Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুকুরের জলই ভরসা কুসুমপুরের

রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে উদযাপিত হল জাতীয় বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান সপ্তাহ। বিশুদ্ধ জল পানের অঙ্গীকারও করানো হল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে। সপ্তাহ উদযাপন কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা নিরাপদ পানীয় জল পান করার নিদান দিলেন সেই সমস্ত পড়ুয়াদের যাদের কাছে পানীয় জলের ভরসা পুকুরের জল।

স্কুলে রান্নার জন্য আনা হচ্ছে পুকুর থেকে জল। ছবি: সোহম গুহ।

স্কুলে রান্নার জন্য আনা হচ্ছে পুকুর থেকে জল। ছবি: সোহম গুহ।

সুব্রত গুহ
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৬:০৪
Share: Save:

রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে উদযাপিত হল জাতীয় বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান সপ্তাহ। বিশুদ্ধ জল পানের অঙ্গীকারও করানো হল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে। সপ্তাহ উদযাপন কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা নিরাপদ পানীয় জল পান করার নিদান দিলেন সেই সমস্ত পড়ুয়াদের যাদের কাছে পানীয় জলের ভরসা পুকুরের জল। বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান সপ্তাহে এমনই বাস্তব জীবনের জলছবি ধরা পড়ল কাঁথি-৩ ব্লকের কুসুমপুর অঞ্চলের বিলাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বহিত্রকুণ্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়-সহ একাধিক বিদ্যালয়ে।

২০১৭ সালের মধ্যে নির্মল পশ্চিমবঙ্গ গড়ার লক্ষ্যে গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা রাজ্য জুড়ে উদযাপিত হল বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান সপ্তাহ। সেই উদযাপন সপ্তাহে কাঁথি-৩ ব্লকের কুসুমপুর অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ পানীয় জল পান করার সঙ্কল্প নেওয়ানোর জন্য বিদ্যালয়ে এসেছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবীরা। যাদের কাছ থেকে এই সংকল্প নেওয়া হল, সেই সব ছাত্রছাত্রীদের কাছে নিরাপদ পানীয় জল অলীক স্বপ্ন মাত্র। স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থা ও শৌচালয় থাকা বাধ্যতামূলক হলেও কাঁথি-৩ ব্লকের বহিত্রকুণ্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলামপুর পুকুরপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়-সহ একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনও পানীয় জলের ব্যবস্থা-ই নেই। পানীয় জলের জন্য ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র ভরসা পুকুরের জল। আর তা না হলে বাড়ি থেকে বোতলে করে বয়ে আনা জল ভরসা। এমনকী স্কুলের মিড ডে মিলের রান্নাও হয় ওই পুকুরের জল দিয়েই।

তবে এই সমস্যা শুধু স্কুলের নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁথি-৩ ব্লকের কুসুমপুর অঞ্চল ‘নন টিউবয়েল জোন’ বলে চিহ্নিত। একসময় জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হত। দীর্ঘদিন আগে সেই পাইপ লাইন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এলাকার স্কুল-সহ স্থানীয় মানুষদের মধ্যেও পানীয় জল পাওয়া নিয়ে বিস্তর সমস্যা রয়েছে। পুকুরের জলে মিড ডে মিলের রান্নার কথা স্বীকার করেছেন বহিত্রকুণ্ডা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঝাড়েশ্বর বেরা। তিনি বলেন, “এই এলাকায় পাইপ লাইনে জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। ফলে আমাদের ভরসা করতে হয় ওই পুকুরের জলের উপরেই।” বিলাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “মিড ডে মিল রান্নার জন্য কাঁথি পুর এলাকা থেকে টাকা খরচ করে লোক দিয়ে জল আনতে হয়।” শুধু বিলাসপুর বা বহিত্রকুণ্ডা নয়, কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ১৮ থেকে ১৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও পানীয় জল নিয়ে সমস্যাটা একই।

এলাকার বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, বিশুদ্ধ পানীয় জল না মেলায় টাকা খরচ করে বাইরে থেকে পানীয় জল বয়ে আনতে হয়। আর তা না পারলে পুকুরের জলই পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হতে হয়। তবে বতর্মানে গ্রামীণ পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে এই সমস্যা আর থাকবে না বলে আশ্বাস শুনিয়েছেন কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পানীয় জলের সঙ্কটের কথা মেনে নিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেনও। তিনি বলেন, “জেলার কতগুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে একটি সমীক্ষা শুরু করা হচ্ছে। অচিরেই সমস্যার সমাধান করা যাবে।”

এর আগেও একাধিকবার আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই পুকুরের জল খাওয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বহিত্রকুণ্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিলা মাইতি, শুভম মহাপাত্ররা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে। তাদের প্রশ্ন ছিল, ‘‘পুকুর ছাড়া তো আমাদের গ্রামে পানীয় জলের অন্য কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরা নিরাপদ পানীয় জল কী করে পাব?” সপ্তাহ উদযাপন কর্মসূচি সারা রাজ্য জুড়ে আর পানীয় জলের সমস্যাটি স্থানীয় অঞ্চলের-এমন কথা বলে দায় এড়িয়েছেন তাঁরা। আর কোনও জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

drinking water subrata guha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE