নামেই ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড। কিন্তু বাসই সেখানে ডুমুরের ফুল! প্রশাসনের নির্দেশ সত্ত্বেও নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের দোহাই দিয়ে অধিকাংশ বাস অরণ্যশহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এড়িয়ে যাতায়াত করছে বলে অভিযোগ। এর ফলে, চরম ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের।
রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১ সালের অগস্টে ঝাড়গ্রাম শহরের মেন রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ৫ নম্বর রাজ্য সড়কে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়। এই নির্মাণকাজের জেরে শহরের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত আড়াই বছর ধরে ঘুরপথে যাতায়াত করছে যানবাহন। উড়ালপুলের কাজ শুরু হতেই বেশিরভাগ বাসগুলি কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে ঢোকা বন্ধ করে দেয়। পুরসভা বামেদের দখলে থাকাকালীন সেটেলমেন্ট মোড়ে অস্থায়ী ‘ট্রাফিক রোড গার্ড’ নিয়োগ করে বাসগুলিকে স্ট্যান্ডে পাঠানো হত। কিন্তু বছর খানেক আগে ট্রাফিক রোর্ড গার্ড দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন বাম পুরসভা দাবি করেছিল, রাজ্যের তৃণমূল সরকার বরাদ্দে বঞ্চনা করায় অর্থাভাবে রোড গার্ড নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত নভেম্বরে পুরভোটে অরণ্যশহরে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। প্রায় দু’মাস হল তৃণমূলের ক্ষমতাসীন পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলাররা শপথ নিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও হাল ফেরেনি কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের।
১৯৮২ সালে তত্কালীন বাম পুরসভার তরফে ঝাড়গ্রাম শহরে একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। মধুবনের কাছে জমি বাছাই করে বাসস্ট্যান্ড তৈরি করতে আরও দু’দশক লেগে যায়। ২০০২ সালের মার্চে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধন করেন তত্কালীন পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। শুরু থেকেই শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের দায়িত্বে রয়েছে ঝাড়গ্রাম পুরসভা। উড়ালপুল তৈরির সময় বাসমালিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ঝাড়গ্রাম-গোপীবল্লভপুর-বারিপদা-হাতিবাড়ি-রগড়া এবং ঝাড়গ্রাম-মেদিনীপুর-খড়্গপুর ভায়া লোধাশুলি মুম্বই রোড ও ঝাড়গ্রাম-নয়াগ্রাম রুটের বাসগুলিকে আবশ্যিক ভাবে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে আসতেই হবে। বেলপাহাড়ি-মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া-মেদিনীপুর ভায়া লোধাশুলি রুটের বাসগুলিও কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম শহর ছঁুয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটের ১১৬টি বাস চলে। এর মধ্যে ৬০টি বাস কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার কথা। অথচ মাত্র ৭-৮টি বাস সেখানে ঢোকে। বাসস্ট্যান্ডের কাছেই রয়েছে রাজ কলেজ ও বেশ কিছু সরকারি দফতর। স্ট্যান্ডে বাস না-ঢোকায় দূর থেকে আসা কলেজ পড়ুয়া, সরকারি কর্মী ছাড়াও এলাকার যাত্রীরা চরম সমস্যায় পড়েন। এর ফলে বাসস্ট্যান্ডের হোটেলগুলির ব্যবসাও মার খাচ্ছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, উড়ালপুলের কাজ শুরু হতেই এই প্রবণতা শুরু হয়েছিল। সমস্যা সমাধানে বাম পুরবোর্ড অস্থায়ী পুরকর্মীদের দিয়ে সেটেলমেন্ট মোড় থেকে বাসগুলিকে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে যেতে বাধ্য করে। গত বছর এপ্রিল থেকে বেশিরভাগ বাস আর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে ঢোকে না। পুরবোর্ডে ক্ষমতার পালাবদলের পরও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। উড়ালপুল তৈরির দোহাই দিয়ে বাসগুলি কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে ঢুকছে না। বেলপাহাড়ি ও বিনপুরের দিক থেকে আসা বাসগুলি শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে বলরামডিহির পুর-ময়দানে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডে ঢোকে। এরপর ঘুরপথে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আসার পরে বাসগুলি আর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে চায় না। কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে না-গিয়ে শহরের জনবহুল পাঁচমাথা মোড়ের কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাসগুলি গন্তব্যে চলে যায়। এর ফলে, অন্য বাসগুলিও প্রতিযোগিতার বাজারে যাত্রী ধরার জন্য কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে না-গিয়ে পাঁচ মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে বলে দাবি করেছেন বাসকর্মী ও বাস-মালিকদের একাংশ। তাঁদের আরও দাবি, “কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে বাধ্যতামূলক ভাবে বাস ঢোকার জন্য পুরসভার তরফে সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশিকা নেই।” এই পরিস্থিতিতে সারা দিনই খাঁ-খাঁ করে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডটি।
তৃণমূলের ক্ষমতাসীন পুরবোর্ডের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব অবশ্য বাস-মালিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুরপ্রধান দুর্গেশবাবুর বক্তব্য, “নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের জন্য বাসগুলিকে অনেকটা ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। তাই কেউ কেউ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বাস মালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করব।”