Advertisement
E-Paper

নেই নলকূপ, পানীয় হিসেবে ভরসা পুকুরের জল

ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার। জাঁকজমকময় পদযাত্রা। রাজ্য ও জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগে ৭-১২ জুলাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার স্কুলগুলিতে মহাসমারোহে নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ পালন করা হল। ২০১৭ সালের মধ্যে নির্মল পশ্চিমবঙ্গ গড়ার লক্ষে প্রতি বছরই অনেক অর্থ খরচ করে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৪
শোভাযাত্রাই সার। ফেরেনি সচেতনতা। —নিজস্ব চিত্র।

শোভাযাত্রাই সার। ফেরেনি সচেতনতা। —নিজস্ব চিত্র।

ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার। জাঁকজমকময় পদযাত্রা।

রাজ্য ও জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগে ৭-১২ জুলাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার স্কুলগুলিতে মহাসমারোহে নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ পালন করা হল। ২০১৭ সালের মধ্যে নির্মল পশ্চিমবঙ্গ গড়ার লক্ষে প্রতি বছরই অনেক অর্থ খরচ করে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মূলত নিরাপদ স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষেই এই কমর্সূচি পালিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, জেলার যে সমস্ত এলাকায় এখনও পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। জলের জন্য যে সমস্ত এলাকার মানুষের ভরসা এখনও পুকুরের জল। এলাকার স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই কর্মসূচি কতটা কার্যকরী হচ্ছে।

নির্মল বিদ্যালয় উদ্যাপন সপ্তাহে কাঁথি উত্তর চক্রের বহিত্রকুণ্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলামপুর পুকুরপাড় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে নিরাপদ জল পান এখনও স্বপ্নের মতো। প্রতিটি স্কুলে বর্তমানে পানীয় জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে চিত্রটা ঠিক উল্টো। শুধু এই দু’টি স্কুল নয়। এই এলাকার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনও পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। পানীয় জলের জন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়াদের একমাত্র ভরসা পুকুরের জল।

চলতি বছরের ১৬-২১ জুন পর্যন্ত সময়ে প্রথমে নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ পালন করার নির্দেশ ছিল। কিন্তু ওই সময় অতিরিক্ত গরমের কারণে স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। তাই তার পরিবর্তে ৭-১২ জুলাই সারা রাজ্যের মতো জেলার বিভিন্ন স্কুলেও এই সপ্তাহ উদ্যাপন করা হয়। সপ্তাহ ব্যাপী পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরে পদযাত্রা, সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আলোচনা চক্র, নিরাপদ স্বাস্থ্য বিধান সম্পর্কে গান, শিশু সংসদের পুনর্গঠন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে উন্নত স্বাস্থ্যাভ্যাস নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি-সহ একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহে স্কুলছুট পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে স্কুলে ভর্তি করা, শৌচাগারহীন বাড়ি চিহ্নিত করারও নির্দেশিকা দেওয়া হয়। প্রশাসনিক নির্দেশে নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহে যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে কঠিন ও তরল বর্জ্য ফেলার জন্য জনসচেতনতা বাড়ানো, এমনকী যে সমস্ত স্কুল ও গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই, সেখানে পানীয় জলের উৎস সম্পর্কে সমীক্ষা করার কর্মসূচি নেওয়ার কথাও বলা হয়।

তবে সর্বত্র পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পুকুরের জল ব্যবহার করেই চলে মিড-ডে মিলের রান্না। আর ওই রান্না খেয়ে পড়ুয়ারা প্রায়ই পেটের অসুখে ভোগে। তাই বহিত্রকুণ্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিলা মাইতি, শুভম মহাপাত্র, বর্ষা মণ্ডল ও কৃষ্ণেন্দু বারিকদের প্রশ্ন, “আমাদের তো সারা বছর বাড়িতে ও স্কুলে পুকুরের জল খেতে হয়। আমরা নিরাপদ পানীয় জল কিভাবে পাবো?” ছাত্রছাত্রীদের এই প্রশ্নের উত্তরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঝাড়েশ্বর বেরা জানান, শুধু বহিত্রকুণ্ডা নয়, কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও এই একই সমস্যায় ভুগছে। বিলাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, যশাবিসা প্রাথমিক বিদ্যালয়-সহ ১৯টি স্কুলে পুকুরের জল দিয়েই মিড-ডে মিলের রান্না চলে। তিনি আরও বলেন, “সর্বশিক্ষা মিশনের এই নির্দেশিকা মেনে গত সপ্তাহ ব্যাপী নির্মল বিদ্যালয় কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে কুসুমপুর অঞ্চলের অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলিতেই যেখানে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই, সেখানে ছাত্রছাত্রীরা নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহে পরিস্রুত জল পান নিয়ে অন্যদের সচেতনতা কীভাবে বৃদ্ধি করবে?

বহিত্রকুণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু বারিক, কৃষ্ণা পণ্ডা ও গৌরি শীটের কথায়, “কাঁথি ৩ ব্লকের কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ ব্লকের বেশ কয়েকটি অঞ্চল ‘নন টিউবওয়েল জোন’ বলে চিহ্নিত। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উদ্যোগে তৈরি পানীয় জলের টাইম কল ওই সব এলাকার কয়েকটি জায়গায় রয়েছে। তবে কলগুলিতে প্রায়ই জল আসে না। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে জলের গাড়ি এনে গ্রামবাসীদের জল সরবরাহ করা হয়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অল্প। তাই বাধ্য হয়ে এলাকার বাসিন্দাদের পুকুরের জলই ব্যবহার করতে হয়। ওই সমস্ত এলাকায় পানীয় জলের সমস্যার কথা স্বীকার করে কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ জানান, ইতিমধ্যেই সমস্যাগ্রস্ত এলাকাগুলিতে গ্রামীণ পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। উত্তর কাঁথির বিধায়ক বনশ্রী মাইতি বলেন, “কুসুমপুর-সহ উত্তর কাঁথির বিভিন্ন অঞ্চলে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এই এলাকাগুলি মূলত ‘নন টিউবওয়েল এলাকা’ বলেই পরিচিত। ওই সমস্ত এলাকায় জলের সমস্যা মেটাতে ব্লক ও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এলাকার বড় পুকুরগুলি সংস্কার করা হচ্ছে। ওই পুকুরের জল পরিস্রুত করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।”

no borewell use of pond's water subrata guha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy