ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্কের সামনে সূর্যকান্ত মিশ্রের জনসভা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
জঙ্গলমহলে এসে মাওবাদী প্রসঙ্গ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি প্রশ্ন তুললেন, সত্যিই মাওবাদীরা ফের এলাকায় এলে লাঠিধারী সিভিক পুলিশেরা কী ভাবে মাওবাদীদের একে ৪৭-এর মোকাবিলা করবে!
শুক্রবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্কের সামনে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কের সমর্থনে আয়োজিত সিপিএমের এক নির্বাচনী জনসভার মূল বক্তা ছিলেন সূর্যবাবু। ওই সভায় সূর্যবাবু এ দিন আগাগোড়া চাঁছাছোলা ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। সূর্যবাবু বলেন, “জঙ্গলমহলে যদি শান্তিই ফিরেছে, তাহলে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এখন ঝাড়গ্রামে এলে এত বাড়তি নিরাপত্তার আয়োজন কেন? আগে তো উনি মোটর বাইকে চেপে চলে আসতেন। জঙ্গলমহল যদি হাসছে তাহলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তুলনায় বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে ষাট শতাংশ বেশি নিরাপত্তা নিয়ে আসতে হচ্ছে কেন?” সূর্যবাবুর কটাক্ষ, “আমাদের আমলে উনি যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন, তখন বলতেন, মাও-ফাও কিছু নেই। কিন্তু এখন জঙ্গলমহলে এলে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে দু’জন ‘ডামি’ থাকে। মানে উনি একজন, আর ওর মতো দেখতে আরও দু’জন। যাতে কেউ বুঝতে না পারে কোনজন আসল মুখ্যমন্ত্রী। আপনি এসব কেন করছেন, সব যদি ঠিক থাকে? বাম আমলে বুদ্ধবাবুকে কিন্তু নকল বুদ্ধদেব নিয়ে জঙ্গলমহলে আসতে হয়নি।”
মাওবাদী-তৃণমূল সংশ্রবের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রাক্তন মাওবাদী নেত্রী সুচিত্রা মাহাতোর নাম না-করে সূর্যবাবু বলেন, “শালবনিতে বুদ্ধবাবুর কনভয়ে যিনি মাইন ফাটিয়েছিলেন, যিনি শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে জওয়ানদের খুন করেছিলেন, গত লোকসভা ভোটের দিনে মাইন ফাটিয়ে ভোটকর্মীদের খুন করেছিলেন, সেই মাওবাদী নেত্রী এখন তৃণমূলের কোতুলপুর ব্লক সভাপতিকে বিয়ে করেছেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে তৃণমূল-মাওবাদী পোষাক পরে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন। এত খুন-নাশকতার আসামীকে এখন সামনে ও পিছনে পুলিশ পাহারা দেওয়া হয়েছে।” এরপরই সূর্যবাবুর প্রশ্ন, “সত্যিকারের মাওবাদীরা এলে কী করবেন? একটা লাঠি আর পোষাক দিয়ে সিভিক পুলিশ, গ্রিন পুলিশ হয়ে গেল! মাওবাদীদের একে ৪৭-এর মোকাবিলা কীভাবে করবে লাঠিধারী সিভিক পুলিশ?” সারদা-কাণ্ড নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে এক হাত নিয়ে সূর্যবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এখন কী রকম নার্ভাস হয়ে গেছেন। কথায় কথায় রেগে যাচ্ছেন। টাকা শুধু বামপন্থীদের লুঠ হয় নি। কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকেরাও সারদায় টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ইডির তদন্তে শুধু কানটা ছুঁয়েছে, এবার কানটা ধরে টানলেই আসল মাথাটা আসবে। আসল মাথা কে সেটা বুঝতে কী খুব অসুবিধা হচ্ছে?”
জঙ্গলমহলে উন্নয়ন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সূর্যবাবু। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “উন্নয়ন হচ্ছে কই। ঝাড়গ্রাম জেলা হল কই? ঝাড়গ্রাম হাসপাতালকে জেলা হাসপাতাল করলেন, পরিকাঠামো আরও বেহাল হয়েছে। জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রী যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার কিছুই হয় নি। কিছু ভবনের বরাত পেয়েছে ঠিকাদারেরা। আর বাদবাকি পুরনো গুলোকেই নীল সাদা রং করে নতুন বলে চালানো হচ্ছে।” সূর্যবাবুর কটাক্ষ, “নকল গয়ানার রং দু’তিন বছরেই উঠে গিয়ে আসল কালো রংটা বেরিয়ে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নকলি গয়না পরেছেন তিন বছরের মধ্যেই তার রং উঠে কালো রংটা বেরিয়ে পড়েছে।” এ দিন সূর্যবাবু কংগ্রেস ও বিজেপিকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। সভায় ছিলেন সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন, সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে, দলের জেলা কমিটির সদস্য প্রদীপ সরকার এবং জেলা বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির নেতারা।
বেলদায় সভাতেও রাজ্য সরকারকে কড়া আক্রমণ করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এটা উনি পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে পারবেন না। তা তিনি এই দু’দফার ভোট থেকে উনি তা বুঝে গিয়েছেন।” কটাক্ষ করে বলেন, “নিজে বক্তৃতা করলে লোক আসবে সেই অবস্থা এখন নেই। স্টার-সুপারস্টার ছাড়া সভা জমছে না!”
মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের নাম না করে বলেন, “এখনই কেউ বলছেন আমি রোদে ঘুরতে পারব না। আগামী দিনে কি হবে কী জানি!” পরে ফের বলেন, “মুকুলবাবুরা কী ভাবে পার্টি চালাচ্ছেন! নেতানেত্রীদের উপরে ভরসা নেই। সিনেমা জগতের লোকেদের নিয়ে আসতে হচ্ছে।”
সারদা-কাণ্ডে ইডির তদন্ত প্রসঙ্গে বলেন, “ইডিকে ব্যাঙ্কের লকার খুলতে দেওয়া হল না কেন? যারা অপরাধী তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।” সারদা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে সুবিচার মিলবে বলেও তিনি সভায় আশাপ্রকাশ করেন। লোকসভার ফল নিয়ে তিনি বলেন, “আমি ইতিমধ্যে ১২টি জেলা ঘুরেছি। আগামী দু’চার দিনে আরও তিনটি জেলা ঘুরব। এই সব জেলায় তৃণমূল পাঁচটি আসনও বের করতে পারবে কি না বলা কঠিন।” এ দিনের সভায় সূর্যবাবু ছাড়াও ছিলেন মেদিনীপুরের বামপ্রার্থী প্রবোধ পণ্ডা প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy