কেশিয়াড়ির কুলবনিতে বিজেপির প্রতিনিধি দল। নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে সাফল্যের পর সংগঠন বৃদ্ধিতে জোর দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসূচিতেও তৎপরতা বেড়েছে বিজেপির। কাল, রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে আসছেন দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তার আগে শুক্রবার খড়্গপুর মহকুমার নানা এলাকায় গেরুয়া-শিবিরের তৎপরতা চোখে পড়ল। খড়্গপুর শহর থানার সামনে জমায়েত করে স্মারকলিপি জমা দিলেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। কেশিয়াড়ির কুলবনি ও নারায়ণগড়ের পাতলিতে আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের ভরসা জোগাতে এলাকায় গেলেন বিজেপির জেলা নেতারা।
এ বারের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরে ভাল ফল করেছে বিজেপি। কংগ্রেসের ‘শক্ত ঘাঁটি’ খড়্গপুর শহরে তো লিড পেয়েছে তারা। ভোটের পরে বেড়েছে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রবণতাও। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলা ও বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গত ৮ জুন বেলদার পাতলি গ্রামে বিজেপির পোলিং এজেন্ট কার্তিক রক্ষিতকে দলীয় কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁকে বাঁচাতে এসে তৃণমূল-বিজেপি মারামারিতে আক্রান্ত হন আর এক বিজেপি কর্মী তাজু রহমান। ভাঙচুর হয় বিজেপি সমর্থক গৌরাঙ্গ দাসের গোয়ালঘর।
এ দিন মাঠে জেলা বিজেপির দল বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক বাবলু বরণ, যুব সভাপতি শুভজিৎ রায়। তাঁরা প্রথমে বেলদার পাতলি ও পরে কেশিয়াড়ির কুলবনি পরিদর্শনে যান। আক্রান্ত কার্তিক রক্ষিত বলেন, “পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তৃণমূলের হুমকি চলছেই। তুষারবাবুদের সব জানিয়েছি।” দলটি গৌরাঙ্গ দাসের বাড়িতেও যায়।
পাতলি থেকে বিজেপি নেতারা রওনা দেন কেশিয়াড়ি। এই ব্লকের বাঘাস্তি পঞ্চায়েতের কুলবনিতে গত ৩ জুন সকালে সদ্য সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে আসা সমর্থক উমা পালই, মহেশ্বর সিংহ, শ্রীকান্ত পালই, আকুল মণ্ডল-সহ ৭ জনের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছিল। গিয়ে জখম হন উমা। দুই মহিলার শ্লীলতাহানির অভযোগও ওঠে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়। তবে পুলিশি তদন্তের অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ। ক্ষুদ্ধ আকুল মণ্ডল, মালতি পালইরা বলেন, “পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তৃণমূলের লোকেরা খুনের, মেয়েদের ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে।” সব শুনে পুলিশে দায়ের করা অভিযোগের প্রতিলিপি চেয়ে নেন তুষারবাবু। কেশিয়াড়ি মণ্ডল সভাপতি উত্তম মাইতিকে এলাকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেন। পরে তুষারবাবু বলেন, “প্রতিটি ঘটনায় দেখছি পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। রাজ্য সভাপতি আসছেন। আমরা পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগের প্রতিলিপি তাঁকে দেবো। রাজ্য থেকে চাপ দিয়েও কাজ না হলে কেন্দ্রে পাঠানো হবে অভিযোগ।”
খড়্গপুর শহরেও এ দিন কর্মসূচি ছিল বিজেপির। শহর জুড়ে বাড়তে থাকা চুরি-ছিনতাই, গজিয়ে ওঠা বেআইনি মদভাটির প্রতিবাদে থানার সামনে জমায়েত করে তারা। পরে টাউন থানায় এসডিপিও অজিতসিংহ যাদব ও আইসি দীপক সরকারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ছিলেন দলের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রভাকর তিওয়ারি, জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়, শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝাঁ। রেলনগরী খড়্গপুরে দুষ্কর্মের নজির নতুন নয়। তবে গত কয়েকবছর খড়্গপুর শান্তই ছিল। সম্প্রতি রাজনৈতিক সংঘর্ষ থেকে চুরি, ছিনতাই, খুনের ঘটনা বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশি সক্রিয়তার দাবি জানায় বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি প্রভাকরবাবু বলেন, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় অসামাজিক কাজ বাড়ছে। মানুষ আতঙ্কে আছেন। আরজি পার্টি গড়ে দুষ্কর্ম রোধে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy