বেসরকারি বিএড কলেজগুলিতে ভর্তির ‘ফি’ নির্ধারণ করে দিল রাজ্য সরকার। যদিও এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ বিভিন্ন বিএডকলেজ কর্তৃপক্ষ।
বেসরকারি বিএড কলেজের ভর্তির ‘ফি’ নিয়ে প্রতি বছরই কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবাদ চরমে ওঠে। অভিযোগ উঠত, বিশ্ববিদ্যালয় ‘ফি’ নির্ধারণ করার পরেও কলেজগুলি বেশি ফি নিচ্ছে। এবার তাতে ইতি টানতে সরকারি ভাবে ফি নির্ধারণ করা হলেও বেসরকারি কলেজগুলি তা মানতে রাজি নয়। ছাত্র পিছু কলেজগুলি বড় জোর ৫০ হাজার টাকা ‘ফি’ নিতে পারবে জানিয়েছে সরকার। কিন্তু বেসরকারি কলেজগুলির দাবি, তার সঙ্গে ১০ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট কোটা দিতে হবে। সেই কোটায় নিজেদের খুশি মতো ‘ফি’ নিয়ে ছাত্র ভর্তি করবে কলেজগুলি। তা না দিলে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজগুলি এবারও কাউন্সেলিংয়ে যাবে না বলেই জানিয়ে দিল। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকেই বিএডে ভর্তির কাউন্সেলিংয়ের দিন ঠিক করা ছিল। বেসরকারি কলেজগুলি সিদ্ধান্ত না মানায় বিএডে ভর্তি নিয়ে সমস্যা দেখা দিল।
ওয়েস্ট বেঙ্গল আনএডেড বিএড কলেজেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অরুনাভ মণ্ডল বলেন, “আমরা ছাত্র পিছু ৬১ হাজার ৪৫০ টাকা ফি-র জন্য দাবি জানিয়েছি। তার সঙ্গে দশ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট কোটাও চেয়েছি। তার পরিবর্তে শুধু ৫০ হাজার টাকা ফি বৃদ্ধি করা হলে পড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। যতদিন যাচ্ছে শিক্ষকদের খরচ বাড়ছে, পরীক্ষাগার চালানোর খরচ বাড়ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফি বৃদ্ধি করা না হলে চালাব কী করে।” সংগঠনের মুখপাত্র আরণ্যক আচার্য বলেন, “ম্যানেজমেন্ট কোটার দাবি না মানা হলে আমরা কাউন্সেলিংয়ে যাব না।” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় নেই। সরকারি নির্দেশের কথা আমরা কলেজগুলিকে জানিয়ে দেব।” বেসরকারি কলেজগুলি অবশ্য তাঁদের কাউন্সেলিংয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় বলে জানিয়ে দিয়েছে।
প্রতি বছরই কলেজ কর্তৃপক্ষ ফি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের ডেকে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই কাউন্সেলিংও বয়কট করেছে বেসরকারি কলেজগুলি। কলেজের অনুমোদন বাতিল করার হুমকি দিয়ে শেষ পর্যন্ত কাউন্সেলিংয়ে যোগ দিতে বাধ্য করানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে উল্টো ফল হত। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রপিছু ৪৩ হাজার টাকা ‘ফি’ নির্ধারণ করলেও কলেজগুলি ছাত্রছাত্রীদের থেকে ৬১ হাজার টাকার কম ‘ফি’ নিত না। ছাত্রছাত্রীরাও নিরুপায় হয়ে বেশি ‘ফি’ দিয়েই কলেজে ভর্তি হতেন। এই সব সমস্যা দূর করতে রাজ্য জুড়ে একটি নির্দিষ্ট ‘ফি’ নীতি চালুরও দাবি উঠেছিল। যদিও এতদিন রাজ্য সরকার তা করেনি। চলতি বছর থেকে ‘ফি’ নির্ধারণ করা হলেও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলিতে সমস্যা মিটল না।
বেসরকারি কলেজগুলি ছাত্র ভর্তি না করলে সমস্যা বাড়বে। কারণ, জেলায় ২৩টি বিএড কলেজের মধ্যে ১৭টিই বেসরকারি কলেজ। ফলে সিংহভাগ ছাত্রছাত্রীকে বেসরকারি কলেজের উপর নির্ভর করেই পড়াশোনা চালাতে হয়। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন পথে হাঁটবেন। এখনই অবশ্য এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের কথায়, “দেখা যাক, বেসরকারি কলেজগুলি কি করে। তা দেখার পরেই বিষয়টি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের বক্তব্য, বিএড কলেজগুলির ‘ফি’ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্য রাজ্যের কলেজগুলির ‘ফি’-এর কাঠামো এবং রাজ্যের পরিকাঠামো বিবেচনা করে দেখা হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত ‘ফি’-এর থেকে বেশি ‘ফি’ লাগার প্রশ্নই ওঠে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy