Advertisement
২৪ মে ২০২৪

প্রহৃত পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক

মদ্যপ অবস্থায় পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে নির্মাণ সহায়ককে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। দাসপুর ১ ব্লকের পাঁচবেড়িয়া পঞ্চায়েতের বৃহস্পতিবার দুপুরের এই ঘটনায় অভিযুক্ত ঠিকাদার নিতাই ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক শান্তনু পাত্র। মারধরের ঘটনা তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের উপ-প্রধানের সামনেই ঘটেছে বলে প্রহৃত শান্তনুবাবুর দাবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৬
Share: Save:

মদ্যপ অবস্থায় পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে নির্মাণ সহায়ককে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। দাসপুর ১ ব্লকের পাঁচবেড়িয়া পঞ্চায়েতের বৃহস্পতিবার দুপুরের এই ঘটনায় অভিযুক্ত ঠিকাদার নিতাই ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক শান্তনু পাত্র। মারধরের ঘটনা তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের উপ-প্রধানের সামনেই ঘটেছে বলে প্রহৃত শান্তনুবাবুর দাবি।

বিডিও রোশনী সরকার বলেন, “নিন্দনীয় ঘটনা। আপাতত ওই ঠিকাদার ব্লকের কোনও পঞ্চায়েতে যাতে কাজ না পায়, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” অভিযুক্ত নিতাই পলাতক।

দাসপুর থানার জালালপুরের বাসিন্দা বছর চল্লিশের নিতাই দীর্ঘ দিন ধরেই দাসপুরের একাধিক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় নির্মাণ কাজ করে আসছেন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে শাসক দলের ব্লকস্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় তাঁর। তৃণমূলেও যোগ দেন তিনি। অভিযোগ, তৃণমূলের কিছু স্থানীয় ব্লক নেতার প্রশ্রয়ে নির্মাণ শেষ হওয়ার পর অতিরিক্তি বিলও পাশ হয়ে যেত।

ওই পঞ্চায়েতের এক কর্মীর কথায়, ২০১২-’১৩ সালে এলাকার বাড় জালালপুরে একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়। বরাদ্দ হয় ৬০ হাজার টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই নিতাইবাবু সে কাজের বরাত পান। কাজ শেষে তিনি ৬০ হাজার টাকার বিল করেন। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, নির্মাণ সহায়ক শান্তনুবাবু তা সরেজমিনে দেখে ওই বিল কমিয়ে ২১ হাজার টাকা করে দেন। উপ প্রধান ত্রিলোচন মাইতি বলেন, “সেই থেকে শান্তনুবাবুর প্রতি একটা ক্ষোভ ছিল নিতাইয়ের। তার জেরেই সম্ভবত মারধরের ঘটনা।”

কী হয়েছিল ওই দিন? শান্তনুবাবু বলেন, “আমি পঞ্চায়েত অফিসেই ছিলাম। হঠাৎ নিতাই ঘোষ কয়েক জনকে নিয়ে আমার উপরে চড়াও হয়। অবাধে কিল-চড় মারে।” অসুস্থ হয়ে পড়েন শান্তনুবাবু। দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসাও হয়। শান্তনুবাবুর কথায়, “আমি সরকারি কর্মী। আমার যা কাজ তাই করি। কিন্তু আমাকে কেন মারা হল, তা বুঝছি না। বিষয়টি বিডিওকে জানিয়েছি। এফআইআর করেছি।”

পঞ্চায়েতের এক কর্মী বলেন, “প্রায়ই প্রধান, উপ প্রধান-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা যেত নিতাইকে। তাই কোনও কাজ করার পর, বিল বেশি করে দেখালেও কেউ কিছু বলার সাহত পেত না।” পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, ব্যতিক্রম ছিলেন শান্তনুবাবু। তিনি প্রায়শই আর্থিক তছরুপের প্রতিবাদ করতেন। কিন্তু প্রধান-সহ দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় নিতাইয়ের ‘ভুয়ো’ বিল পেতে বেগ পেতে হত না।

এখন প্রশ্ন, কাজের তুলনায় বেশি বিল পঞ্চায়েত অফিসে দেওয়ার সাহস পেলেন কী করে ওই ঠিকাদার? সদুত্তর এড়িয়ে পঞ্চায়েত প্রধান নীভা সেনাপতি বলেন, “আমরা এই কারণে বেশ কয়েক মাস নিতাই ঘোষকে কোনও কাজ দিইনি। ওর পঞ্চায়েতে যাতায়াতও অনেক কমে গিয়েছিল। আচমকা মারধরের ঘটনা আমরা প্রশাসনে জানিয়েছি।”

দাসপুর ১ পঞ্চয়েত সমিতির-সহ সভাপতি জয়দেব সেনাপতির বৌমাই পঞ্চায়েতের প্রধান। দলের ব্লক স্তরের এক নেতা জানান, নিতাই ঘোষের বাইকে চেপেই জয়দেব অধিকাংশ সময়ে যাতায়াত করতেন। বৌমা প্রধান হওয়ায় প্রায়ই ওই পঞ্চায়েত অফিসেও যেতেন জয়দেব। সেই পরিচয়ের জোরে নিতাই অবাধে পঞ্চায়েতে ঢোকা-সহ পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও থাকতেন। যদিও সহ সভাপতি বলেন, তাঁর সঙ্গে সাধারণ কর্মীর মতোই যোগাযোগ ছিল নিতাইয়ের।

তবে, তৃণমূলের ওই ব্লক সভাপতি সুকুমার পাত্রের স্পষ্ট কথা, “নিতাই দলের বদনাম করেছে। ওর বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, দলের কোন নেতার মদতে নিতাই এমন কাণ্ড করল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ghatal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE