেন্সিক দল। প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ থেকে পরিজন, পরিচিত, বন্ধুবান্ধবদের জিজ্ঞাসাবাদ, সবই করে পুলিশ। তবে আজ পর্যন্ত ওই খুনের কিনারা হয়নি। অভিষেকের সারা শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার হাতের শিরাও কাটা হয়। যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছিল, তদন্তে নেমে পুলিশ সেটিরও খোঁজ পায়নি।

কেশপুরের আনন্দপুরের ঘটনার ক্ষেত্রেও কোনও সূত্র পায়নি পুলিশ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “মেদিনীপুরের ঘটনার মতোই এখনও পর্যন্ত আনন্দপুরের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট কোনও সূত্র মেলেনি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের কাছে কিছু তথ্য মিলেছে। এটুকুই।” তবে সামান্য সূত্রও অনেক সময় বড় রহস্যের কিনারা করতে পারে। আপাতত তারই অপেক্ষায় পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore police investigation student death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE