ভোটের ফল ঘোষণার পরে তিনি নন্দীগ্রামকে জয় উৎসর্গ করেছিলেন। রবিবার তমলুকে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর প্রথম সংবর্ধনাও হল সেই নন্দীগ্রামেই।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সেনাপতি হিসেবেই শুভেন্দুবাবুর রাজনৈতিক উত্থান। ২০০৯ সালের ভোটে সেই সূত্রেই লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ বার ভোটে নন্দীগ্রাম হাওয়া সে ভাবে না থাকলেও নন্দীগ্রামের প্রতি ঋণ ভোলেননি এই তৃণমূল নেতা।
রবিবার বিকেলে কেন্দেমারি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নন্দীগ্রামের হাজরাকাটা বাজারে ও সন্ধ্যায় হরিপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে হরিপুর বাজারে শুভেন্দুবাবুকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। হাজরাকাটা বাজারের সংবর্ধনা সভায় ছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক ফিরোজা বিবি, জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান, নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের, দলের ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল-সহ নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে শুভেন্দুবাবু সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মণ শেঠকে প্রায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন। ওই ভোটে শুধু নন্দীগ্রামে বিধানসভা কেন্দ্রে লক্ষ্মণবাবুর চেয়ে প্রায় ৫৫ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন শুভেন্দুবাবু। এবারে নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকায় সিপিএম প্রার্থীর থেকে শুভেন্দুবাবুর জয়ের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৮,০০০। উল্লেখ্য, এবার নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী প্রায় ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন।
হাজরাকাটার সংবর্ধনা সভায় শুভেন্দুবাবু বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ও আমি নন্দীগ্রামের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছিলাম। তাই জয়ের পরও প্রথম আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে এখানে এসেছি। নন্দীগ্রামের মানুষকেই আমি জয় উৎসর্গ করছি।” সভায় তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামের উন্নয়নের জন্য হলদিয়া উন্নয়নের পর্ষদের পক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হবে।” পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে উন্নয়নের প্রস্তাব জমা দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। শুভেন্দুবাবু জানান, নন্দীগ্রামে বাইপাস রাস্তা, কেন্দেমারি খেয়াঘাটে পল্টন জেটি’র কাজ, মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি ও রেল প্রকল্পের কাজ-সহ যেসব কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে, সেগুলি দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।নন্দীগ্রামবাসীদের উদ্দেশে শুভেন্দুবাবু বলেন, “এলাকার কোনও সমস্যার বিষয়ে যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে জানিয়ে কোনও কাজ না হয়। তবে আমাকে জানাবেন। আমাকে জানানোর পরও যদি কোনও কাজ না হয়, তাহলে দলনেত্রীকে জানান।” পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দেশে একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় আসতে চলেছে। এই রাজ্যে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দেওয়া গিয়েছে। আগামী দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে, এটাই হল দেশের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ।” শারীরিক অসুস্থতার কারণেই শনিবার তিনি দলনেত্রীর বাড়িতে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানান শুভেন্দুবাবু।
নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের দাবি, “২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রাম-সহ জেলায় রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে নন্দীগ্রামে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। ২০০৯ সালে শুভেন্দুবাবু সাংসদ হওয়ার পর সেই উন্নয়নের গতি আরও বৃদ্ধি পায়। আর ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর শুভেন্দুবাবু হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পরে নন্দীগ্রামে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। তাঁর উদ্যোগে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের জন্যই নন্দীগ্রামের মানুষ এবার নির্বাচনে তাঁকে বিপুলভাবে সমর্থন করেছে।” নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলেন, “শুভেন্দুবাবুর উদ্যোগে এলাকায় উন্নয়নের কাজের কারণে রাজনৈতিকভাবে বিরোধীরাও এবার নির্বাচনে তাঁকে সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রামে কংগ্রেস প্রায় ৮ হাজার ভোট পেয়েছিল। এবার কংগ্রেস মাত্র ৩৮৮৯টি ভোট পেয়েছে। সিপিএম ও সিপিআই’এর একাংশ সমর্থক তাঁকে সমর্থন জানিয়েছে। আর তাঁর জেরেই নন্দীগ্রামে শুভেন্দুবাবু এত বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।”