Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পূর্বে রাস্তা সংস্কারে বরাদ্দ ৩০ কোটি

বর্ষার আগে বেহাল রাস্তা মেরামতির জন্য বরাদ্দ হল অর্থ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আটটি রাস্তা পাকা করা ও সংস্কারের জন্য ‘গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ (আরআইডিএফ) থেকে প্রায় সাড়ে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরেই এইসব রাস্তার কাজ শুরুর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।

বেহাল রণসিংহ থেকে ফুলতলা রাস্তা। পিপুলবেড়িয়ায় তোলা ছবি।

বেহাল রণসিংহ থেকে ফুলতলা রাস্তা। পিপুলবেড়িয়ায় তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০০:১৭
Share: Save:

বর্ষার আগে বেহাল রাস্তা মেরামতির জন্য বরাদ্দ হল অর্থ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আটটি রাস্তা পাকা করা ও সংস্কারের জন্য ‘গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ (আরআইডিএফ) থেকে প্রায় সাড়ে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরেই এইসব রাস্তার কাজ শুরুর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা পরিষদ জেলার এইসব রাস্তাগুলি পাকা করার জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা বলেন, “জেলার বিভিন্ন এলাকায় এইসব রাস্তাগুলি পাকা করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল। রাস্তা পাকা করার জন্য আরআইডিএফ প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জাতীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক (নাবার্ড) এই কাজের জন্য ঋণ দেবে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার যে আটটি রাস্তা পাকা করার জন্য আরআইডিএফ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তার মধ্যে নন্দীগ্রাম এলাকার সুবদি মান্নাপল্লি থেকে সুবদি বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৪ কোটি ২১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও নন্দীগ্রামের সাতখণ্ড জালপাই থেকে নাকচিরাচর পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও কোলাঘাট ব্লকের সজিনাগাছি থেকে কুলহাণ্ডা সাড়ে ৬ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৪ কোটি ৮৭ লক্ষ, ময়না ব্লকের শ্রীধরপুর ছ’ফুকার খেয়া থেকে পড়িয়া’র খেয়া পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৩ কোটি ৬৯ লক্ষ, তমলুক ব্লকের রনসিঙ্গা থেকে ফুলতলা ১.৮৫ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ১ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কাঁথি-২ ব্লকের শ্যামচক থেকে ফুলবাড়ি পর্যন্ত ৬.৩০ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ, কাঁথি-৩ ব্লকের কালিনগর থেকে নামালডিহা পর্যন্ত ৬.২৫ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৪ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও কাঁথি-১ ব্লকের বনমালীপুর থেকে ঝড়কসবা পর্যন্ত ৮.২২ কিলোমিটার রাস্তার উন্নতির জন্য ৪ কোটি ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলার এই আটটি রাস্তা পাকার জন্য সব মিলিয়ে ৩০ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

কোলাঘাটের দেউলিয়া ফুলবাজারে আসার জন্য প্রতিদিন ভোরে সাইকেল চালিয়ে আসেন পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা দুলাল মান্না, মিলন সেনাপতি, ইন্দ্রজিত কুইল্যারা। কাঁসাই নদী বাঁধের কুলহাণ্ডা থেকে দেউলিয়া বাজারগামী মোরাম রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন আগে কোলাঘাট ব্লকের কুলহাণ্ডা থেকে সজিনাগাছি পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মোরাম রাস্তা তৈরি হয়েছিল। জেলা পরিষদের অধীনে থাকা ওই রাস্তা মাঝেমধ্যে মেরামতিও হয়। তবে প্রতি বছর বর্ষাকালে রাস্তা খানা-খন্দে ভরে যায়। ফুল চাষিরা ছাড়াও শুলনী ও বৈষ্ণবচক হাইস্কুলের বহু ছাত্র- ছাত্রী প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে। ফলে দুর্ভোগে পড়েন কুলহাণ্ডা, সাদুল্যাপুর, বাহারজোলা, পশ্চিম মানিকা, শুলনী, পদিমাচক, পাকুড়িয়া, কানাইচক, সজিনাগাছি এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় চিকিত্‌সক শুভজিত্‌ অধিকারী বলেন, “এই রাস্তা দীর্ঘদিন আগে মোরাম হয়েছিল। তারপরে এলাকার অন্য অনেক মোরাম রাস্তা পাকা হলেও এই রাস্তা পাকা হয়নি। এই খন্দপথে যাতায়াত সমস্যাজনক। আমরা চাই, রাস্তা দ্রুত পাকা হোক।”

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের অধীনে থাকা তমলুক ব্লকের রনসিঙ্গা থেকে পিপুলবেড়িয়া ফুলতলা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার মোরাম রাস্তাও এখনও পাকা হয়নি। তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কে রনসিঙ্গা থেকে নিশ্চিন্তবসান হয়ে পিপুলবেড়িয়া ফুলতলা পর্যন্ত রাস্তাটি তমলুক শহরের শঙ্করআড়া-হিজলবেড়িয়া পাকা সড়কের সঙ্গে মিশেছে। ওই রাস্তা দিয়ে নিশ্চিন্তবসান, চাপবসান, নকিবসান, মালঞ্চবেড়িয়া, পিপুলবেড়িয়া, পায়রাচালি, গৌরাঙ্গপুর-সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। পিপুলবেড়িয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস ছাড়াও স্থানীয় ভাণ্ডারবেড়িয়া হাইস্কুল, কাকগেছিয়া হাইস্কুল, যোগীখোপ হাইস্কুল, বহিচাড় হাইস্কুল, নকিবসান জুনিয়র হাইস্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন সাইকেলে করে বা হেঁটে স্কুলে যায়।

দীর্ঘদিন রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা। নিশ্চিন্তবসান গ্রামের বাসিন্দা প্রৌঢ় অমিতাভ মেট্যা বলেন, “এটা জেলা পরিষদের রাস্তা হলেও কয়েকবছর ছাড়া মোরাম ফেলে মেরামতি করা ছাড়া সে ভাবে সংস্কারের কাজ হয়নি। আর এখন রাস্তা ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ভ্যানরিকশা নিয়ে যাতায়াত করতে অসুবিধা হয়।” ওই রাস্তা দিয়েই ট্রাই সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় বাড়খোদা গ্রামের প্রতিবন্ধী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, “প্রায় ৭ বছর ধরে এই রাস্তা ধরে যাতায়াত করছি। খানাখন্দে ভর্তি রাস্তায় গাড়ি চালাতে অসুবিধা হয়। এই রাস্তা পাকা হওয়া খুব দরকার।”

স্থানীয় বাসিন্দা মুদি দোকানদার সূর্যেন্দু রায়, গৃহবধূ মর্জিনা বিবি বলেন, “তমলুক শহরের মুল সড়ক এড়িয়ে যাতায়াতের জন্য এলাকার অনেক বাসিন্দারা ওই রাস্তায় যাতায়াত করে। কিন্তু বর্ষাকালে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়। রাস্তাটি পাকা হওয়া খুবই জরুরি।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা অবশ্য জানান, জেলা পরিষদের আওতায় থাকা কোলাঘাট ও তমলুক ব্লকের ওই দু’টি রাস্তা ছাড়াও জেলার মোট ৮টি রাস্তা পাকা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় সাড়ে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tamluk road repair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE