Advertisement
E-Paper

তেরোয় গেরো, রথ থামল ‘বুড়ো ঘোড়া’র

তবে কি ‘বুড়ো ঘোড়া’য় বাজি রাখা হয়ে গিয়েছিল, রেলশহরে ইন্দ্রপতনের পর এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে কংগ্রেসের অন্দরমহলে।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:৩৫
পরাজয়ের খবর পাওয়ার পর চাচা। খড়্গপুরে।

পরাজয়ের খবর পাওয়ার পর চাচা। খড়্গপুরে।

তবে কি ‘বুড়ো ঘোড়া’য় বাজি রাখা হয়ে গিয়েছিল, রেলশহরে ইন্দ্রপতনের পর এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে কংগ্রেসের অন্দরমহলে।

বারো বারের কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পাল রেলশহরে চাচা নামেই পরিচিত। জন্মসূত্রে খড়্গপুরের বাসিন্দা চাচার সঙ্গে যেন শহরের বাসিন্দার নাড়ির টান। যদিও এ বার খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে দল তাঁকে প্রার্থী করায় কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ ছিলই। দলের অন্দরে প্রার্থী বদলের দাবিতেও সরব হন অনেকে। যদিও রেলশহরে গড় রক্ষায় চাচার উপরই ভরসা রেখেছিল দল। সেটাই ব্যুমেরাং হল কি না, তা নিয়ে সংশয়ে দলের নেতারা।

চাচার পরাজয়ে অনেকে আবার বলছেন, ‘‘তেরো অশুভ সংখ্যা বলে অনেকে মানেন। আর তেরোর গেরোয় চাচারও বিজয়রথ থমকে গেল।’’ বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার সময়ে ঝাপেটাপুর কংগ্রেস পার্টি অফিসে চাচার পাশেই বসেছিলেন সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল। তিনিও বলছিলেন, “চাচার বয়সটাই ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে গেল। কংগ্রেসেও অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা ছিল। তবে আমরা চাচাকে জেতাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলাম।” কংগ্রেসের এক সূত্রে খবর, দলের অন্দরে এই আশঙ্কাও ঘোরাফেরা করছে, তাহলে কী বামেদের পুরো ভোট চাচা পাননি। যদিও বামেদের দাবি, তাদের ভোটের পুরোটাই কংগ্রেসের দিকে গিয়েছে। আসলে বিজেপি ও তৃণমূলের আঁতাত হওয়ায় ভোটের ফল বিপক্ষে গিয়েছে।

খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারি তৃতীয় স্থান পেয়েছেন। খড়্গপুর রেল এলাকার সবক’টি ওয়ার্ডেই ‘লিড’ পেয়েছে বিজেপি। এমনকী তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর দেবাশিস চৌধুরী ও খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের ওয়ার্ডেও এগিয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ।

তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, বহিরাগত রমাপ্রসাদ তিওয়ারিকে খড়্গপুরে প্রার্থী করায় দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। ভোটের দিন অনেকেই দলের প্রার্থীর হয়ে কাজ করেননি বলে মনে করছে দলের নেতারা। দলের ভোট বিপক্ষে যাওয়ার কথা স্বীকার করছেন তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্ট তথা পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারও। তিনি বলেন, “এ কথা মানতেই হবে কিছু অংশে আমাদের ভোট বিজেপির দিকে গিয়েছে। কারণ তা না হলে আমাদের ফল ভাল হত।” খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলছেন, “তৃণমূলের ভোট বিজেপির দিকে না গেলে আমরা জয়ী হতাম।”

১৯৬২ সালে প্রথম বার খড়্গপুর আসন থেকে জয়ী হন চাচা। ১৯৬৭ সালে পরাজিত হন তিনি। ফের ১৯৭১ সালে চাচা জয়ী হন। সে বার তিনি কারামন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে বামেদের কাছে পরাজিত হন ইন্দিরা গাঁধীর আস্থাভাজন জ্ঞানসিংহ সোহনপালকে। তারপর ১৯৮২ সাল থেকে যাত্রা শুরু। একবারের জন্যও ধাক্কা খায়নি চাচার বিজয়রথ। ২০০১, ২০০৬ ও ২০১১ সালে প্রোটেম স্পিকারের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। এ বারও নবতিপর চাচার উপরই আস্থা রেখেছিল দল। যদিও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের কাছে ৬,৩০৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন চাচা।

এ দিন জয়ের পর বিজেপি প্রার্থী দিলীপবাবু বলেন, “চাচাকে শ্রদ্ধা করে এতদিন মানুষ ভোট দিতেন। কিন্তু চাচার বয়স হয়েছে। শহরের উন্নয়ন হচ্ছিল না। তাই আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম।” এর পরেই তাঁর সংযোজন, “নরেন্দ্র মোদী, সুরেশ প্রভু থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই খড়্গপুরে প্রচার করে গিয়েছেন। আমি কাউকে হারাতে নয়, নিজে জয়ী হতে এসেছিলাম। মানুষ আমায়
ভোট দিয়েছেন।”

দিলীপবাবু আরও বলছেন, ‘‘আমরা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছিলাম। মানুষ এ সব গুণ্ডামি পছন্দ করে না। আগামীদিনেও এর বিরুদ্ধে আমার লড়াই চলবে।’’ জয়ী বিজেপি প্রার্থীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে মতাদর্শগত লড়াই থাকতে পারে। তবে রেলশহরের উন্নয়নের জন্য যা করণীয় তাই করব।” এ দিন চাচা বলছেন, “সবকিছু পর্যালোচনা করে পরে কথা বলব।”

(ছবি: রামপ্রসাদ সাউ)

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy