Advertisement
E-Paper

ফল প্রকাশের পরও চলছে হিংসা

লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর ফের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মীদের মারধর, দলীয় অফিস ভাঙচুর, বাড়ি ভাঙচুর থেকে দলীয় অফিস দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের অভিযোগ, ঘাটালের অমরপুরে সিপিএমের লোকাল কমিটির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, ঘাটাল শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় অফিসে লুঠপাট-সহ একাধিক দলীয় অফিসে আক্রমণ চালানো হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০১:৩২
কেশিয়াড়িতে বাড়ি ভাঙচুরের পর পুলিশের পাহারা।

কেশিয়াড়িতে বাড়ি ভাঙচুরের পর পুলিশের পাহারা।

লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর ফের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মীদের মারধর, দলীয় অফিস ভাঙচুর, বাড়ি ভাঙচুর থেকে দলীয় অফিস দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

সিপিএমের অভিযোগ, ঘাটালের অমরপুরে সিপিএমের লোকাল কমিটির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, ঘাটাল শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় অফিসে লুঠপাট-সহ একাধিক দলীয় অফিসে আক্রমণ চালানো হয়। তৃণমূলের লোকেরা কোমরা, দেওয়ানচক, কুঠিঘাট, সুলতানপুর, খড়ার-সহ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় এখনও পর্যন্ত সিপিএমের ১২টি দলীয় অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে। এছাড়াও দাসপুরের সিপিএমের হরিরাজপুর শাখা অফিস দখল, নন্দনপুর লোকাল কমিটির অফিসে ভাঙচুর, রাজনগর, মামুদপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “ভোট লুঠ ও কিছু এলাকায় মানুষের রায়ের ফলে তৃণমূল অনেক আসন পেয়েছে। এখন এই রায়কে তৃণমূল অপব্যবহার করছে।”

কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “জেলার ঘাটাল, দাসপুর, কেশপুর, পিংলা-সহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে। ঘাটালে দলীয় অফিস ভাঙচুর-সহ দলের কর্মীদের হুমকি দেওয়াও শুরু হয়েছে। এবার মানুষ বুঝতে পারছেন, এই রায় ভোট লুঠের, মানুষের রায় নয়।” অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “আমরা ফল বেরনোর পরই প্রতি এলাকার নেতৃত্বকে শান্তি বজায় রাখতে কড়া নজরদারি চালাতে নির্দেশ দিয়েছি। জেলায় কোনও গণ্ডগোল হয়নি। ছোটখাটো যা ঘটনা ঘটছে, তা মানুষের ক্ষোভের ফল। তার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।”

ভাঙচুর হওয়া বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

সিপিএমের চন্দ্রকোনার ছত্রগঞ্জ কার্যালয়, চন্দ্রকোনা লোকাল কমিটির অফিস দখল, কুঁয়াপুর, পলাশচাবড়ি, কল্লা, খলকপুর শাখা আফিস-সহ একাধিক দলীয় অফিসে ভাঙচুর, দলীয় কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। ঘটনায় আহত ১০ জন দলীয় কর্মীকে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জেলা পুলিশ সুপার শিসরাম ঝাঝোরিয়া বলেন, “কিছু এলাকায় অশান্তির খবর পেয়েছি। আমরা ব্যবস্থাও নিচ্ছি।”

অন্য দিকে, শনিবার রাতে সিপিএমের দুর্গাচক লোকাল কমিটির কার্যালয়ে লুঠপাট চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সিপিএমের ওই লোকাল কমিটির সম্পাদক কমল মাইতির অভিযোগ, এ দিন রাত ১১টা নাগাদ তৃণমূলের লোকেরা ওই কার্যালয়ের পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে উঠে কার্যালয়ের চিলেকোঠার দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। কার্যালয়ের ভিতরে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি টেলিভিশন, পাখা, ইনভার্টার-সহ অনেক জিনিস লুঠ করা হয়। এমনকী অনেক দলীয় নথিপত্র লুঠেরও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের হলদিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুদর্শন মান্না বলেন, “ঘটনার শুরুতে বারবার থানার ওসিকে ফোন করা সত্ত্বেও তিনি ফোন তোলেননি।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) অমিতাভ মাইতি বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তৃণমূলের হলদিয়া শহর সভাপতি সাধন জানা বলেন, “রাতের অন্ধকারে কেউ ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। দল এর সঙ্গে যুক্ত নয়। সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে।”

শনিবার সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগদানের ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় খড়্গপুর গ্রামীণ ও পিংলা থানা এলাকায়। এ দিন রাতে খড়্গপুর গ্রামীণের কয়েকজন সিপিএম ও সিপিআই কর্মী সাদাতপুরের কাছে ধুলিয়াপাতায় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল। ওই ঘটনায় সিপিএমের লোকজন কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করলে দলবদলে ইচ্ছুক কর্মীদের সঙ্গে সিপিএম কর্মীদের বচসা বাধে। এর পরে ওই গণ্ডগোলে তৃণমূলের লোকেরাও জড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। পরে তৃণমূূলের লোকেরা সিপিএমের সাদাতপুরের শাখা অফিস ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শক্তি মণ্ডলের দাবি, “এ দিন রাতে বিজেপির সঙ্গে সিপিএম বৈঠক করছিল। গ্রামের মধ্যেই ওই গোপন বৈঠক দেখে আমাদের কর্মীরা জানতে গিয়েছিল। ওরা আমাদের কর্মীদের মেরেছে। আর নিজেরাই পার্টি অফিস ভেঙেছে।” সিপিএম জোনাল সম্পাদক কমল পলমল বলেন, “কর্মীদের কয়েকজন অন্য দলে যেতে চেয়েছিল। পরে তাঁরা ঠিক করেছে আর যাবে না। তৃণমূলের লোকেরা আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে।”

পিংলার দুজিপুরে সিপিএমের একটি শাখা অফিসে সিপিএমের পতাকা খুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রেও একইভাবে কয়েকজন সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করে ওই দলীয় কার্যালয়ে প্রথমে বিজেপির পতাকা লাগিয়ে দেয়। পরে তৃণমূল কর্মীরা এসে বিজেপির ওই পতাকা খুলে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও সিপিএমের পিংলা জোনাল সম্পাদক নয়ন দত্ত বলেন, “আমাদের কোনও কর্মী বিজেপিতে যায়নি আর যাবেও না। তৃণমূলের লোকেরা আমাদের দলীয় কার্যালয়ে পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে।” তবে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গৌতম জানার দাবি, “কোনও দলের কোনও পতাকাই সিপিএমের ওই কার্যালয়ে লাগানো হয়নি-এসব গুজব।” যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “খড়্গপুর গ্রামীণ ও পিংলার কয়েকজন সিপিএম ছেড়ে আমাদের দলে আসতে চেয়েছে। আমরা তাঁদের ২১ মে জেলা অফিসে আসতে বলেছি।”

অন্য দিকে, শনিবার কেশিয়াড়ির বাঘাস্তি পঞ্চায়েতের কালামেটিয়া গ্রামে সিপিএম নেত্রী গৌরি মুর্মু ও গুরবারী মুর্মু আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁরা ফিরে যাওয়ার সময় তৃণমূল সমর্থক ইন্দ্র টুডু ও তাঁর স্ত্রী ধানি টুডু তাঁদের উপর আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। উভয় পক্ষই পুলিশে ঘটনাটি জানায়। পরে এ দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের লোকেরা ওই গ্রামের আট জন দলীয় কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। সিপিএম বিধায়ক বিরাম মাণ্ডি বলেন, “তৃণমূলের লোকেরা আমাদের কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর করেছে। তাঁদের থানায় আসতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশও সহযোগিতা করছে না।” যদিও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জগদীশ দাস বলেন, “সব মিথ্যে অভিযোগ। কোনও বাড়ি ভাঙচুর হয়নি।” পুলিশ জানিয়েছে, কালামেটিয়া গ্রামের মহিলাদের মধ্যে একটা গণ্ডগোল থেকে অজয় দে নামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়ির গাছপালার সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে ঘটনার কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি।

cpm tm political clash clash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy