Advertisement
E-Paper

জঙ্গলমহলে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মকুবের আর্জি মন্ত্রীকে

জঙ্গলমহল এলাকার গরিব মানুষদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মকুব করে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে চিঠি দিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। মঙ্গলবার জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বিদ্যুৎমন্ত্রীকে এই চিঠি দিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে পাঁচ বছরে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ প্রায় ২৯ কোটি টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৪ ০০:৫৭

জঙ্গলমহল এলাকার গরিব মানুষদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মকুব করে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে চিঠি দিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। মঙ্গলবার জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বিদ্যুৎমন্ত্রীকে এই চিঠি দিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে পাঁচ বছরে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ প্রায় ২৯ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, মাওবাদী-সমস্যার জেরেই বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া রয়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালের গোড়া থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের প্রভাব বাড়তে শুরু করে। খুন-হামলা-লুঠপাট হয়ে দাঁড়ায় রোজকার ঘটনা। সেই সময় বিস্তীর্ণ এলাকায় পুলিশ-প্রশাসনও কাজ করতে পারেনি। ফলে, একাংশ গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিল পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। তারপর থেকে গ্রাহকেরাও সেই বিল জমা দেননি। সাধারণত, বিদ্যুৎ বিল তিন মাসের বেশি বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে, জঙ্গলমহল এলাকার ক্ষেত্রে এই কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি।

বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, বকেয়া বিল আদায় নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন চলেছে। জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যস্তরেও বিস্তর আলোচনা হয়েছে। একবার ভাবা হয়েছিল, যে সব গ্রাহকের বিল দীর্ঘ দিন বকেয়া রয়েছে, তাঁদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। তবে রাজ্য সরকারের মনোভাব বুঝে এই ভাবনা আর কার্যকর করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চান না, এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হোক। এ দিকে, বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি গোটা পরিস্থিতির কথা জানিয়ে জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্যবাবুকে চিঠি দেন রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির ডিভিশনাল ম্যানেজার (ঝাড়গ্রাম) দেবব্রত বৈরাগী। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আর্জি জানান। তার জেরেই বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মকুবের আর্জি জানিয়ে মন্ত্রীকে চিঠি দিল জেলা পরিষদ।

জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্যবাবু বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখেই আমি বিদ্যুৎমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। আশা করি, মন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।” অমূল্যবাবু জানান, অনেক লোধা-শবর এবং আদিবাসী পরিবারের বিল বকেয়া রয়েছে। বিল মকুব করা হলে তাদের সুবিধাই হবে।” ২০১৫ সাল থেকে নতুন করে বিল তৈরি আর্জিও জানিয়েছে জেলা পরিষদ। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের অধীন ৬টি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার রয়েছে। ঝাড়গ্রাম, মানিকপাড়া, জামবনি, গোপীবল্লভপুর, বিনপুর এবং বেলপাহাড়ি। এই ৬টি সেন্টারের অধীনস্থ এলাকায় বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ২৮ কোটি ৬৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এই এলাকায় বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন ১ লক্ষ ৫৩ হাজার। এর মধ্যে বিল বকেয়া রয়েছে ৯৪ হাজার গ্রাহকের।

দীর্ঘদিন ধরে এই বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে পালাবদলের পর বহুবার এ নিয়ে জেলা এবং রাজ্যস্তরে আলোচনা হয়েছে। কী ভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনো সম্ভব, তা দেখা হয়েছে। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে একবার ভাবা হয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে যে সব গ্রাহক বিল বকেয়া রেখেছেন, তাঁদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। বকেয়া বিল পুরো মিটিয়ে দিলে তবেই সংযোগ দেওয়া হবে। অবশ্য রাজ্য সরকারের মনোভাব বুঝে পরবর্তী সময়ে এই ভাবনা আর কার্যকর করা হয়নি। এমনকী, কিস্তিতে বকেয়া মেটানোর আর্জিতেও তেমন সাড়া মেলেনি। এক বিদ্যুৎ-কর্তার কথায়, “৯৪ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ কাটাও কথার কথা নয়! সে ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা হতে পারে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চান না, এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হোক। বিদ্যুৎমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ লিখেছেন, ‘লোধা- শবর ও আদিবাসী পরিবারগুলোর বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা মাওবাদী সমস্যার সময় থেকেই তৈরি হয়। সম্মানীয় মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধ থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।”

এখন রাজ্য সরকার জঙ্গলমহলের ‘হাসি’ অটুট রাখতে তৎপর হয় কি না, সেটাই দেখার!

jangalmahal medinipur pending electricity bill manish gupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy