Advertisement
E-Paper

ব্যর্থ প্রেম, ওড়নায় হাত বেঁধে বিষে চুমুক দিয়েছিল ছয় বান্ধবী

প্রত্যেকের প্রেমিক ছিল। গ্রামের মেলায় একসঙ্গে ঘুরতেও দেখা গিয়েছিল তাদের। তা নিয়ে গ্রামের লোকের বাঁকা কথা আর বাড়ির লোকের বকাবকির জেরেই জামবনির ওড়ো গ্রামের ছয় কিশোরী এক সঙ্গে কীটনাশক খেয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে দাবি পুলিশের।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৩
বিষ খেয়ে মারা যায় এই পাঁচ বান্ধবী। বেঁচে যায় এক জন।  নিজস্ব চিত্র।

বিষ খেয়ে মারা যায় এই পাঁচ বান্ধবী। বেঁচে যায় এক জন। নিজস্ব চিত্র।

প্রত্যেকের প্রেমিক ছিল। গ্রামের মেলায় একসঙ্গে ঘুরতেও দেখা গিয়েছিল তাদের। তা নিয়ে গ্রামের লোকের বাঁকা কথা আর বাড়ির লোকের বকাবকির জেরেই জামবনির ওড়ো গ্রামের ছয় কিশোরী এক সঙ্গে কীটনাশক খেয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে দাবি পুলিশের।

সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামের কাছেই বড়পুকুর পাড়ে একসঙ্গে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ওই ছ’জন কীটনাশক খায়। রাতেই মারা যায় নমিতা নায়েক (১৭), পালং নায়েক (১৬), সরস্বতী নায়েক (১৫), বুড়ু নায়েক (১৪) ও বেবি নায়েক (১৩)। এক মাত্র প্রাণে বেঁচে গিয়েছে বছর পনেরোর পূজা নায়েক। তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে যা জানার জেনেছে পুলিশ।

প্রেমে বাধা পেয়ে যুগলের আত্মঘাতী হওয়া বিরল নয়। তবে ছয় বান্ধবী এক সঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে, এমন ঘটনা জেলা পুলিশের কেউই মনে করতে পারছেন না। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ছ’জনেরই বয়স অল্প। অভিভাবকেরা ওদের শাসন করেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। তদন্তে বাকি সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশের দাবি, পূজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, তাদের সকলেরই প্রেমিক ছিল। শিবরাত্রির মেলায় তারা দেখাও করেছিল। গ্রামের কিছু লোক তা দেখে বাড়িতে খবর দেয়। তার পর থেকে অশান্তির শুরু। অভিভাবকেরা তাদের বকাবকি করেন। জানিয়ে দেন, এই সব সম্পর্কে তাঁদের সম্মতি নেই।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে পূজা বলে, “ছেলেগুলো আমাদের নিয়ে পালাতে চেয়েছিল। রাজি হইনি।” পুলিশের দাবি, তাদের কারও প্রেমই পরিণতি পাবে না মনে করে ছ’জন নিজেদের শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় বলে পূজা জানিয়েছে।

পুলিশের ধারণা, আগে থেকেই আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিল ছয় বান্ধবী। কয়েক দিন আগে শিবরাত্রির মেলা ভাঙার পরে প্লাস্টিকের বাটি সংগ্রহ করে তারা। সোমবার সন্ধ্যায় সেই বাটিতেই কীটনাশক ঢেলে সকলে মিলে একসঙ্গে চুমুক দেয়। সঙ্গে ছিল মুখরোচক নোনতা। আত্মহত্যার আগে ওড়নার ফাঁস দিয়ে পরস্পরের হাতও বেঁধে নিয়েছিল ছয় বান্ধবী। পূজা অবশ্য বিষের বাটি শেষ না করেই পালিয়ে আসে। তাই সে বেঁচে গিয়েছে। রাতে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে বাকি পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। সোমবার গভীর রাতে পূজাকে পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে।

সরস্বতী ও সোমা নায়েক সম্পর্কে জেঠতুতো-খুড়তুতো বোন, বেবি এবং নমিতা নায়েকও তা-ই। স্কুলে পড়ত শুধু সোমা আর পূজা। ধড়সা দেশবন্ধু আদর্শ বিদ্যামন্দিরের টিচার ইন-চার্জ সুমনকুমার পাল বলেন, “সোমবারও নবম শ্রেণির পূজা আর সোমা স্কুলে এসেছিল। এমনিতে ওরা চুপচাপ। অস্বাভাবিক কিছু বুঝতে পারিনি।”

পাঁচ কন্যাকে হারিয়ে এখন থমথম করছে ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা ওড়ো। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সকলের মুখে একটাই কথা, “কেন ওরা এমন কাজ করল বুঝতে পারছি না।” পালংয়ের মা বেলা নায়েক বলেন, “ওরা ছ’জন সব সময় এক সঙ্গে থাকত। এক সঙ্গে পুকুরে যেত, গরু-ছাগল চরাতেও যেত।” পালং-এর ছোট বোন সুমনার কথায়, “দিদি ও তার বন্ধুরা গল্পগুজবের সময় আমাকে বা অন্যদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিত না।” জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধলও এ দিন গ্রামে গিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “ছ’জনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। সম্পর্কের কোনও গোপন বিষয় প্রকাশ্যে চলে আসাতেও এই ঘটনা ঘটতে পারে।”

গ্রাম সূত্রে জানা যায়, আগামী ৫ মার্চ সরস্বতীর বিয়ের ঠিক হয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। নিমন্ত্রণ করতে সরস্বতীর বাবা ও মা অন্যত্র গিয়েছেন। সরস্বতীর দাদু কর্ণ নায়েক বললেন, “হবু নাতজামাইয়ের সঙ্গে মোবাইলে নাতনির কথাও হত। তবে বান্ধবীদের মায়াও কাটাতে পারছিল না।” বিয়ের দেখাশোনা হচ্ছিল বেবিরও। এ দিন পাত্রপক্ষের মেয়ে দেখতে আসার কথা ছিল। তার আগেই অবশ্য সব শেষ হয়ে যায়। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামে আসে পাঁচ কন্যার দেহ। ওড়ো লাগোয়া কুপন নদীর ধারে এক সঙ্গেই জ্বলে ওঠে পাঁচটি চিতা।

সহ-প্রতিবেদন: সুমন ঘোষ

oro kingshuk gupta suman ghosh namita nayek palang nayek saraswati nayek buru nayek baby nayek puja nayek
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy