Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দুই মেদিনীপুরেই কলেজে ভর্তি অনলাইনে

কলেজে গিয়ে ফর্ম তোলার লাইনে দাঁড়ানো, ফর্ম তোলা এবং পরে তা পূরণ করে জমা দেওয়া। এই ঝক্কির দিন শেষ হতে চলেছে। এ বার অনলাইনেই কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া চলবে। অনলাইনে ফর্ম পূরণ করা যাবে। নির্দিষ্ট ফি-জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। পরে বাছাইয়ের মাধ্যমে কলেজে ভর্তি হতে হবে।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

কলেজে গিয়ে ফর্ম তোলার লাইনে দাঁড়ানো, ফর্ম তোলা এবং পরে তা পূরণ করে জমা দেওয়া। এই ঝক্কির দিন শেষ হতে চলেছে। এ বার অনলাইনেই কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া চলবে। অনলাইনে ফর্ম পূরণ করা যাবে। নির্দিষ্ট ফি-জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। পরে বাছাইয়ের মাধ্যমে কলেজে ভর্তি হতে হবে।

ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই প্রক্রিয়া চালু হতে চলেছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোলেই ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বৈঠকও হয়েছে। উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী, রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী, কলেজ সমূহের পরিদর্শক বিনয় চন্দের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর অধ্যক্ষরাও ওই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়স্তরে একটি সেন্ট্রাল অনলাইন কমিটিও গঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “এ বার অনলাইনে কলেজে ভর্তি-প্রক্রিয়া চলবে। এ জন্য সমস্ত পদক্ষেপই করা হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, একজন পড়ুয়া যে কোনও ১০টি কলেজে ভর্তির আবেদন করতে পারেন। এর বেশি নয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য পৃথক বিষয় থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। যেমন একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রী ফিজিক্স অনার্সে পড়তে চেয়ে ৩টি কলেজে আবেদন করতে পারে। ম্যাথমেটিক্স অনার্সে পড়তে চেয়ে ৩টি কলেজে আবেদন করতে পারে। আবার ফিজিক্স অনার্সে পড়তে চেয়েও ৪টি কলেজে আবেদন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের কথায়, “একজন ১০টির বেশি কলেজে আবেদন করতে পারবে না। পরে মেধা-তালিকা বেরোবে। সেই তালিকা ধরে সিলেকশনের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া চলবে।”

অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া চালুর ফলে ভর্তি-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। কারণ, তা শুরু পর থেকেই বিভিন্ন কলেজে নানা অভিযোগ ওঠে। এটাই দস্তুর। কোথাও মেধা- তালিকার বাইরে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করা হয় বলেও অভিযোগ। কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি অভিযোগ ওঠে মূলত শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সরব হতে দেখা যায় বিরোধী সংগঠনগুলোকে। অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া চালু হলে এমন অভিযোগ ওঠার সম্ভাবনা কমে যাবে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ৪৩টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৫টি, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৮টি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে সবক’টি কলেজে অনলাইন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কলেজগুলোতে হেল্প- ডক্স চালু করা হবে। কী ভাবে অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া চলবে, তা হেল্প-ডেক্স থেকেই জানতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা। দুই মেদিনীপুরের ১০টি কলেজকে নোডাল সেন্টার করা হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে রয়েছে ৫টি কলেজ। ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ, শিলদা কলেজ, গড়বেতা কলেজ, ঘাটাল কলেজ এবং দাঁতন কলেজ। অন্য দিকে, পূর্ব মেদিনীপুরে রয়েছে ৫টি কলেজ। কাঁথি কলেজ, বাজকুল কলেজ, পাঁশকুড়া কলেজ, মহিষাদল কলেজ এবং এগরা কলেজ।

অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ফি-ও নির্দিষ্ট হয়েছে, ২৫০ টাকা। আগে ফর্মের টাকা কলেজের কোষাগারেই জমা পড়ত। রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ যে টাকা সংগৃহিত হবে, তার কী হবে? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, রেজিস্ট্রেশন ফি’র ৩৫ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা পড়বে। বাকি ৬৫ শতাংশ টাকা কলেজের কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া চালুর পদক্ষেপের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সকলেই। তবে একাধিক সংগঠনের বক্তব্য, আগের প্রক্রিয়াও চালু রাখা জরুরি। কলেজের কাউন্টার থেকে ভর্তির ফর্ম দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করা অনুচিত। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করার দাবি আমরা দীর্ঘ দিন থেকেই জানিয়ে আসছি। আমরা চাই, মেধার ভিত্তিতে কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হোক। অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চললে স্বচ্ছতা থাকবে। আমরা এটাই আশা করি।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা খুব তিক্ত। গত বছরও বেশ কিছু কলেজে ভর্তি নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। মেধা-তালিকার বাইরে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করানো হয়েছে। যারা শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, মেধা-তালিকায় নাম না-থাকলেও তাদের ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে, মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হয়েছে।” সৌগতর দাবি, “আমরাও দীর্ঘ দিন ধরে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। কারণ, এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির সুযোগ কম। আমরা চাই, ভর্তি প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে হোক।”

তবে, অনলাইনের পাশাপাশি কলেজের কাউন্টার থেকেও যাতে ফর্ম দেওয়া হয়, সেই দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিতে চলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “কলেজকে ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে একেবারে দূরে সরিয়ে রাখা ঠিক হবে না। অনলাইনে ফর্ম দেওয়া হোক। পাশাপাশি, কলেজের কাউন্টার থেকেও ফর্ম দেওয়া হোক। দু’টো প্রক্রিয়া চালু রাখার দাবি জানিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিচ্ছি।” একই দাবি জানিয়েছে ডিএসও। সংগঠনের জেলা সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়েক বলেন, “আমরা অনলাইনের বিরোধিতা করছি না। তবে কলেজের কাউন্টার থেকেও যাতে ছাত্রছাত্রীরা ফর্ম তুলতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্য অভিসন্ধি থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে ডিএসও। সংগঠনের জেলা সম্পাদকের কথায়, “অনেক সময় ভর্তি ফি বাড়লে কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত করে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। কলেজের কাউন্টার থেকে ফর্ম দেওয়া না-হলে ক্যাম্পাসের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত করার সুযোগও থাকে না। ফলে, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তই সকলকে মেনে নিতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

online admission colleges
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE