Advertisement
০২ মে ২০২৪

পুর এলাকার ভোট বাড়াতে চায় তৃণমূল

পুরভোটে বোর্ড দখলে থাকলেও শতাংশের হারে উল্লেখযোগ্য ভোট পায়নি তৃণমূল। একেবারে মাথায় মাথায় ১৩টি আসন পেয়ে ২৫ ওয়ার্ডের মেদিনীপুর পুরসভার দখল নিয়েছিল তৃণমূল। ফলাফলে আদৌ তুষ্ট হতে পারেননি দলের রাজ্য নেতৃত্ব।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০১:০৩
Share: Save:

পুরভোটে বোর্ড দখলে থাকলেও শতাংশের হারে উল্লেখযোগ্য ভোট পায়নি তৃণমূল। একেবারে মাথায় মাথায় ১৩টি আসন পেয়ে ২৫ ওয়ার্ডের মেদিনীপুর পুরসভার দখল নিয়েছিল তৃণমূল। ফলাফলে আদৌ তুষ্ট হতে পারেননি দলের রাজ্য নেতৃত্ব। খোদ দলনেত্রীও নিজের অসন্তোষও গোপন রাখেননি বলে দলের অন্দরের খবর। অবস্থা দেখে তিনি লোকসভা ভোটে যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে জন্যও দলীয় নেতৃত্বকে তিনি নির্দেশ দেন বলেও জানা গিয়েছে। আর তারই নিরিখে এ বার পুর-এলাকায় নিজেদের ভোট বাড়াতে তৎপর হয়েছে তৃণমূল।

কিন্তু, কী ভাবে ভোট বাড়ানো সম্ভব? তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। তা কর্মীদের কাছে তুলে ধরতে আগামী ২৫ মার্চ একটি কর্মশালা করবে দল। তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তী বলেন, “শহরের মানুষের কাছে উন্নয়ন একটা বড় বিষয়। সেখানে কেবল নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর নিয়ে মাতামাতির কোনও অবকাশ নেই। দল কী করেছে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই বা কি তা মানুষকে বোঝানোর পাশাপাশি ভোটটাকে বুথ পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে কী ভাবে পৌঁছনো যায় তার কৌশল শেখাতেই কর্মশালার আয়োজন।”

ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণার পর থেকে জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছে সব রাজনৈতিক দল। মঙ্গলবারই মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে ঘাটাল কেন্দ্রের তারকা প্রার্থী দেব, মেদিনীপুরের প্রার্থী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় এবং ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের প্রার্থী পেশায় চিকিৎসক উমা সরেনকে নিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা সেরেছে তৃণমূল। দেবকে নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের উন্মাদনার অন্ত ছিল না। দলীয় সূত্রের খবর, তারকা প্রার্থীরা সর্বত্র প্রচারে যেতে পারবেন না। এমনকী স্বয়ং নেত্রীও জানিয়ে দিয়েছেন, এই ধরনের ‘অতিথি’ প্রার্থীদের যাতে সর্বত্র নিয়ে গিয়ে ব্যতিব্যস্ত না করা হয়। এ ক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে যায়। কিন্তু দলীয় নেতা-কর্মীরাও যদি মন খুলে প্রার্থীদের না দেখতে পান তা হলে কী ভাবে তাঁদের হয়ে প্রচার করবেন। তাই মনের রসদ জোগাতেই এই সভার আয়োজন।

তারই সঙ্গে শহরের ভোট বাড়ানোর উপরেও জোর দিতে বলেছেন দলনেত্রী। সম্প্রতি মেদিনীপুর পুরসভার নির্বাচন হয়েছিল। গত বছরের ২৫ নভেম্বর ফল দেখে কিছুটা হতাশই হয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোট পেয়েছিল মাত্র ৪০.১৩ শতাংশ। মেদিনীপুর শহরে অবাম ভোটারের সংখ্যাই বেশি। ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৮৬৩ জন ভোটারের মধ্যে ৯৬ হাজার ৭৮৭টি ভোট পড়েছিল। তার মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৮ হাজার ৮৪৭টি ভোট (৪০.১৩ শতাংশ), বামফ্রন্ট-বিকাশ পরিষদ জোট পেয়েছিল ২৩ হাজার ৩৪১টি ভোট (২৪.১১ শতাংশ) আর কংগ্রেস পেয়েছিল ১৮ হাজার ৯৬২টি ভোট (১৯.৫৯ শতাংশ), বিজেপি ও অন্য নির্দলরা মিলিয়ে পেয়েছিল ১৫ হাজার ৬৩৭টি ভোট (১৬.১৫ শতাংশ)।

এ বার এই ভোটকে ৫০ শতাংশের উপরে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাই দলীয় নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, লোকসভা ভোটেও ওয়ার্ড কমিটির নেতা-কর্মীরা বাড়ি বাড়ি প্রচার করবেন। প্রচারে কেবল নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের কথা থাকবে না, ৩৪ বছরে সিপিএমের সন্ত্রাসের বক্তব্যে সভা ভারাক্রান্ত হবে না, তৃণমূলের নিজস্ব কিছু নীতি ও আদর্শ রয়েছে, তা কী, দল বর্তমানে কী কী উন্নয়ন করতে পেরেছে, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কী তার উপরেই জোর দেওয়া হবে প্রচারে। এমনকী পুর-এলাকা নিয়েও দল ও সরকারের চিন্তাভাবনা তুলে ধরা হবে মানুষের কাছে। তারই সঙ্গে মানুষের সঙ্গে আরও নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলা ও পুরসভা নির্বাচনে যে ভুল-ত্রুটি ছিল তা শুধরে নিয়ে দলীয় গোষ্ঠী কোন্দল ভুলে ভোটারদের বুথ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সকলকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার উপরেও জোর দেওয়া হবে।

শহর সভাপতির কথায়, “পুরভোটের ফল খুব একটা সন্তোষজনক হয়নি। তাই আরও ভোট বাড়ানোর উপরেই নেত্রী জোর দিয়েছেন। আমরা সেটা করে দেখাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suman ghosh tmc medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE