এত দিন এগিয়ে থাকা সম্প্রদায় থেকেই উচ্চশিক্ষার আঙিনায় আসতে দেখা যেত। এখন ধীরে ধীরে তার পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের মেয়েরাও এখন উচ্চশিক্ষার আঙিনায় আসছেন। শুধু আসছেন তা-ই নয়, সাফল্যের দিকেও পিছিয়ে নেই তাঁরা।
মঙ্গলবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট-৩ থ্রি টায়ার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হল। তা থেকে দেখা যাচ্ছে তপসিলি জাতি, উপজাতি এবং সংখ্যালঘু মহিলারাও পাশ করেছেন সাফল্যের সঙ্গেই। যা দেখে খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক নিরঞ্জন মণ্ডল, উপ-পরীক্ষা নিয়ামক সুভাষ মাইতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী সকলেই। তাঁদের কথায়, “আমরা এখন কেবলমাত্র বিষয় ভিত্তিক ফলই নয়, কোন সম্প্রদায় থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের কেমন ফল হচ্ছে তা-ও নজরে রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য, সবস্তরের মানুষ যেন উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারেন।”
এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্গত কলেজগুলি থেকে সাম্মানিক কলা বিভাগে ৯৫৫৪ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন ৫১৭ জন। পাশের হার ৯৬.৯৯ শতাংশ। সাম্মানিক বিজ্ঞান বিভাগে ২৬৪০ জনের মধ্যে ৬০৮ জন প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন। পাশের হার ৯৬.৯৯ শতাংশ। আর বাণিজ্য বিভাগে ৬১৯ জনের মধ্যে ১৩২ জন প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন। পাশের হার ৯৮.৪৮ শতাংশ। মোটের উপরে গত বছরের তুলনায় পাশের হার একই রয়েছে বলা যায়।
এত গেল সার্বিক ফল। কিন্তু পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে কী হয়েছে? কলা বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৯৫৫৪ জন। তাঁদের মধ্যে ছাত্র ৪১৫৩ ও ছাত্রী ৫৪০১। কলা বিভাগে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। যাঁদের মধ্যে তপসিলি সম্প্রদায়ের ৬৫২ জন। তাঁদের মধ্যে ৬৩২ জনই পাশ করেছেন। তপসিলি উপজাতির ১৩৭ জনের মধ্যে ১৩০ জন পাশ করেছেন। আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৬১ জনের মধ্যে ২৫৮ জন পাশ করেছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রের থেকে ছাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। এ বার যেখানে ১৮১ জন ছাত্র ছিল সেখানে ছাত্রীর সংখ্যা ২৬১ জন! বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও অবশ্য ছাত্রী-সংখ্যা কম। ছাত্র যেখানে ১৫৪৪ জন সেখানে ছাত্রী ১০৯৬। তপসিলি জাতির ৮২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৭৪ জন পাশ করেছেন। তপসিলি উপজাতির ১৫ জন ছাত্রীর মধ্যে ১৫ জনই পাশ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৯ জনের মধ্যে ৩৬ জন পাশ করেছেন।
পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা লাভের ঝোঁকও বাড়ছে। গত বছরের সঙ্গে তুলনা টানলেই তা বোঝা যায়। ২০১৩ সালে সাম্মানিক কলা বিভাগে তপসিলি জাতির ৫৮০ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেখানে এ বার দিয়েছিলেন ৬৫২ জন। অর্থাৎ ৭২ জন বেশি। তপসিলি উপজাতির ক্ষেত্রে গতবার যেখানে ১২৩ জন ছাত্রী ছিলেন এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১৩৭ জন। আর সংখ্যালঘুর ক্ষেত্রে গত বছর যেখানে ২০৫ জন ছাত্রী এ বার সেখানে ২৬১ জন।
এই বৃদ্ধিকে ধরে রাখতে চান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপ-পরীক্ষা নিয়ামক সুভাষবাবুর কথায়, “সব স্তর থেকে ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার আঙিনায় না নিয়ে আসা গেলে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই আমরা সব দিক দিয়ে নজর রাখছি। যাতে কোনও ক্ষেত্রে হঠাৎ কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটলেই পদক্ষেপ করতে পারি।”
ধীরে ধীরে পরীক্ষার ফল প্রকাশের ক্ষেত্রেও দ্রুততা নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ২০১২ সালে যেখানে ৯৪ দিনের মাথায় ফল প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৩ সালে ২ দিন আগে অর্থাৎ ৯২ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করা গিয়েছিল। এ বার আরও দশদিন আগে অর্থাৎ ৮২ দিনের মাথায় ফল প্রকাশিত হল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের পরিকাঠামো অতি দুর্বল। বিশেষত, কর্মী সঙ্কটের কারণে চেষ্টা করলেও ফল প্রকাশ এগিয়ে আনা যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত কর্মী থাকলে ৬০ দিনের মাথাতেই ফল প্রকাশ করা সম্ভব হত বলেই পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy