জঙ্গলমহলে বিজেপি-র সভা ও মিছিলে বেআইনি ভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জমায়েত করার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলিয়াবেড়ায় ওই সভার পরেই ৩৩ জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। তার ভিত্তিতে রবিবার নকুল বেরা, বাপি দাস, বিদ্যুৎ করণ ও ব্রজেন সিংহ নামে চার বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা ছিলেন ওই সভা-মিছিলের উদ্যোক্তা। প্রথম দু’জনের বাড়ি বেলিয়াবেড়ার যুগডিহা গ্রামে। বিদ্যুৎ ও ব্রজেন কেন্দুয়ানা গ্রামের বাসিন্দা।
ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, “বিনা অনুমতিতে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেআইনি ভাবে ওই দিন সভা ও পদযাত্রা করা হয়েছিল। মিছিলে মুখঢাকা বহিরাগত লোকজনও ছিল। ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদীদের লোকজন মিছিলে ছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পেরেছি। জঙ্গলমহলকে অশান্ত করার উদ্দেশ্যে কারা এ সব করছে, খতিয়ে দেখছি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়েরও দাবি, “সে দিন বিজেপি-র সভায় বাইরে থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লোকজন এসেছিল।”
বিজেপি-র অবশ্য বক্তব্য, ওই জমায়েতে অধিকাংশ ছিলেন আদিবাসী মানুষজন। চিরাচরিত প্রথা মেনে তাঁরা অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “অস্ত্র হল জঙ্গলমহলের আদিবাসীদের ঐতিহ্যের প্রতীক। যে কোনও জমায়েতে তাঁরা অস্ত্র নিয়ে যান। এমনকী তৃণমূলের বহু সভাতেও অস্ত্র হাতে জড়ো হয়েছেন জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীরা। আমরা বিরোধী দল বলে এখন মামলা, গ্রেফতার এ সব হচ্ছে!” বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সহ-সভাপতি শুভাশিস পালের দাবি, সে দিন সভা-মিছিল করার কথা লিখিত ভাবে পুলিশ-প্রশাসনকে তাঁরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু, শাসকদলের চাপে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
জঙ্গলমহলে মাওবাদী এবং জনগণের কমিটির সক্রিয়তা পর্বেও এই সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বহু বার সভা ও মিছিলে সামিল হয়েছেন জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীরা। সেই সময়ও বেআইনি ভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জমায়েতের একাধিক মামলা করেছে পুলিশ। সেই ধরনের মামলায় নাম জড়িয়েছে জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতো-সহ অনেকের। শুক্রবার বেলিয়াবেড়া থানার বাহারুনা গ্রামে আদিবাসী-মূলবাসীদের নিয়ে বড় সভা করে বিজেপি। দলের ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটি আয়োজিত ওই সভায় দলের বিজেপি-র সহ-সভাপতি তাপস চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। সভার পরে বাহারুনা থেকে রান্টুয়া পর্যন্ত ‘সন্ত্রাস-বিরোধী’ পদযাত্রা হয়। সেখানে আদিবাসী-মূলবাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়েই সামিল হয়েছিল। কারও হাতে ছিল দা, কারও হাতে তির-ধনুক, কারও হাতে আবার টাঙি। বিজেপি-র কর্মসূচির পরেই বিনা অনুমতিতে সশস্ত্র জমায়েত করার অভিযোগে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশ সুপার ভারতীদেবী বলেন, “মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় যখন-তখন এ ধরনের সভা-মিছিল করা যায় না।”
রাহুলবাবুর অবশ্য দাবি, “পুলিশ তৃণমূলের কর্মসূচিতে অনুমতি দেয়। আমরা বিরোধী বলেই মিছিলে অনুমতি দেয়নি। তা সত্ত্বেও মিছিলে ১৫ হাজার লোক হয়েছিল দেখে ওরা (তৃণমূল) ভয় পেয়েছে!” পুলিশের ‘একপেশে’ আচরণের প্রতিবাদে বুধবার মেদিনীপুরে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাবে বিজেপি। সেখানে রাহুলবাবুও যাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy