Advertisement
E-Paper

পুস্তিকার পাল্টা তৃণমূলের প্রমীলা বাহিনী

‘নমস্কার মাসিমা, একটু গল্প করতে এলাম। আপনার সময় হবে তো? বৌমারা বাড়িতে আছেন নিশ্চয়, ওদেরও ডেকে দিন।’ চৈত্রের বিকেলে দরজা খুলে জনা আষ্টেক মহিলার এমন আবদারে কিছুটা থমকে গেলেন ঝাড়গ্রাম শহরের প্রৌঢ়া-গৃহকর্ত্রী আলপনা পাল। ততক্ষণে প্রমীলা বাহিনী সেঁধিয়ে গিয়েছেন আলপনাদেবীর হেঁসেলে। তাঁকে থামিয়ে দিয়ে আগন্তুক মহিলারা নিজেরাই হাত লাগান বৈকালিক চায়ের আয়োজনে। পরিবারের সদস্যদের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে মহিলারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলতে শুরু করেন, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। পরিবারের ভোটটা কিন্তু আমাদের প্রার্থী উমা সরেনকেই দেবেন। সিপিএমের অপপ্রচারে একবারে কান দেবেন না।”

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৪
হেঁসেলে প্রচার। ঝাড়গ্রামে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

হেঁসেলে প্রচার। ঝাড়গ্রামে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

‘নমস্কার মাসিমা, একটু গল্প করতে এলাম। আপনার সময় হবে তো? বৌমারা বাড়িতে আছেন নিশ্চয়, ওদেরও ডেকে দিন।’

চৈত্রের বিকেলে দরজা খুলে জনা আষ্টেক মহিলার এমন আবদারে কিছুটা থমকে গেলেন ঝাড়গ্রাম শহরের প্রৌঢ়া-গৃহকর্ত্রী আলপনা পাল। ততক্ষণে প্রমীলা বাহিনী সেঁধিয়ে গিয়েছেন আলপনাদেবীর হেঁসেলে। তাঁকে থামিয়ে দিয়ে আগন্তুক মহিলারা নিজেরাই হাত লাগান বৈকালিক চায়ের আয়োজনে। পরিবারের সদস্যদের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে মহিলারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলতে শুরু করেন, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। পরিবারের ভোটটা কিন্তু আমাদের প্রার্থী উমা সরেনকেই দেবেন। সিপিএমের অপপ্রচারে একবারে কান দেবেন না।”

জঙ্গলমহলে মমতা-সরকারের উন্নয়নকে ভাঁওতাবাজি বলে ইতিমধ্যেই প্রচারে নেমেছে সিপিএম। তার পাল্টা হিসেবে তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের সদস্যরা হানা দিচ্ছেন ভোটারদের হেঁসেলে কিংবা বৈঠকখানায়। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে জঙ্গলমহলের প্রতিটি ব্লকে মহিলা তৃণমূলের নেত্রী-সদস্যারা বাড়ি বড়ি গিয়ে গল্পের ছলে এমনই প্রচার চালাচ্ছেন। ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ঝাড়গ্রামের প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে প্রচারপত্রও দিয়ে আসা হচ্ছে। মূলত ৫-৭ জন মহিলাদের দল ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছেন। তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভানেত্রী উত্তরা সিংহের দাবি, “জঙ্গলমহলে সিপিএমের পায়ের তলায় মাটি নেই বলেই ওরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে। আমাদের সংগঠনের সদস্যরা জঙ্গলমহলের ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তাই কয়েক’টা কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।”

কী বলছেন তৃণমূলের প্রমীলা বাহিনী? আল্পনাদেবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন মহিলা তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম শহর সভানেত্রী নমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জঙ্গলমহলে দু’শো দিন দোকান-বাজার বন্ধ ছিল। রাস্তা কেটে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে দেড়শো দিনেরও বেশি অবরোধ-আন্দোলন চলেছিল। ওই তিনটি বছরে সিপিএমের হার্মাদ ও তাদের তৈরি উগ্রবাদীদের হাতে ৩২৬ জন খুন হন। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৭৩ জন। আর আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বন্ধ-অবরোধ-সন্ত্রাসের অভিশপ্ত দিনগুলি মুছে গিয়ে শান্তি ফিরেছে।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, জঙ্গলমহলে উন্নয়ন হয়নি বলে সিপিএমের প্রচারের ধারকে ভোঁতা করে দিতে মহিলা তৃণমূলের নেত্রী-সদস্যাদের মাঠে নামানো হয়েছে। মূলত বুথ ভিত্তিক মহিলা-ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তৃণমূলের প্রমীলা বাহিনী। পরিসংখ্যান দিয়ে জঙ্গলমহলের অশান্তিপর্বের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা টেনে নমিতাদেবীরা বলছেন, “এলাকায় শান্তি থাকলে তবেই তো উন্নয়নে গতি আসবে। তৃণমূল থাকলে উন্নয়ন। সিপিএম-কে আনলে ফের কালো দিন।” প্রচারে কাজ হচ্ছে বলে মানছেন বেলপাহাড়ি ব্লক মহিলা তৃণমূলের নেত্রী অনুশ্রী কর। ২০০৯ সালের অক্টোবরে বেলপাহাড়ির বামুনডিহা গ্রামে বাড়ির সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন অনুশ্রীদেবীর স্বামী তৃণমূল নেতা জলদবরণ কর ও দেওর তৃণমূল কর্মী আশিস কর। অনুশ্রীদেবী বলেন, “জঙ্গলমহলের অশান্তিপর্বে আমার মতো অনেকেই স্বজনহারা হয়েছেন। এক সময়ের রক্তাক্ত জঙ্গলমহল এখন শান্তি ও উন্নয়নের ভূমিক্ষেত্র। ভোটারদের কাছে অভিজ্ঞতা বিনিময় করছি। এতে ভাল কাজ হচ্ছে। বাম জমানায় ইচ্ছাকৃত ভাবে অশান্তিকে জিইয়ে রাখা হয়েছিল, সেটা ভোটাররা এখন বুঝতে পারছেন।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, “বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তৃণমূল-মাওবাদী জোট জঙ্গলমহলে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। এক সময় যাঁরা মাওবাদী ছিলেন, তাঁরাই এখন তৃণমূলের নেতা।” তাঁর কটাক্ষ, জঙ্গলমহলের সর্বত্রই এখন শ্মশানের শান্তি রয়েছে!

kingshuk gupta jhargram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy