Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নয়া নিয়মে কাটবে সেতু-জট, আশায় প্রশাসন

অধিগ্রহণের পথে হাঁটতে নারাজ। রাস্তা-সেতু-নিকাশির মতো পরিকাঠামো তৈরির জন্য তাই চাষিদের থেকে সরাসরি জমি কিনতে সম্প্রতি নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য সরকার। জমি বিক্রিকে উৎসাহ দিতে ‘বিশেষ অনুদান’ও ঘোষিত হয়েছে। স্থির হয়েছে, সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে দ্রুত জমি দিলে দামের ৫০ শতাংশ টাকা বিশেষ অনুদান (ইনসেনটিভ) হিসেবে মিলবে। এই নির্দেশিকা ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় পৌঁছেও গিয়েছে (মেমো নং ৩১৪৫, তারিখ ২৪.১১.১৪)।

অ্যাপ্রোচ রোড হয়নি। তৈরি হয়েও পড়ে লোয়াদা সেতু। —ফাইল চিত্র।

অ্যাপ্রোচ রোড হয়নি। তৈরি হয়েও পড়ে লোয়াদা সেতু। —ফাইল চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫০
Share: Save:

অধিগ্রহণের পথে হাঁটতে নারাজ। রাস্তা-সেতু-নিকাশির মতো পরিকাঠামো তৈরির জন্য তাই চাষিদের থেকে সরাসরি জমি কিনতে সম্প্রতি নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য সরকার। জমি বিক্রিকে উৎসাহ দিতে ‘বিশেষ অনুদান’ও ঘোষিত হয়েছে। স্থির হয়েছে, সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে দ্রুত জমি দিলে দামের ৫০ শতাংশ টাকা বিশেষ অনুদান (ইনসেনটিভ) হিসেবে মিলবে। এই নির্দেশিকা ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় পৌঁছেও গিয়েছে (মেমো নং ৩১৪৫, তারিখ ২৪.১১.১৪)।

নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে কোনও জমির মালিক রাস্তা, খাদ্য দফতরের গুদাম, সেতুর সংযোগকারী রাস্তা, পানীয় জল প্রকল্প তৈরি বা বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ প্রভৃতি নির্মাণের জন্য জমি দিলে দাম তা তো পাবেনই, উল্টে এক মাসের মধ্যে জমি সরকারকে রেজিস্ট্রি করে দিলে জমির দামের ৫০ শতাংশ অর্থ বিশেষ অনুদান পাবেন। অর্থাৎ কোনও জমির দাম ৬ লক্ষ টাকা হলে তিনি পাবেন ৯ লক্ষ টাকা। কেউ যদি গড়িমসি করে দু’মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করেন তিনি অনুদান বাবদ পাবেন জমির দামের ১০ শতাংশ অর্থ। এর ফলে জমি-জটে আটকে থাকা গুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে বলেই আশাবাদী প্রশাসনিক কর্তারা।

জমির জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সব থেকে বেশি আটকে রয়েছে সেতুর কাজ। বহু জায়গাতেই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু তৈরির পরেও তা চালু করা যায়নি। কারণ, সংযোগকারী রাস্তা নেই। সংযোগকারী রাস্তা বানাতে যে জমি প্রয়োজন! এই যেমন লোয়াদা সেতু। ডেবরার সঙ্গে কেশপুর ও দাসপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে লোয়াদায় কংসাবতী নদীর উপর সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। ৬ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয় ধার্য হয়েছিল। ২০০২ সালে শুরু হয়ে ২০০৫ সালে কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সংযোগকারী রাস্তার অভাবে শুরু করা যায়নি। কারণ, দু’দিকে সেংযাগকারী রাস্তা তৈরি করতে প্রায় সাড়ে ৬ একর জমির প্রয়োজন। সেখানে ৬২ জন কৃষকের জমি রয়েছে। অনেক বুঝিয়েও সকলকে রাজি করানো যায়নি। ফলে ২৯ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হলেও রাস্তা হয়নি। অথচ, সেতুটি চালু হলে কেশপুর বা দাসপুরের মানুষকে মেদিনীপুর বা মেচোগ্রাম হয়ে ৪০-৫০ কিলোমিটার ঘুরপথে ডেবরা যেতে হত না।

যশাড় সেতুর ক্ষেত্রেও একই। ২০০২ সালের ২২ মে মাসের পর কাজ শুরু হয়। ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। এ ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে সংযোগকারী রাস্তা তৈরির। ৮ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে হবে। তার জন্য জমির প্রয়োজন। কিন্তু জমি মিলছে না। একই অবস্থা গড়বেতার মাইতা ও কেঠিয়া নদীর উপর সেতুর ক্ষেত্রেও। এছাড়াও ভসরাঘাটে সুবর্ণরেখা নদীর উপর সেতু নির্মাণ হলেও একই সমস্যা দেখা দেবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরীর কথায়, “সরকারের এই নির্দেশকার ফলে আর জমি জটে কোনও প্রকল্প আটকে থাকবে না বলেই আমাদের আশা। প্রথমেই আমরা লোয়াদা, যশাড়, মাইতা, ভরসাঘাট সহ ৫টি সেতুর সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনীয় জমি কেনার জন্য পদক্ষেপ করছি। কোথায় জমি জটে কোন প্রকল্প আটকে রয়েছে তার তালিকাও তৈরি করা হবে। পরবর্তীকালে দ্রুত গতিতে সেগুলির সমস্যাও দূর করা হবে।”

রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এই নির্দেশিকার ফলে এবার জেলা পরিষদ (পঞ্চায়েত আইনের ২১২ ধারা অনুযায়ী) ও পুরসভা বা কর্পোরেশন (৪২৯ ধারা অনুযায়ী) সরাসরি জমির মালিকের কাছ থেকে জমি কিনতে পারবেন। তার জন্য অবশ্য কমিটি তৈরি করতে হবে। কমিটি জমি কিনতে শিল্প, পরিকাঠামো ও কর্মসংস্থান (এমপ্লয়মেন্ট) স্ট্যান্ডিং কমিটির অনুমতি নিতে হবে। তারপর কত জমি লাগবে, জমির মালিক কে তা খুঁজে বের করা হবে। জমির মূল্যও নির্ধারণ করা হবে। জমির মালিককে নোটিস দেওয়া হবে। জমির মালিক জমি বিক্রি করতে চান বলে আবেদন করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suman ghosh medinipur loyada bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE