Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বাড়ি থেকেই ছাত্রের দেহ উদ্ধার, ধোঁয়াশা

অন্য দিনের মতো মঙ্গলবারও ভোর বেলায় মাঠে খেলতে গিয়েছিল আকাশ দোলই। কিন্তু খেলা না হওয়ায় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে সে। বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরেই ঘরের ভিতর থেকে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল আকাশের। মৃত্যুর কারণ ঘিরে রয়েছে ধোঁয়াশা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। তবে তার আত্মহত্যার কারণ স্পষ্ট নয়। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা শুরু করে তদন্ত শুরু করেছে।

আকাশ দোলই।—নিজস্ব চিত্র।

আকাশ দোলই।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩৫
Share: Save:

অন্য দিনের মতো মঙ্গলবারও ভোর বেলায় মাঠে খেলতে গিয়েছিল আকাশ দোলই। কিন্তু খেলা না হওয়ায় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে সে। বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরেই ঘরের ভিতর থেকে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল আকাশের। মৃত্যুর কারণ ঘিরে রয়েছে ধোঁয়াশা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। তবে তার আত্মহত্যার কারণ স্পষ্ট নয়। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা শুরু করে তদন্ত শুরু করেছে।

মঙ্গলবার সকালে তমলুক থানার প্রসাদচক গ্রামে ওই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আকাশ দোলই (১৭) স্থানীয় চাঠরা কুঞ্জরানী বাণীভবনের নবম শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক থানার শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বল্লুক-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রসাদচক গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ দোলই পেশায় দিনমজুর। আকাশের মা নির্মলা দোলই বিভিন্ন বাড়িতে ফুল তোলার কাজ করেন। তাঁদের দুই ছেলে। বড় ছেলে বিহারে চটের কাজ করে। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলে আকাশ পড়াশোনায় মেধাবী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলোতেও উৎসাহ ছিল তার। প্রতিদিন ভোরেই সে মাঠে খেলতে যেত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ দিন ভোরে একটু দৌড়ঝাঁপ করার পরেই আকাশ বাড়ি ফিরে যায়। আর তারপরেই বাড়ির ভিতরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এ দিন প্রসাদচক গ্রামে ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাটির দেওয়াল আর টালির চাল দেওয়া দু’কামরার ছোট বাড়িতেই ঠাকুমাকে নিয়ে মোট পাঁচ জন থাকত। ছেলেক হারিয়ে শোকে কাতর নির্মলাদেবী বলেন, “কয়েকদিন আগে আমি ছেলেকে বকাবকি করেছিলাম। আবার ওর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কথাবার্তা হচ্ছিল। গতকাল রকমারি তরকারি রান্না করে দেওয়ার আবদার করেছিল। আমি রান্না করেও দেব বলেছিলাম। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।”

ঠিক কি ঘটেছিল এ দিন সকালে? নির্মলাদেবী জানান, অন্য দিনের মতো এ দিনও ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ আমার ওঠার আগেই আকাশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আমি জানতেও পারিনি, ও কখন বেরিয়ে গিয়েছে। আমি বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ফুল তুলতে গিয়েছিলাম। সকাল ৭টা নাগাদ আমি বাড়ি ফিরে এসে দেখি আকাশ হাতে কিছু একটা নিয়ে পড়ার ঘরের মধ্যে ঢুকল। কয়েক মিনিট পরেই আমি বাড়ির মধ্যে ঢুকে ভেজানো দরজার ফাঁকের মধ্যে দেখতে পাই ঘরের ভিতরে দাঁড়িয়ে আকাশ নড়াচড়া করছে। আমার সন্দেহ হওয়ায় দরজা খুলতেই দেখি কড়ি কাঠ থেকে গলায় নাইলনের দড়ির ফাঁস লাগানো অবস্থায় আকাশ ঝুলে রয়েছে। নির্মলাদেবীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আকাশকে উদ্ধার করে। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। চাঠরা কুঞ্জরানী বাণীভবনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুব্রতকুমার হালদার বলেন, “ও চাপা স্বভাবের ছিল বলে জানি। কেন আত্মহত্যা করল জানি না”

আকাশের বাবা বিশ্বনাথ দোলই বলেন, “পড়াশোনার সাথে খেলাধুলার নেশা ছিল আকাশের। সেজন্য ঠাকুমার কাছে জুতো কেনার টাকার জন্য আবদার করেছিল। ঠাকুমা ওকে গতকাল টাকাও দিয়েছিল।” আকশের প্রতিবেশী তপন মান্না বলেন, “পড়াশোনায় মেধাবী হওয়ায় আকাশকে সবাই খুব ভালবাসত। কষ্ট হলেও বাবা-মা ওর পড়শোনার জন্য সবসময় সাহায্য করত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tamluk akash dolui suicide death of a student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE