নিকাশি প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা। ছবি: সোহম গুহ।
কাজ করেও টাকা না পেয়ে দিঘায় আইসিজেডএম (সুংসহত উপকূল অঞ্চল উন্নয়ন) প্রকল্পের নিকাশি তৈরির কাজ মাঝপথে বন্ধ করে দিল দায়িত্বপ্রাপ্ত নিমার্ণকারী সংস্থা। সুপ্রিম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে ওই নির্মাণকারী সংস্থার সিনিয়র প্রোজেক্ট ম্যানেজার সঞ্জয় চক্রবর্তীর কথায়, “বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ৩ কোটি ৮২ লক্ষ ৭ হাজার ৩০০ টাকার বিল বাকি পড়ে রয়েছে। বাধ্য হয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।” সঞ্জয়বাবুর আরও অভিযোগ, দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদকে বকেয়া বিল মেটানোর জন্য একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পর্ষদের পক্ষ থেকে সদর্থক কোনও উত্তর মেলেনি। দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক সুজন দত্ত বিষয়টি কথা স্বীকার করলেও কেন এমন সিদ্ধান্ত সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রায় ৬৫ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যে আইসিজেডএম প্রকল্পে দিঘায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। অন্যান্য প্রকল্পগুলির সঙ্গে দিঘায় পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা উন্নত করতে একটি নিকাশি তৈরির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০০৮ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে এর জন্য ১৪ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ ‘আই উইন’ নামে একটি কারিগরী সংস্থার সাহায্য নিয়ে একটি পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি করে। কিন্তু ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাঙ্ক প্রকল্পটির জন্য আর্থিক বরাদ্দ, ২০১১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ কোটি টাকার উপরে। প্রকল্পটি হাতে পেয়ে এসপিএমইউ তা রূপায়িত করতে টেন্ডার ডাকে। এরপর ৪১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৬৬ হাজার ৭৮২ টাকার টেন্ডারের মাধ্যমে সুপ্রিম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে কলকাতার একটি সংস্থা কাজটির বরাত পায়।
নির্মাণকারী সংস্থা সুপ্রিম ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানি সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে অর্থাত্ দু’বছরে নির্মাণকাজটি শেষ করার কথা ছিল। ৩৯ কিলোমিটারের মধ্যে ‘আই উইন’-এর পর্যবেক্ষণে ২০১৩-র জানুয়ারি থেকে ২০১৪-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউ ও ওল্ড দিঘা মিলিয়ে ২০ কিলোমিটারের কাজ হয়। খরচ পড়ে ১৮ কোটি ৪৩ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। এরপর দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ১৪ কোটি ৬১ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৩ কোটি ৮২ লক্ষ ৭ হাজার ৩০০ টাকার বিল মেটানো হয়নি বলে অভিযোগ। দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই সংস্থার দাবি, বকেয়া টাকা না মেলাতেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু কাজ করার পরও টাকা না পাওয়ার কারণ কী?
জানা গিয়েছে, অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ মেলেনি। তাই এমন সমস্যা। যদিও রাজ্যের আইসিজেডএম প্রজেক্ট রূপায়ণকারী স্টেট প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের (এসপিএমইউ) পক্ষ থেকে প্রকল্পের বাড়তি টাকা অনুমোদনের জন্য ন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট বা এনপিএমইউ-র কাছে পাঠানো হয় বলে খবর। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই দফতরের আধিকারিকদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে সেই অনুমোদন বা বাড়তি টাকা কোনওটাই রাজ্যের হাতে আসেনি বলে জানা গিয়েছে।
এ দিকে নিকাশি কাজের জন্য যেভাবে রাস্তা খোঁড়া হয়েছে, তার জন্য গোটা দিঘা শহরের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে চলাচলে সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা। নিউ দিঘা প্লট হোল্ডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিখিল সামন্ত বলেন, “গত দু’বছর ধরে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মাটি খুঁড়ে বারোটা বাজিয়েছে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কবে যে রাস্তা সারবে জানি না।” শুধু রাস্তাঘাট নয়, নিকাশি তৈরির জন্য মাটি কাটায় নিউ দিঘার এন টু সেক্টরে বেশ কয়েকটি পানীয় জলের লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পদিমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েচের তৃণমূল প্রধান মণীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, “সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy