Advertisement
E-Paper

পনেরো দিনেই কাজে বহালের নির্দেশ, বিতর্ক

তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সরকারি নির্দেশেই চাকরি খোয়াতে হয়েছিল সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের ২৯ জন চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া কর্মীকে। ঠিক পনেরো দিনের মাথায় ঢোঁক গিলতে হল সরকারকে। নির্দেশ প্রত্যাহার করে ফের তাঁদের কাজে বহালের নির্দেশ এল। তা-ও আবার বেশি দিনের জন্য নয়। মে মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ আর সাড়ে তিন মাস চাকরি করতে পারবেন তাঁরা! এমনই ঘটনা ঘটল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১০

তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সরকারি নির্দেশেই চাকরি খোয়াতে হয়েছিল সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের ২৯ জন চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া কর্মীকে। ঠিক পনেরো দিনের মাথায় ঢোঁক গিলতে হল সরকারকে। নির্দেশ প্রত্যাহার করে ফের তাঁদের কাজে বহালের নির্দেশ এল। তা-ও আবার বেশি দিনের জন্য নয়। মে মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ আর সাড়ে তিন মাস চাকরি করতে পারবেন তাঁরা! এমনই ঘটনা ঘটল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।

পশ্চিম মেদিনীপুরে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পে কয়েক’শো কর্মীর মতোই গ্রুপ ডি ও সি পদে চাকরি করতেন ২৯ জন। চুক্তির ভিত্তিতেই তাঁদের নিয়োগ করা হয়। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সরকারি এক নির্দেশিকায় তাঁদের চাকরি খোয়াতে হয়। জেলা প্রশাসন তখন যুক্তি দেখায়, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, সর্বশিক্ষা প্রকল্পের আওতাধীন কিছু কর্মী যেমন ৬০ বছর চাকরি করতে পারবেন, তেমনি আবার বেশ কিছু কর্মী রয়েছেন যাঁদের চাকরির মেয়াদ ১-৩ বছর হবে। তার বেশি রাখা যাবে না। অভিযোগ, এই যুক্তিতেই প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন চক্রে কর্মরত ২৯ জনকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

ঠিক তার পনেরো দিনের মাথায় অর্থাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারি স্কুল শিক্ষা বিভাগের সচিব অর্ণব রায় এক নির্দেশিকায় ৩১ মে পর্যন্ত তাঁদের চাকরিতে বহাল রাখার নির্দেশ দেন। যে নির্দেশ পাওয়ার পরেই জেলা প্রশাসন তাঁদের কাজে পুণর্বহালেরও নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশিকায় পুণর্নিয়োগ (রি-এনগেজড) কথাটির উল্লেখ থাকায় বেজায় চটেছেন ওই কর্মীরা। তাঁদের দাবি, পুণর্নিয়োগ শব্দটি রাখা চলবে না। যেহেতু স্কুল শিক্ষা দফতরের সচিব তাঁর নির্দেশে ৩১ মে পর্যন্ত চাকরিতে বহাল রাখার (মে বি কন্টিনিউড) কথা জানিয়েছে, তাই জেলা প্রশাসনের নির্দেশেও পুনর্বহালের উল্লেখ করা যাবে না। ওই শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন করে চাকরিতে বহাল রাখার নির্দেশ দিতে হবে।

মঙ্গলবার লিখিত ভাবে জেলাশাসকের কাছে সেই দাবিও জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন। সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক সুব্রত সরকার বলেন, “শিক্ষাভবন থেকে নির্দেশ আসছে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত কাজে বহাল রাখতে হবে। কিন্তু জেলা প্রশাসন পুণর্বহাল করার নির্দেশ দিয়ে নতুন শর্ত আরোপের চেষ্টা চালাচ্ছে। তা মেনে নেব না। প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তুলব।” এ ব্যাপারে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সুদীপ্ত দেবনাথের সংক্ষিপ্ত জবাব, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরবর্তীকালে যেমন নির্দেশ আসবে তেমনি করব।”

এই ঘটনায় সকলেই হতবাক। প্রশ্ন উঠেছে, কেনই বা ওদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হল? আবার বাদ দেওয়ার পনেরো দিনের মধ্যেই কেন চাকরিতে বহাল রাখার নির্দেশই বা এল? যদি ওদের কাজে বহাল রাখার দরকার ছিল তা হলে তখনই কেন রাজ্য থেকে ওই নির্দেশ দেওয়া হল না। কারণ, চাকরি থেকে বাতিলের আগে এ বিষয়ে রাজ্যের কাছ থেকে ব্যাখ্যাও চেয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময় শিক্ষা দফতর নীরব থেকেছে। সেই নীরবতা মেনে জেলা প্রশাসন যদি ওদের চাকরিতে বহাল রাখত তাহলে পরে জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের ঘাড়ে কোপ পড়ত।

আবার এখন যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, সেখানেও পুণর্বহাল ছাড়া অন্য কথা লেখা যাবে না। সেক্ষেত্রে ৩ বছরের অধিক কাল কাজ করার নথি নিয়ে তাঁরা আদালতে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের চাকরি থেকে আর বাদ দেওয়া যাবে না। তাছাড়াও একটানা চাকরি করছে, এটা দেখানোর উপায়ও নেই। কারণ, চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অফিসে সইও করতে দেওয়া হয়নি। এই সব নানা বিষয়ে চূড়ান্ত জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বাদ দেওয়া ও পুনরায় নিয়োগের নির্দেশকে ঘিরে।

কিন্তু হঠাৎ এটা করতেই হল কেন? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই এমনটা করতে হয়েছে। কারণ, এই ২৯ জন বড় কথা নয়। চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই ফের আরও প্রায় সাড়ে ৪০০ জন অলচিকি পার্শ্বশিক্ষকের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, তাঁদেরও চাকরি থেকে বাদ দিতে হবে। অলচিকি পার্শ্বশিক্ষক আবার জঙ্গলমহলের তিনটি জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতে রয়েছে। জঙ্গলমহলের যুবকদের চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হলে তা অতি সংবেদনশীল হবে। বড় ধরনের আন্দোলনের আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে সারদা কেলেঙ্কারিতে জেরবার তৃণমূল। বিজেপি-র উত্থান, দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও শাসক দলকে চিন্তায় রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে চাকরি খোয়ালে আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে। জেলার রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা তাই মনে করছেন, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই এঁদের আপাতত কিছু দিন চাকরিতে বহাল রেখে নতুন পথ খোঁজার চেষ্টার পাশাপাশি এঁদের পুনরায় বহাল করে আদালতে যাওয়ার পথও সুগম করতে চাইছে রাজ্য সরকার।

এ ব্যাপারে বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আমরাও চাই না কোনও বেকারের চাকরি যাক। কিন্তু বেকারদের নিয়ে এ ভাবে ছিনিমিনি খেলে নিজেদের নীতিহীনতা আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে। কোনও ক্ষেত্রেই ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। পিঠ বাঁচাতে যা তা করে চলেছে। বুঝতেই পারছি না, সরকারি নির্দেশিকা এমন কী ভাবে হতে পারে।”

suman ghosh medinipur education for all
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy