Advertisement
E-Paper

নয়া স্কুল কমিটির রাশ তৃণমূলের হাতেই

বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শিক্ষাঙ্গনকে তিনি রাজনীতিমুক্ত করবেনই। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। নানান পদ্ধতি প্রয়োগও হয়েছে। সব করতে করতে নতুন সরকার পেরিয়ে গিয়েছে সাড়ে তিন বছর।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০১:৫০

বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শিক্ষাঙ্গনকে তিনি রাজনীতিমুক্ত করবেনই। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। নানান পদ্ধতি প্রয়োগও হয়েছে। সব করতে করতে নতুন সরকার পেরিয়ে গিয়েছে সাড়ে তিন বছর।

শিক্ষা জগতের অভিজ্ঞতা বলছে, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি। বরং আড়ে-বহরে তা ছাপিয়ে গিয়েছে আগের জমানাকে। নিন্দুকেরা বলেন শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতিকরণে এই জমানার সাফল্যের বাম জমানার অনিলায়নকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে!

স্কুল পরিচালন সমিতির নতুন কমিটি গঠনের পর সে কথার সত্যতা উঠে আসতে বাকি থাকে না। মেদিনীপুর শহরের স্কুলগুলোর পরিচালন সমিতির নতুন কমিটি গঠনের জন্য রাজ্য সরকার সভাপতি এবং শিক্ষানুরাগীদের যে নাম পাঠিয়েছে, সেখানে তৃণমূলের লোকজনের সংখ্যাই বেশি। কোথাও সভাপতি হিসেবে নাম পাঠানো হয়েছে তৃণমূলের জেলা সভাপতির। কোথাও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদকের। কোথাও বা যুব তৃণমূল নেতার। মেদিনীপুরের বিধায়কের ভাইও শিক্ষানুরাগী হিসেবে একটি স্কুলের পরিচালন সমিতিতে থাকছেন। সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র দাবি, শাসক দল মাতব্বরি করার জন্যই স্কুল পরিচালন সমিতিতে নিজেদের লোক ঢোকাচ্ছে। এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে দলবাজি চলছে। এটা তো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। তোলা আদায়ের জন্য শাসক দল সমিতিগুলোয় নিজেদের লোক ঢোকাচ্ছে।”

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন

তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বেরও দাবি, স্কুলের উন্নয়নে যাঁরা ভাল ভাবে কাজ করতে পারবেন, তাঁরাই সমিতিতে রয়েছেন। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতির বক্তব্য, “শিক্ষিত মানুষজনই স্কুল পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন।”

সরকারি অনুদানপুষ্ট স্কুলগুলোর জন্য বাম আমলে তৈরি পরিচালন সমিতি গঠন বদলে দিয়েছে বর্তমান সরকার। ঠিক হয়েছে, সমিতির সভাপতি মনোনীত করবে রাজ্য সরকার। দু’জন করে শিক্ষানুরাগীও মনোনীত করবে তারাই। ফলে এ কথা সত্য যে মনোনয়নের রাশ তৃণমূল বিধায়কদের হাতেই উঠে আসবে সর্বত্র।

হয়েছেও তাই। পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহর থেকেই স্কুল পরিচালন সমিতির নতুন কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে শহরের বেশির ভাগ স্কুলে নতুন সমিতি গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশও স্কুলগুলোতে পৌঁছে গিয়েছে। পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সভাপতি এবং শিক্ষানুরাগীদের নামও। পদাধিকার বলে সমিতির সম্পাদক হবেন প্রধান শিক্ষকেরাই। কিন্তু বাকিরা সকলেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ। শুধু তাই নয় সভাপতি বা শিক্ষানুরাগী হিসাবে যাঁদের নাম এসেছে তাঁরা অধিকাংশই তৃণমূলের কোনও না কোনও পদে রয়েছেন।

অনেকেই মনে করছেন শিক্ষাক্ষেত্রকে কব্জায় রাখলে সমাজের বড় অংশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা যে সহজ হবে তা বিলক্ষণ বুঝেছিল সিপিএম। তাই বাম আমলে স্কুল- কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে এবং সিদ্ধান্তগ্রহনকারী কমিটিতে দলীয় অনুগামীদের ঢোকানো হয়। তৃণমূলও সেই একই পথে হাঁটছে।

যদিও শিক্ষক সমাজ মনে করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বা সরকারের হস্তক্ষেপ কখনওই উচিত নয়। তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষকের অবশ্য মন্তব্য, “সরকার যখন অনুদান দিচ্ছে, তখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ তো থাকবেই!” একের পর এক স্কুল পরিচালন সমিতিতে তৃণমূল নেতা, দল ঘনিষ্ঠদের পদপ্রাপ্তি নিয়ে শহরে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূল যে কতটা অস্বস্তিতে তা দলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবুর কথাতেই স্পষ্ট। এক প্রশ্নের উত্তরে তাঁর জবাব, “এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানি না! না-জেনে কোনও মন্তব্য করব না!”

school politics tmc cpm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy