Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বৈষ্ণব মতে কালী আরাধনা

শাক্ত নয়, এখানে কালীর আরাধনা হয় বৈষ্ণব মতে। প্রসাদও নিরামিষ। গড়বেতার বগড়িতে বহু বছর এই রীতিতেই মা কালীর আরাধনা হয়ে আসছে। মা কালীর পুজো বৈষ্ণব মতে কেন? রঘুনাথ জিউ মন্দির কমিটির সদস্যরা জানান, বগড়ির পাথরবেড়িয়া গ্রামে আগে পুজো পান রঘুনাথ জিউ অর্থাৎ রাম। তাঁর প্রাধাণ্যের জন্যই কালী এখানে বৈষ্ণবী।

বগড়ির কালী প্রতিমা।— নিজস্ব চিত্র।

বগড়ির কালী প্রতিমা।— নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
গড়বেতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

শাক্ত নয়, এখানে কালীর আরাধনা হয় বৈষ্ণব মতে। প্রসাদও নিরামিষ।

গড়বেতার বগড়িতে বহু বছর এই রীতিতেই মা কালীর আরাধনা হয়ে আসছে। মা কালীর পুজো বৈষ্ণব মতে কেন? রঘুনাথ জিউ মন্দির কমিটির সদস্যরা জানান, বগড়ির পাথরবেড়িয়া গ্রামে আগে পুজো পান রঘুনাথ জিউ অর্থাৎ রাম। তাঁর প্রাধাণ্যের জন্যই কালী এখানে বৈষ্ণবী।

এই পুজো নিয়ে প্রচলিত আছে জনশ্রুতিও। লোকমুখে ফেরে, প্রায় পাঁচশো বছর আগে পাথরবেড়িয়া গ্রামে এক সাধক সাধনা শুরু করেন। তাঁর নাম বাক্বিজয় গোস্বামী। তখন বগড়ি পরগণা ছিল ওড়িশার অধীনে। এই সাধকের নাম শুনে স্বয়ং বগড়ি রাজ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাঁকে সভা পণ্ডিত হিসেবে নিযুক্ত করেন। প্রচুর ধন-সম্পত্তিও দেন। এক সময় বাকবিজয় গোস্বামী রঘুনাথের মন্দির প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। মন্দির তো প্রতিষ্ঠা হবে, কিন্তু বিগ্রহ মিলবে কোথায়? তখন তিনি শিষ্যদের নিয়ে অযোধ্যায় যান রামের বিগ্রহ আনতে। শোনা যায়, বিগ্রহ নিয়ে ফেরার সময়ই ঘটনাটি ঘটে। রামের পিছনে পিছনে নাকি কালীও এসে হাজির হন। শীলাবতী নদীর ধারে, যেখানে রামের মন্দির ছিল তার কিছুটা আগেই একটি দহ রয়েছে নদীর পাশে। সেখানেই কালী থাকবেন বলে সাধককে জানিয়ে দেন। ফলে সেখানেও তৈরি হয় কালীর মন্দির। এখানে কালী প্রতিমারও একটি বিশেষত্ব রয়েছে। মাঝে থাকেন কালী। আর তাঁর একদিকে থাকেন লক্ষ্মী ও অন্য দিকে সরস্বতী। সেবাইত সন্দীপ গোস্বামীর কথায়, “বাক্বিজয় গোস্বামী সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। আর সিদ্ধিলাভ করে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হতে হলে দু’টি জিনিসের প্রয়োজন হয়, শিক্ষা ও সম্পত্তি। সিদ্ধিলাভের পর যে দু’টি অর্জন করেছিলেন বাক্বিজয় গোস্বামী। তাই এখানে কালীর দু’দিকে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর অবস্থান।”

এই পুজোকে ঘিরে বগড়ি-র আশপাশের গ্রামের মানুষের উৎসাহের শেষ নেই। এমনিতেই এখানকার রঘুনাথ জিউ মন্দিরের কথা সকলের মুখে ফেরে। যেখানে নিত্য পুজা হয় তা-ই নয়, নিত্য প্রসাদও পান বহু মানুষ। কালীপুজোতেই তার ব্যতিক্রম হয় না। কালীপুজোর সময় অবশ্য প্রসাদ বিতরণ হয় আরও বেশি। তবে এখানে সবই নিরামিষ। পুজোকে ঘিরে টানা ৫-৬ দিন ধরে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়। কীর্তন, যাত্রাপালা, অর্কেস্ট্রা নানা আয়োজন থাকে। যতদিন অনুষ্ঠান চলে ততদিন কালী প্রতিমাও বিসর্জন দেওয়া হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kali puja suman ghosh garbeta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE