ধসে গিয়েছে দোকান। —নিজস্ব চিত্র।
ফাটলটা দেখা গিয়েছিল বেশ কয়েক দিন আগেই। গত বুধবার কোলাঘাট শহরের নতুন বাজারের কাছে রূপনারায়ণ নদী বাঁধের সেই ফাটল পরিদর্শনে এসেছিল জেলা সেচ দফতরের আধিকারিকদের একটি প্রতিনিধি দল। কিন্তু ফাটল মেরামতির কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। আর তার ফলে রবিবার সকালে সেই ফাটল বেড়ে নদীর স্রোতে ধসে গেল ওই এলাকার একাধিক দোকান, ক্লাব মিলিয়ে প্রায় ১৫ টি নির্মাণ। রবিবার সকালে নদীবাঁধের পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান কোলাঘাটের বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী। তিনি জানান, এ বিষয়ে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছে। আর সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী আধিকারিক কল্পরূপ পাল বলেন, “কোলাঘাটের কাছে নদীবাঁধের প্রায় ৫০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে মেরামতির কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী এক-দুদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।”
সেচ দফতর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, কোলাঘাট শহরের নতুন বাজারের কাছে রূপনারায়ণের বাঁধের পূর্ব দিকের অংশ বেআইনিভাবে দখল করে বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠেছিল। এইসব নির্মাণের জন্য নদীবাঁধের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর নদীর উল্টো দিকে হাওড়া জেলার দিকের অংশে নদীতে বিশাল চর পড়ার ফলে নদীর মূল স্রোত এখন কোলাঘাট শহর ঘেঁষে বইছে। ফলে শহরের কাছে নদীর গভীরতা অনেক বেশী। আর ভরা কোটালের সময় ও বর্ষাকালে নদীর স্রোত এসে কোলাঘাট নতুন বাজারের কাছে নদীবাঁধে ধাক্কা মারে। তার ফলেই নদীর ওই অংশ এরকম বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। জানা গিয়েছে, কোলাঘাট শহরের পুরাতন বাজারের কাছে পীরতলা ও নতুন বাজারের গৌরাঙ্গ ঘাটের কাছে কয়েক বছর আগে রূপনারায়ণ নদীবাঁধে ধস নেমে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দুই জায়গাতেই নদীবাঁধের উপরে থাকা একাধিক দোকান ঘর নদীতে তলিয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেই সময় সেচ দফতর প্রথমে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে বাঁধ মেরামতি করেছিল। পরে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার জন্য স্পার ফেলে ও বোল্ডার দিয়ে স্থায়ীভাবে নদীবাঁধ মেরামতির ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু এ বার স্কুল মোড়ের সামনে ফের নদীবাঁধের পূর্ব দিকের কয়েক ফুট চওড়া হয়ে প্রায় ১৫০ ফুটের বেশি অংশে ফাটল দেখা দিতে শুরু করে। রবিবার সকালে নদীবাঁধের ওই অংশে থাকা দোকান ভেঙে নদীতে ধসে যায়। এ দিন ধসের জেরে নদীতে চলে গিয়েছে বাঁধের পূর্ব দিকে থাকা তরুণ কাউরির বই দোকান। তরুণবাবুর কথায়, “বুধবার থেকেই ফাটল বাড়ছিল। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে বই সরিয়ে রাখছিলাম। আজ তো দোকানটাই ধসে গেল।” ২০বছরের বেশি সময় এখানে দোকান চালাচ্ছেন স্বপনবাবু। তিনি বলেন, “আগেরবার দোকানটা বেঁচে গিয়েছিল। এ বার আর শেষ রক্ষা হল না।” তাঁদের দাবি, বারবার পরিদর্শনে না এসে নদীবাঁধ রক্ষার জন্য ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতি আরও বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy