Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নায়কের ছবি হাতে মিছিলে হাঁটল খুদেরাও

চর্মচক্ষে দেব-দর্শন এখনও হয়নি। তবে তাঁর ছবিওয়ালা পোস্টারই যে ভিড় টানতে যথেষ্ট, সিনেমা হলের মতো গ্রামের পথও এ বার সেই প্রমাণ দিল। মঙ্গলবার বিকেলে কেশপুরের দোগাছিয়ায় বেরিয়েছিল তৃণমূলের মিছিল। উপলক্ষ ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী টলিউডের সুপারস্টার দেবের সমর্থনে প্রচার।

কেশপুরের দোগাছিয়ায় দেবের সমর্থনে মিছিল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

কেশপুরের দোগাছিয়ায় দেবের সমর্থনে মিছিল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

বরুণ দে
কেশপুর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩৮
Share: Save:

চর্মচক্ষে দেব-দর্শন এখনও হয়নি। তবে তাঁর ছবিওয়ালা পোস্টারই যে ভিড় টানতে যথেষ্ট, সিনেমা হলের মতো গ্রামের পথও এ বার সেই প্রমাণ দিল।

মঙ্গলবার বিকেলে কেশপুরের দোগাছিয়ায় বেরিয়েছিল তৃণমূলের মিছিল। উপলক্ষ ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী টলিউডের সুপারস্টার দেবের সমর্থনে প্রচার। উন্মাদনা আর উৎসাহে শেষমেশ তা আর তৃণমূলের মিছিল ছিল না, হয়ে উঠেছিল দেবের মিছিল। মাঝবয়সী থেকে স্কুলপড়ুয়া কচিকাঁচা, সকলেই মহা উৎসাহে মিছিলে পা মিলিয়েছে। উঠেছে স্লোগান ‘ভূমিপুত্র দেবকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন।’

এ দিনের মিছিলে নজরে পড়ার মতো ছিল কচিকাঁচাদের উৎসাহ। দোগাছিয়ার মিছিলে সামিল হওয়া চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শেখ মেহেবুব আলি বলে, “আগে থেকেই জানতাম আজ বিকেলে দেবের মিছিল হবে। তাই মাঠে খেলতে যাইনি। আমার বন্ধুরাও তো মিছিলে ছিল। মিছিল থেকে দেবের একটা ছবিও নিয়ে এসেছি।” মেহেবুবের সঙ্গেই মিছিলে ছিল সফিকুল আলি, শেখ ইয়াদুলরা। ইয়াদুল নবম শ্রেণির ছাত্র। সফিকুল পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। ইয়াদুল বলছিল, “পুরো গ্রামেই এখন দেবকে নিয়ে আলোচনা চলছে।”

ঘাটাল কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীপক অধিকারী অর্থাৎ দেবের নাম ঘোষণা করেছেন বেশ কিছুদিন আগেই। তবে সেই সময় দেব রাজ্যের বাইরে ছিলেন। মঙ্গলবারই কলকাতায় ফিরেছেন তিনি। সে কথা জানতে পেরেই এ দিন এলাকায় প্রচারের পারদ চড়ে। দুপুরে কেশপুর কলেজ ক্যাম্পাসে দেবের সমর্থনে মিছিল করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর কর্মী-সমর্থকেরা। বিকেলে দোগাছিয়ায় মিছিল হয় তৃণমূলের উদ্যোগে। দ্বিতীয় মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, “অনেক দিন পর কোনও মিছিল ঘিরে এই উন্মাদনা দেখলাম। বিশেষ করে ছোটদের মধ্যে। দুপুরেই টিভিতে দেখলাম, দেব কলকাতায় এসেছেন। সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই কেশপুর উৎসাহে ফুটছে।”

মঙ্গলবার কলকাতায় দেবকে পাশে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা চাই, ও (দেব) ছাত্র-যুবদের নিয়ে কাজ করুক।” টলিউডের ‘রংবাজ’ও এ দিন বলেছেন, “নতুন প্রজন্মেরও রাজনীতিতে যুক্ত থাকা উচিত। আমাদের কাজ নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা।” মঙ্গলবার কেশপুরের মিছিলও বলছে, এলাকায় তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এখন ‘দেব-জ্বরে’ আক্রান্ত। দেবকে দেখে যুব সম্প্রদায় রাজনীতিতে উৎসাহিত হবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকলেও, একটা ব্যাপারে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব নিশ্চিত যে দেবের নামেই ছেলের দল মিছিলে বা সভায় ভিড় জমাবে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলছেন, “এই উন্মাদনা স্বাভাবিক। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে।”

তাহলে দেব এলাকায় এলে কী হবে? প্রশ্নটা কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ভাবাচ্ছে। দোগাছিয়ার নেতা শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, “দেবের ছবি নিয়ে মিছিলেই এই অবস্থা। এলাকায় এলে উৎসাহ কোথায় পৌঁছবে, তাই ভাবছি। তখন তো ছোটদের সামলানোই মুশকিল হবে।” স্থানীয় টিএমসিপি নেতা শেখ আরিফুদ্দিনের কথায়, “দেবকে ছাড়াই মিছিল সুপারহিট। দেব এলে উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙে যাবে।”

দেব এই কেশপুরেরই ছেলে। এ দিন যেখানে মিছিল হল সেই দোগাছিয়া থেকে দেবের গ্রাম মহিষদার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। দোগাছিয়ার উত্তেজনা এ দিন মহিষদায় এসে পৌঁছয়নি। বিশেষ করে সুপারস্টারের বাড়ি ছিল একেবারে নিস্তরঙ্গ। অধিকারী বাড়ির মাথা দেবের বড় জ্যাঠামশাই শক্তিপদ অধিকারী সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির সদস্য। এ দিন দোগাছিয়ায় তৃণমূলের মিছিলের কথা তাঁর জানা ছিল না। শুনে বললেন, “মিছিল হয়েছে? তা ভাল।” একই সঙ্গে শক্তিপদবাবু জানালেন, দেব সম্ভবত চলতি সপ্তাহেই বাড়ি আসবেন।

সেই অপেক্ষাতেই গোটা এলাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE