Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দলে ফেরান বিক্ষুব্ধদেরও, সভায় বার্তা শুভেন্দু’র

পঞ্চায়েতের ভুল, লোকসভায় নয়— বুধবার বিকেলে তমলুকের নিমতৌড়িতে লোকসভার প্রচার কৌশল নিয়ে আয়োজিত দলীয় সভায় এই বার্তাই দিলেন তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।

তমলুকের নিমতৌড়িতে শুভেন্দু অধিকারীর কর্মিসভা।

তমলুকের নিমতৌড়িতে শুভেন্দু অধিকারীর কর্মিসভা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০১:০৭
Share: Save:

পঞ্চায়েতের ভুল, লোকসভায় নয়— বুধবার বিকেলে তমলুকের নিমতৌড়িতে লোকসভার প্রচার কৌশল নিয়ে আয়োজিত দলীয় সভায় এই বার্তাই দিলেন তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।

সভায় স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, “নির্বাচনী প্রচারে দলের স্থানীয় নেতাদের সব্বাইকে ডাকতে হবে। কোনও নেতাকে বাদ দেওয়া চলবে না। এটা ঘর গোছানোর সময়।” তাঁর কথায়, “আমরা খারাপ ব্যবহার করেছি বলেই তো কেউ কেউ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমরা ভুল লোককে প্রার্থী করেছিলাম বলে নির্দল প্রার্থী হয়ে কেউ ভোট কেটে নিয়েছেন। ভুলটা আমাদেরই।” এই ‘বিক্ষুব্ধ’রাই ২০০৯ কিংবা ’১১ সালে বুক চিতিয়ে লড়ে দলকে লোকসভা, বিধানসভা ভোটে জিতিয়েছেন এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। সভায় তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ‘যাঁরা নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন বা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের ফের ফিরিয়ে আনতে হবে।’

শুভেন্দু’র এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক মহলের মত। এ দিনের সভায় এই বার্তা তিনি তমলুক লোকসভা নির্বাচনী এলাকার মধ্যে থাকা দলের পঞ্চায়েত প্রধান, উপ-প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সদস্য, অঞ্চল, ব্লক সভাপতি ও বিধায়কদের কাছে পৌঁছে দেন। উদাহরণ টানেন হলদিয়ার সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতির। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২৪টি তে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। হাতছাড়া হয়েছিল কেবল সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি। সেখানে হারের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “সুতাহাটায় দলের ও দলের বিক্ষুব্ধদের মোট ভোট সিপিএমের চেয়ে বেশি ছিল। তা সত্বেও ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় আমাদের হার হয়েছে। এর পুনরাবৃত্তি আটকাতে হবে।” তাঁর বার্তা, “যাঁরা পঞ্চায়েত ভোটের সময় আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে ডাকতে হবে। তাঁদের যাঁরা আমাদের হয়ে প্রচারে নামতে চান, তাঁদের যুক্ত করতে হবে।” ইতিমধ্যেই অবশ্য বেশ কিছু নির্দল তৃণমূলে ফিরেছেন।

সভায় শুভেন্দু সাংসদ হিসেবে এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচ ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের কাজের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন। কটাক্ষ করেন তাঁর তমলুক নির্বাচনী কেন্দ্রের আগের সাংসদদেরও। শুভেন্দু’র কথায়, “১৯৮০ সাল থেকে তমলুকের সাংসদ হিসেবে ২৬ বছর ধরে ছিলেন সত্যগোপাল মিশ্র ও লক্ষ্মণ শেঠ। মাঝে আড়াই বছর ছিলেন কংগ্রেসের জয়ন্ত ভট্টাচার্য। তারা সবাই মিলে এই সময়ে যে কাজ করেছেন, আর গত ৫ বছরে সাংসদ হিসেবে আমি যে কাজ করেছি তাতে টক্কর নিতে রাজি আছি।” পরিসংখ্যান দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ও পুরসভার নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে তমলুক লোকসভা এলাকায় আমরা একক ভাবে ১ লক্ষ ১২ হাজার ৮০০ ভোটে এগিয়ে আছি। ইতিমধ্যে অনেক নতুন ভোটার হয়েছে। এঁদের সিংহ ভাগ আমাদের সমর্থন করবেন বলেই আশা করছি।” ইতিমধ্যেই তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি ব্লকে ব্লক কর্মিসভা করে ভোট প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। এ দিনের সভায় তমলুকের বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহা-সহ অন্য বিধায়করা উপস্থিত ছিলেন।

এ দিকে প্রচার জারি রেখেছেন শুভেন্দু’র প্রতিপক্ষ তথা তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলি। সিপিএমের এই তরুণ প্রার্থী বুধবার নন্দকুমারের শ্রীধরপুর, হাঁসগেড়িয়া, লৌহজঙ্গ, পরমহংসপুর প্রভৃতি গ্রামে গিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালান। তিনি রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আমলে নারী নির্যাতন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে প্রচার করেন। প্রচারের ফাঁকে ইব্রাহিম বলেন, “রাজ্যের মানুষের কাছে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে পরিবর্তন আনার পর গত তিন বছরে তাঁদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ ফের পরিবর্তন চাইছেন। প্রচারে নেমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে সাড়া পেয়েছি, তাতে আমি আশাবাদী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subhendu adhikari nimtouri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE